আওয়ার ইসলাম: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হতে হলে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা লাগবে স্নাতক ডিগ্রী। আর বিদ্যোৎসাহী দুই সদস্যের শিক্ষাগত যোগ্যতা অন্তত মাধ্যমিক পাস। এ শর্ত যুক্ত করে প্রাইমারী স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনে নতুন নীতিমালা জারি করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সোমবার (১১ নভেম্বর) মন্ত্রণালয়ের উপসচিব জাহানারা বেগম স্বাক্ষরিত নীতিমালাটি প্রকাশ করা হয়েছে।
এর আগে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটিতে সভাপতি হওয়ার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার কোনো শর্ত ছিল না। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী ১১ সদস্যের ব্যবস্থাপনা কমিটির মেয়াদ হবে ৩ বছর। কমিটির সদস্য সচিব থাকবেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। এছাড়া শিক্ষক প্রতিনিধি থাকবেন একজন। বিদ্যালয়ের জমিদাতা বা তার উত্তরাধিকারীদের মধ্য থেকে সদস্য থাকবেন একজন। উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সিদ্ধান্তে এ সদস্য মনোনীত হবেন।
অভিভাবকদের মধ্য থেকে একজন বিদ্যোৎসাহী নারী এবং একজন পুরুষ সদস্য থাকবেন। এই দুজন সদস্যের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা হতে হবে এসএসসি পাস। এই দুজন সদস্য মনোনীত করার ক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষককে স্থানীয় সংসদ সদস্যের পরামর্শ নিতে হবে।
অভিভাবকদের মধ্য থেকে দুজন পুরুষ ও দুজন নারী অভিভাবক থাকবেন। এই চারজন সদস্য নির্বাচিত করবেন অভিভাবকরা। সহকারী উপজেলা বা সহকারী থানা শিক্ষা অফিসারের নেতৃত্বে নির্বাচন পরিচালনা করতে হবে। একই উপজেলার সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় এলাকার কাছাকাছি যেকোনো সরকারি বা বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বা শিক্ষিকা একজন সদস্য থাকবেন।
এছাড়া সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বা পৌর কিংবা সিটি করপোরেশন এলাকার কাউন্সিলর পদাধিকার বলে সদস্য থাকবেন।
এডহক কমিটির গঠনে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার এডহক কমিটির সভাপতি হবেন। আর বিদ্যালয়ের জমিদাতা ও ওই এলাকার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক সদস্য এবং বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সদস্য-সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন।
দেশের ৬১ জেলার স্কুলের জন্য এই নীতিমালা প্রযোজ্য হলেও পার্বত্য জেলা- রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলার জন্য প্রযোজ্য হবে না। তবে পার্বত্য জেলা পরিষদসমূহ এ নীতিমালার আলোকে সংশ্লিষ্ট জেলার নিজস্ব নীতিমালা প্রণয়ন করতে পারবে এবং প্রণীত নীতিমালা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
স্কুলগুলোতে বিদ্যমান কমিটির বিষয়ে বলা হয়েছে, এ প্রজ্ঞাপন কার্যকর হওয়া সত্ত্বেও ইতোপূর্বে জারিকৃত আদেশের আওতায় গঠিত বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটিসমূহ নির্ধারিত মেয়াদোত্তীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বহাল থাকবে।
কমিটির দায়িত্ব ও কর্তব্য: প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সার্বিক পরিবেশ ব্যবস্থাপনা, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ও শিক্ষকদের দায়িত্ব পালনের উপর প্রতিবছর মে, আগস্ট ও ডিসেম্বর মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে উপজেলা বা থানা শিক্ষা অফিসারের কাছে নির্ধারিত কমিটির সদস্য সচিব প্রতিবেদন পাঠাবেন।
ছাত্র-ছাত্রীদের শারীরিক শাস্তি প্রদান পরিহার নিশ্চিতকরণ; বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি বিদ্যালয় পর্যায়ে ব্যয়িত অর্থের হিসাব অনুমোদন; বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে সত্যনিষ্ঠা ও নৈতিক শিক্ষা প্রদানের বিষয়ে ভূমিকা পালন; কমিটির সকল সদস্য প্রতি মাসের শেষ কর্মদিবসে বা নিকটবর্তী দিবসের পাঠদান কর্মসূচির পরে অন্তত একঘণ্টা ছাত্র-ছাত্রীদের অভিযোগ বা পরামর্শ শুনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
এছাড়াও স্থানীয় পর্যায়ে সম্পদ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ; বিদ্যালয়ভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন; একীভূত শিক্ষা কার্যক্রম; প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা; বিদ্যালয় নির্মাণ, পুনঃনির্মাণ ও সংস্কার কাজ পরিবীক্ষণ; শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ; দুর্যোগকালীন শিক্ষা অব্যাহত রাখা; বিদ্যালয়ের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম পরিচালনা করবে ব্যবস্থাপনা কমিটি।
-এএ