আওয়ার ইসলাম: তিনি একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিম। তিনি ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বহুদিন ধরে সংস্কৃত পড়িয়ে আসছেন। কিন্তু এবার এক হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে এসে পড়েছেন বিরাট সঙ্কটে। তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করেছে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি বিভাগের কিছু শিক্ষার্থী। বিক্ষোভের কারণে তিনি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারছেন না।
এ নিয়ে স্থানীয় এক সংবাদপত্রে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অধ্যাপক ফিরোজ খান। সেখানে তিনি বলেন, ‘সারা জীবন সংস্কৃত পড়েছি। কখনও মনে হয়নি আমি মুসলিম। কিন্তু এখানে পড়াতে এসেই বিপদে পড়েছি। সব আলোচনাই আমাকে নিয়ে...।’
তিনি ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী হয়ে সংস্কৃত পড়াবেন এটা মেনে নিতে পারছেন না ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের গোড়া হিন্দুরা। ফলে এই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে শুরু করেছে বিক্ষোভ।
মাত্র ১২ দিন আগেই বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএইচইউ) সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দিয়েছেন জয়পুরের রাষ্ট্রীয় সংস্কৃত প্রতিষ্ঠান থেকে ডক্টরেট করা ফিরোজ। কিন্তু তাকে নিয়োগ দেয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু করেছে সংস্কৃতি বিভাগের কিছু শিক্ষার্থী। এ নিয়ে গত মঙ্গলবারই ওই বিভাগের জনা বিশেক শিক্ষার্থী উপচার্যের বাড়ির বাইরে বিক্ষোভ করেছেন। অধ্যাপককে তাড়াতে যজ্ঞের ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে।
এ নিয়ে হতাশ ফিরোজ বলেন, ‘দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে সংস্কৃত পড়তে শুরু করেছিলাম। বাঙ্গালুরুতে আমার বাড়ি। সেখানকার প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ মুসলিম। কোনও মৌলবি কিংবা আমাদের সমাজের কেউ আমার সংস্কৃত পড়ার দিকে নজরও দেননি। সত্যি বলতে কী, কুরআন নিয়ে আমার জ্ঞান যতটা, সংস্কৃত সাহিত্যে তার চাইতে বেশি। সংস্কৃত সাহিত্যে আমার আগ্রহ দেখে এলাকার হিন্দু নেতারা প্রশংসা করতেন।’
কিন্তু বিক্ষোভকারীদের কাছে ফিরোজের এসব গুণ কোনো গুরুত্ব পাচ্ছে না। তাদের কাছে ফিরোজের ধর্মটাই প্রধান। বিক্ষোভের নেতৃত্বে থাকা গবেষক কৃষ্ণ কুমারের মন্তব্য, ‘আমাদের ভাবনা ও সংস্কৃতির সঙ্গে যদি কারও যোগ না থাকে, তিনি আমাদের ধর্মকে বুঝবেন কী ভাবে?’
এই যুক্তি খণ্ডন করে ফিরোজ বলেন, ‘ছাত্ররা ভাবছে আমি মুসলিম হয়েও কী ভাবে হিন্দু ধর্মের কথা পড়াব? আমি বলতে চাই, অভিজ্ঞান শকুন্তলম কিংবা উত্তর রামচরিতমের সঙ্গে ধর্মের কোনও যোগ নেই। আমাকে যদি বেদ, ধর্মশাস্ত্র কিংবা জ্যোতিষ পড়াতে হতো, তা হলে আমি হিন্দু হলেই হয়তো ভালো হত। কিন্তু সংস্কৃত সাহিত্য পড়ানোর সঙ্গে ধর্মের কোনও সম্পর্কই নেই।’
বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্য বিভাগের শিক্ষার্থী ও অধ্যাপকেরা ফিরোজের সমর্থন করছেন। এ নিয়ে ইতিহাসের অধ্যাপক মহেশপ্রসাদ আহিওয়ারে বলেন, ‘যার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর ক্ষমতা রয়েছে তিনিই পড়াবেন। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’
আরএম/