আওয়ার ইসলাম: বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে অবৈধ আখ্যায়িত করে আদালতের দেয়া রায়ের পরেও ক্লাসে ফিরতে পারছেন না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. রুশাদ ফরিদী। তবে ক্লাসে ফিরতে না পারলেও সিঁড়িতে ক্লাস নেয়া শুরু করলেন এই শিক্ষক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সিঁড়িতে তিনি এই ক্লাসে শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। আজ রোববার দুপুর ১২টার দিকে শুরু হওয়া ক্লাস শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত চলছে বলে জানা গেছে।
ক্লাসে অংশ নেয়া ফারিহাল নামে এক শিক্ষার্থী জানান, ‘আজকে মাত্র ক্লাস শুরু হয়েছে। ক্লাস ভালো লেগেছে।’ সুমাইয়া আক্তার নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘স্যার অনেক ভালো ক্লাস নিলেন। আজকে প্রথম ক্লাস করলাম। পরিসংখ্যান সম্পর্কে অনেকের ধারণা স্পষ্ট হলো।’
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ছাড়াও অন্য অনুষদ থেকে ছাত্ররা ড. রুশাদ ফরিদীর ক্লাসে অংশ নিয়েছেন। ঢাবি শিক্ষার্থী মইনুল ইসলাম তুহিন ফেসবুকে লেখেন, “ স্ট্যাটিস্টিক্স-র বেসিক শিখাইতেছেন রুশাদ স্যার, খোলা আকাশের তলে। স্ট্যাটিস্টিক্স তো পারি না, বুঝিও না খুব একটা— তবু স্যারের ক্লাশ করলাম। ভাল লাগলো। ক্লাশগুলা কন্টিনিউ হবে মেবি, সময় সুযোগ হইলে ক্লাশে জয়েন করতে পারেন। স্ট্যাটিস্টিক্স শেখা হইল একটু আধটু, স্যারের জন্য কিছু করার মওকাও পাওয়া গেলো। স্যার উনার ক্লাশে ফিরা যাইতে পারুক— এই কামনা থাকলো।”
https://www.facebook.com/permalink.php?story_fbid=2530414037195500&id=100006807845424
ক্লাস নেয়ার বিষয়ে ড. রুশাদ ফরিদী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ক্লাস নেয়ার প্রস্তাব আসলে আমার ছাত্রদের পক্ষ থেকে এসেছে। আমাকে একটা ক্লাস নিতে দেওয়া হচ্ছে না যার কারণে আমাকে সিঁড়িতেই ক্লাস নিতে হলো। শিক্ষার্থীরা যদি চায়, তাহলে এ ধারা অব্যাহত থাকবে।’
এর আগে শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের টাইমলাইনে এক ইভেন্ট পোস্টে সিঁড়িতে ক্লাস নেবেন বলে জানান ড. রুশাদ ফরিদী। সেখানে তিনি লেখেন, ‘ক্লাসে ফিরতে না পারলেও ক্লাসের বাইরে সিঁড়িতে ফিরতে পেরে ভাল লাগছে। উদ্যোগী ছাত্রদের অনেক ধন্যবাদ।’
[caption id="" align="alignnone" width="640"] ‘আমি শিক্ষক, আমাকে ক্লাসে ফিরে যেতে দিন’ প্ল্যাকার্ড হাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুশাদ ফরিদী। ছবি: সংগৃহীত[/caption]
‘এই গল্পটা আগেও বলেছি আবারো বলছি। ফেইসবুকে একটা মিম দেখেছিলাম যেখানে হুডি পরা এক লোক বেশ ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার নাম আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। একজন এসে তার হুডি তুলে দেখে ভেতরে আসলে লেখাঃ স্ট্যাটিস্টিক্স।’
‘এই যে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব যেটা ঘটছে ডেটা সায়েন্স, মেশিন লার্নিং, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ঘিরে, তার মূলে কিন্তু এই পরিসংখ্যান। অথচ এই পরিসংখ্যান আমাদের বেশীরভাগের কাছে বেশ বিরক্তিকর একটা বিষয় হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। আমার চেষ্টা থাকবে একটা ভিন্ন এপ্রোচ নেয়ার। দেখা যাক। সকলে আমন্ত্রিত।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ড. রুশাদ ফরিদি বলেন, ‘প্রতিবাদ স্বরূপ হলেও সিরিয়াস ক্লাস নেওয়া হবে। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি প্রতিবাদ স্বরূপ।’
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ১২ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় ড. রুশাদ ফরিদীকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর এক সপ্তাহ পর ১৯ জুলাই এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রিট করেন তিনি।
চলতি বছরের ২৫ আগস্ট বাধ্যতামূলক ছুটির বিষয়টি অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। তা সত্ত্বেও বিভাগে ফিরতে না পেরে গত চার দিন থেকে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন এই শিক্ষক। এই প্রতিবাদের অংশ হিসেবেই এবার সিঁড়িতে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছেন তিনি।
আরএম/