সুফিয়ান ফারাবী
বিশেষ প্রতিবেদক
ঢাকার অদূরে সাভারের আলমনগর। মনোরম পরিবেশে গড়ে উঠেছে সুগন্ধা হাউসিং। সম্পূর্ণ কোলাহলমুক্ত নিরিবিলি পরিবেশ। এখানেই মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী গড়ে তুলেছেন একটি আসহাবে সুফফা। অর্থাৎ কুরআন শিক্ষাকেন্দ্র। আন্তর্জাতিক মানের হিফজ বিভাগ চালু রেখেছেন আপাতত। অতি শীঘ্রই কিতাব বিভাগ করবেন মারকাজুত আরাবিয়া বাংলাদেশ।
পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ী গতকাল (২ নভেম্বর) মজলিসে তালিমুস সুন্নাহ'র মাসিক ইসলাহী মজলিস অনুষ্ঠিত হয়েছে মন জুড়ানো এই প্রতিষ্ঠানটিতে। সকাল থেকেই শত শত আলেম ওলামার বিচরণে এক অপরূপ সৌন্দর্য ধারণ করেছিল আলমনগর হাউজিং। যেখানে মাওলানা আইয়ুবীর হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান মারকাযুত তারবিয়া বাংলাদেশ।
ইসলাহী মজলিসে উপস্থিতির সংখ্যা এই পরিমাণ ছিল- বিশাল পরিসরের মাদরাসার হল রুমটি কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। দেশের শীর্ষ আলেম, বিভিন্ন মসজিদের খতিব ও ইমাম এতে দলে দলে যোগ দেন। শুধু ঢাকা নয় ঢাকার বাইরে থেকেও এসেছেন অনেকে। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার আলেমগণ সকালে এসে পৌঁছলেও ঢাকার বাইরের আলেমগণ এসে পৌঁছেছিলেন গতকাল রাতেই। আত্মশুদ্ধির জন্যই মূলত তাদের এই ত্যাগ ও কুরবানী।
আর করবেই না বা কেন? ইসলাহী মজলিসে উপস্থিত ছিলেন, পীরে কামেল শায়খ অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী, শাইখুল হাদিস মাওলানা মামুনুল হক, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের মুখপাত্র মাওলানা হামেদ জহিরীসহ দেশের শীর্ষ ওলামায়ে কেরাম। একে একে ইসলাহী বয়ান করেন তারা। এর আগে মজলিসে তালিমুস সুন্নাহ নির্দিষ্ট আমল এর কার্যক্রম চলে।
অনুষ্ঠানটি শুরু হয় মজলিসে তালিমুস সুন্নাহ-এর মহাসচিব মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী এর স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে। তারপর পর্যায়ক্রমে আমন্ত্রিত মেহমান আগত ওলামাদের উদ্দেশ্য ইসলাহী বয়ান পেশ করেন।
বেলা ১২টায় উপস্থিত আলেমদের উদ্দেশ্যে ইসলাহী বয়ান পেশ করেন মাওলানা মামুনুল হক। তিনি বলেন, “গোপনে আমল করলে এর প্রতিদান বেশি পাওয়া যায়। আমল যত বেশি গোপনে হয় তার পাওয়ার তত বেশি বেড়ে যায়। আমাদের আকাবীররা সব সময় চেষ্টা করতেন কীভাবে আমল গোপন রাখা যায়। আমল সম্পর্কে মানুষ জেনে যাক এটা কখনোই তারা চাইতেন না। তারা চাইতেই তাদের আমল যেন গোপন থাকে।”
“যখন বান্দা গোপনে আমল করতে থাকে তখন সে আল্লাহর বিশেষ বান্দা হিসেবে নির্বাচিত হয়ে যায়। আল্লাহর রহমতের বারিধারা তার ওপর বর্ষণ হতে থাকে।”
“এজন্য আমরা নিজেদেরকে গোপন থেকে গোপনে রাখার চেষ্টা করব। ফোকাসে আসার প্রবণতা ছেড়ে দিতে হবে আমাদের। ক্যামেরার সামনে থাকার বিষয়টি এড়িয়ে চলতে হবে। তবেই আমরা আল্লাহর বিশেষ বান্দা হিসেবে বিবেচিত হবো। কারণ আমি শুরুতেই বলেছি, প্রকাশ্য আমলের চেয়ে গোপনকৃত আমুলের পাওয়ার এবং শক্তি বহুগুণ বেশি। এর মাধ্যমে আল্লাহর সাথে বান্দার নিগূঢ় সম্পর্ক তৈরি হয়। তখন বান্দা (مستجاب الدعوة ) মুসতাজাবুদ দায়ওয়া হয়ে যান। তিনি আল্লাহর কাছে যা চান আল্লাহ তাকে সেটাই দান করেন।” যোগ করেন মাওলানা মামুনুল হক।
এছাড়াও বিভিন্ন আলেম-ওলামাগণ জ্ঞানগর্ভ আলোচনা পেশ করেন।
ইসলাহি মজলিস পরিচালনা করেন মজলিসে তালিমুস সুন্নাহ'র মহা-সচিব পীরে কামেল মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ূবী।
পরিশেষে অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরির সংক্ষিপ্ত নসিহত ও দোয়ার মাধ্যমে ইসলামি মজলিসের সমাপ্তি ঘটে।
উল্লেখ্য, প্রতি ইংরেজি মাসের প্রথম শনিবার মজলিসে তালিমুস সুন্নাহ'র মাসিক ইসলাহি মজলিস অনুষ্ঠিত হয় মারকাজুত তারবিয়াহ বাংলাদেশে।
আরএম/