আলী আব্দুল মুনতাকিম ।।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কত মিলিয়ন, বিলিয়ন ও ট্রিলিয়ন কোটি আলোকবর্ষ দূরে আকাশের উপরে আরশে সমাসীন আছেন, যেখানে স্বশরীরে মহানবী মোহাম্মদ সা. সিদরাতুল মুনতাহা হয়ে দেখা করে এসেছেন (ইংগিত-সুরা নজম-১৩ ও১৪ ), সেখানে থেকেও প্রতিটি মানুষের ঘারের শিরা-ধমনির নিকটে মালিক স্রষ্টার উপস্থিতির (সুরা ক্বাফ- ১৬ ) ব্যাখ্যা করা গত শতাব্দীর শুরুতে কঠিন ছিল। মুসলিম, আহলে বাইত এবং বিশ্বাসীদের দৃঢ.- শক্ত বিশ্বাস ছিল শুধু । NASA তথা বিজ্ঞানীদের প্রমাণ উপকরনের কল্যাণে এখন কুরানের বহু কথা, হাদিসের ব্যাখ্যা মুমিনদের বিশ্বাসকে সহজতর বা প্রশান্তিময় করেছে। তাছাড়া কুরআন নিজেই "ওয়াল কুরআনুল হাকিম- বিজ্ঞানময় কুরআন" সুরা ইয়াসিন-২ ।
বিজ্ঞান এখন বলছে, সুবিশাল ইউনিভার্স/বিশ্বভ্রমান্ডের তুলনায় পৃথিবী নামক গ্রহটি একটি কণা। সাড়ে চৌদ্দশত বছর আগে তো রাসুল মোহাম্মদ সা. বলেছেন, আল্লাহপাক পৃথিবীকে মাছির ডানার মতও মনে করেন না, নাহলে কোন কাফের একফোঁটা পানি ও পেত না।
গত শুক্রবার (১৮/১০/১৯) দু'জন নারী নভোচারী মহাশূন্যে হেঁটেছেন। আমিসহ অনেকেই আমরা লাইভে দেখেছি। যুগান্তরও ছেপেছে। প্রতিটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সেকেন্ডে (Fraction of a sacond) নাসাসহ ৭ টি দেশ নিয়ন্ত্রিত iss ( International space station) পৃথিবীর গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করছে সেকেন্ড ৬ কিলোমিটার গতিতে। পৃথিবী থেকে iss এর উচ্চতা ৪৫০ মাইল। লাইভে এখন iss কে দেখছেন মক্কার আকাশে, একটু পরেই ইরাক, তারপর ইরান তারপর পাকিস্তান, পরেই ভারত, বাংলাদেশ, মায়ানমার, থাইল্যান্ড এর আকাশে। ৯০ মিনিটেই দিন আবার রাত।
সৌরজগতের অজানা সব রহস্য আবিষ্কারেে NASA র শতশত বিজ্ঞানী বিরামহীন গবেষণা করে যাচ্ছে। গ্রহ, নক্ষত্র, গ্যালাক্সি, মিল্কিওয়ে, ব্ল্যাকহোল, হোয়াইট হোল সহ ইউনিভার্সের সব কিছুর রহস্যময়তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা গত এক শতাব্দীধরে শত সহস্র আবিষ্কার করলেও তাদের কপালে কখনো দুঃশ্চিতার ভাজঁ পরেনি।
তারা চাঁদেে মানুষ এবং মংগলগ্রহে সফলভাবে পাথফাইন্ডারকে পাঠিয়ে যেখানে উল্লাসে ফেটে পড়েছিল, এমনকি ২০২৩ সালে প্রথমবারের মত বর্তমানে ১৭ বছর বয়সী "এলিসা কারজন " কে মংগলগ্রহে ( এলিসা মৃত্যু জেনেও নিজেই মংগলে যেতে রাজি হয়েছে) পাঠাতে সবরকম প্রস্তুতি নিচ্ছে, একেরপর এক মহাবিশ্বরহস্য আবিষ্কারেে পৃথিবীকে চমকে দিয়ে যাচ্ছিল, তেমনি অবস্থায় এ গ্রহের মানুষের জন্য দুশ্চিন্তার নিউজ প্রকাশ করতে গেলে কপালেতো ভাজঁ পড়বেই।
আসুন দেখি তারা কি বলেছে, ৩০ এপ্রিল ২০১৯ স্কাইনিউজ এর খবরটি এরকম, "" ... we will have just two options to take; deflect it or evacuate.- The head of NASA has warned that it is time to take the threat of an Earth-destroying asteroid seriously.Jim Bridenstine spoke as the space agency began its planetary defence conference exercises...administrator expressed concern that similar warnings have historically prompted......after that, a decision will have to be made: attempt to prevent the collision by deflecting the asteroid, or evacuate the area it could crash into........""
একটি গ্রহাণু পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে, মানুষকে অন্য গ্রহে যেতে হবে, না হয় পৃথিবী ছাড়তে হবে....
কি আশ্চর্য, একটি গ্রহাণুর আঘাতে পৃথিবী ধ্বংসের বার্তা এত গুরুত্বপূর্ণ যে, পৃথিবীগ্রহের মানুষদের ঘুম নাই। মুসলিম, বৌদ্ধ, খৃষ্টান, হিন্দু, ইহুদী, জৈন, জোরাস্টারবাদি, কনফুসিয়াস সহ সকল ধর্ম পন্ডিতগণ এবং দার্শনিক বিজ্ঞানী, রাজনৈতিক নেতা সকলেই খবরটিতে আতংকিত। নানারকম জল্পনাকল্পনা গবেষণা শুরু হয়ে গেছে।
অথচ ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের মুক্তির গাইড বুকে তথা ১৪০০ বছর আগে মহান আল্লাহ (সুওতা) তার কালামে পাকে তো বলে রেখেছেন ,সুরা ক্বিয়ামাহ, সুরা নাবা, সুরা তাকবির, সুরা ইনফিতর সহ বহু সুরায় বিশাল বড় কিয়ামত বা পৃথিবী ধ্বংসের কথা,
""" ইজাস্সামা-উন্ফাতারাত - ওয়া ইজাল কাওয়াকিবুংতাসারাত...যখন আকাশ ফাটিয়া চৌচির হইবে..যখন নক্ষত্রসমূহ ছিটকাইয়া পড়িবে..সুরা ইনফিতর.""
এ ভবিষ্যৎ খবরটি শুধুই মুসলমানদের জন্য নয়। দুনিয়ার সবার জন্য। কুরআন মানুষের জন্য, কুরআনের বিষয়বস্তুই মানুষ। তাই সবমানুষকেই কুরআনের কাছে যেতে হবে, তার মুক্তির বাণী কোরান থেকেই নিতে হবে।কোরানের বাণী থেকেই মানুষ সতর্ক হবে।
তাহলে দেখা গেল কুরআনের "ভবিষ্যৎ মহাপ্রলয় " এর খবরটি NASA ঘুরিয়ে বলেছে, একটি গ্রহাণু ধেয়ে আসছে পৃথিবী ধ্বংস করার জন্য, সময় বাধা হয় নি এখনও। কুরআনের আগাম বার্তা ও বিজ্ঞানের প্রমাণ আমাদের সামনে। এটি নিঃসন্দেহে কুরআন অনুসারীদের জন্য তৃপ্তিদায়ক ও গর্বিত হওয়ার মত খবর।
কারণ কোরানের প্রতিটি অক্ষর শব্দ সেই মহান সত্তার বাণী যিনি আল আউয়ালু ওয়াল আখেরু, যিনি আল হাইয়ুল ক্বাইয়ুম। দুনিয়া ধ্বংস হওয়ার হবে, কিন্তু এমনি এমনি? না! হঠাৎ হবে না। বহু বছরব্যাপি আশ্চর্য, ব্যতিক্রম ও অভূতপূর্ব ঘটনাতো তো ঘটতেই থাকবে। আল্লাহপাক চমকের মত কিছু কাজতো করবেন৷ এতবড় কিয়ামত হঠাৎ হবে না। ঘটতে শুরু করবে বা শুরু হয়েছে এমনসব বিষয়ে ওলামারা ইতোমধ্যে বক্তব্য-বিতর্ক শুরু দিয়েছেন।
ইমাম মাহদি আসার পূর্বেে ৭০ টি লক্ষ্মণ মানুষ প্রত্যক্ষ করবে, যার ৬৫ টি ঘটে গেছে বলে আলেমগণ মত দিয়েছেন। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, মিশর, ফিলিস্তিন এর বড়মাপের ইসলামি স্কলারগণই শুধু নয় ইহুদি খৃষ্টান ধর্মপন্ডিতগণও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তাদের পরিকল্পনা এঁটে চলেছেন। চলুন দেখি তারা কি বলেঃ
১) ফিলিস্তিনের শায়খ, ঈসা বাদওয়ান, একজন বৃদ্ধার নাতির "জন্ম নেয়া ও কথা বলা " এবং দাজ্জাল হত্যা করার ঘোষণার ঘটনা নিয়ে জানান, ইমাম মাহদী এসেছেন। ২০১৯ এ তার বয়স ১৫ হয়েছে।
২) খ্যাতিমান আলোচক শায়খ ইমরান হোসেইন পরিষ্কার যুক্তি দিয়ে বলেছেন, ইমাম মাহদী এসেছেন।
৩) শায়েখ সুফি হিশাম কাব্বানি ২০১৭ সালে হিসাব করে বলেছেন, আল্লাহপাক জ্ঞানের মালিক, বাস্তবতা এমন যে, আগামী ৬/৭ বছরের মধ্যে ইমাম আসবেন।
৪) কিং সউদের অধ্যাপক ইমরান নজদ, আব্দুল্লাহ আল আরেফিন বলেছেন ইমাম মাহেদি এসেছেন ।
৫) বাংলাদেশের অনেক প্রখ্যাত আলেমে দীন জোর দিয়ে বলে যাচ্ছেন ইমাম মাহদির আগমনের কথা।
ইমাম মাহদির বিষয়েে ইহুদি - খৃষ্টান পন্ডিতগণও কথা বলা শুরু করেছেন, পূর্বেই বলেছি। ইসরায়েলের শতবর্ষি ইহুদি পন্ডিত 'ইযহাক কাদুরি 'জেরুসালেমের এক হাসপাতালে ২৮/১/২০০৬ এ মারা যাওয়ার আগে সবাইকে বিষ্ময়কর তথ্য দিয়ে বলে ও লিখে যান তার ধারনা ইয়েহুসুয়া (ঈসা) এসে গেছেন।
মূল কথায় আসা যাক। মহানবী সা. কি বলে গেছেন - সহিহ বুখারী ও মুসলিম শরীফে ইমাম মাহদীর আগমন নিয়ে আমরা ৩ টি হাদিস পাই এরকম -
১) মহানবী মোহাম্মদ সা. বলেন, “সেদিন কেমন হবে তোমাদের অবস্থা যেদিন তোমাদের মধ্যে ঈসা ইবনে মারইয়াম নেমে আসবেন এবং তোমাদের মধ্যে হতেই একজন ইমাম হবেন মুমিন। অর্থাৎ তোমাদের সাথে জামা'তে শরীক হয়ে ঈসা আ. তোমাদের ইমামের পিছনে নামায আদায় করবেন।
২) জাবের রা. বলেন. আমি রাসূল সা.-কে বলতে শুনেছি, “আমার উম্মাতের একটি দল হকের উপর বিজয়ী থেকে কিয়ামত পর্যন্ত লড়াই করতে থাকবে। অতঃপর ঈসা ইবনে মারইয়াম অবতরণ করবেন। তাকে দেখে মুসলমানদের আমীর বলবেন- আসুন! আমাদেরকে নিয়ে নামাযের ইমামতি করুন। ঈসা আ. বলবেনঃ না; বরং তোমাদের আমীর তোমাদের মধ্যে হতেই। এই উম্মাতের সম্মানের কারণেই তিনি এ মন্তব্য করবেন।
৩) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “আখেরী যামানায় আমার উম্মাতের মধ্যে একজন খলীফা হবেন যিনি মানুষের মধ্যে মুক্ত হস্তে অগণিতভাবে ধন-সম্পদ বিতরণ করবেন।"----
প্রায় ৩৬ টি হাদীস গ্রন্থে সম্মানিত ২৬ জন সাহাবির রা ইমাম মাহদী সংক্রান্ত হাদিস বর্ণনা করেছেন।
কুরআনের কথা অনুযায়ী কিয়ামত ঘনিয়ে আসছে এবং অবশ্যই তা ঘটতে যাচ্ছে যা এখন নাসার বিজ্ঞানীরাও আশংকায় পরে গিয়ে পৃথিবীর মানুষকে গ্রহ বদলের পরামর্শ দিচ্ছেন। যা অসম্ভব। তাদের কুরআন পড়তে বলি। কুরআন পড়ুন, ইউনিভার্সের মালিক কি বলেছেন তা অনুধাবন করুন ।
পৃথিবী ধ্বংসের আগে ইমাম মাহদি আসবেন( ৭ বছর শাসন করবেন) , ঈসা আ. আসবেন (৪০ বছর শাসন করবেন) দাজ্জালের আগমন ঘটবে, ইয়াজুজ-মাজুজ এর ধ্বংসজজ্ঞ শুরু হবে। তাদেরকে ধ্বংস করবেন ঈসা (আ) ।
'গাজওয়াতুল হিন্দ', ' মালহামাতুল কোবরা ' নামক যুদ্ধ তথা পৃথিবী সম্পূর্ণ ধ্বংস তথা কিয়ামত। হয়ত আগামী ৪৯ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে। আমাদের করণীয় কি তাহলে। কুরআন খুলুন। কিয়ামতের আলামত সংক্রান্ত আয়াত গুলোর সাথেই মুমিন এর কাজ বলা আছে। হাদিস খুলুন। ইমাম মেহেদি, ঈসা আ.-এর আগমনের কথা বলেই বিশ্বমানবতার নবী মানুষের কি প্রস্তুতি দরকার বলে গেছেন। সে আমল গুলো আমরা করি।
শেষ কথা, ‘ওয়াওতাছিমু বি হাবলিল্লাহে জামিয়া ওয়ালা তাফাররাকু-- তোমার আল্লাহর রজ্জুকে শক্ত করে আকড়ে ধর এবং বিচ্ছিন্ন হয়ো না (৩-১০৩)।’
লেখক : ডিজিএম, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট
আরএম/