সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
চিকিৎসকরা বছরে দুইবারের বেশি বিদেশ যেতে পারবেন না ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের

মাদরাসাসহ সব শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হোক: মাওলানা মামুনুল হক

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

বুয়েট শিক্ষার্থী আবরারের খুনিদের প্রায় সবাইকে গ্রেফতার করেছে সরকার, তবুও জনমনে সুষ্ঠু বিচার নিয়ে শঙ্কা আছে। বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে, দাবি ওঠেছে সব শিক্ষাঙ্গনে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের। ভিন্নমত দমনের বিষয়টিও এখন সবার মুখে মুখে। গত ২৬ সেপ্টেম্বর ডাকসু ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধের ঘোষণা করেছে। চলমান নানা বিষয়ে কথা হয় বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিসের সভাপতি মাওলানা মামুনুল হকের সঙ্গে। তিনি একই সঙ্গে রাজনীতিক, হাদিস বিশারদ এবং সুবক্তা।সময় ও রাজনীতি সচেতন এই মানুষটি কথা বলেছেন নিজ সংগঠন বিষয়েও।সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- হুমায়ুন আইয়ুব


আওয়ার ইসলাম: ছাত্র রাজনীতির সুফল এবং কুফল বিষয়ে কিছু বলুন?

মাওলানা মামুনুল হক: সবকিছুরই ভালো-মন্দ দু’টি দিকই থাকে। তেমনই ছাত্ররাজনীতিরও ভালো-মন্দ দু’টি দিক রয়েছে। ছাত্ররা একটি জাতির ভবিষ্যৎ। এই ছাত্রদের ভালো ও সুন্দরভাবে পরিচালিত করতে না পারলে জাতির কোনো ভবিষ্যৎ থাকতে পারে না। ছাত্ররাজনীতি যদি আদর্শিক রাজনীতি হয় তাহলে সে রাজনীতি জাতির জন্য কল্যাণকর। এর মাধ্যমে ভালো রাজনীতিবিদ উঠে আসবে। কিন্তু আমাদের দেশে সাধারণভাবে যে ছাত্ররাজনীতি চলছে, ক্ষমতার লাঠিয়াল হিসেবে ছাত্রদের ব্যবহারের প্রবণতা দিন-দিন বাড়ছে, এর দ্বারা যারা ছাত্ররাজনীতিতে যুক্ত; শুধু তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না বরং পুরাশিক্ষাঙ্গনকেই ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

আওয়ার ইসলাম: সম্প্রতি বুয়েটের ঘটনার পর বিভিন্ন মহল থেকে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের কথা বলা হচ্ছে। এ বিষয়ে আপনার মতামত?

মাওলানা মামুনুল হক: ছাত্ররাজনীতি না; বরং শিক্ষাঙ্গন কেন্দ্রিক রাজনীতি বন্ধ করার সময় এসেছে।ছাত্র বা শিক্ষকরা রাজনীতি করতে পারে, তবে শিক্ষাঙ্গন কেন্দ্রিক রাজনীতি বন্ধ হওয়া দরকার। না হলে শিক্ষাঙ্গনের লেখাপড়াসহ সার্বিক পরিবেশ, শিক্ষক ছাত্রের মধ্যে যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক তা বিঘ্নিত করে।এছাড়াও ছাত্রদের মধ্যে পারস্পরিক দ্বন্দ সৃষ্টি হয় । মাদরাসার শিক্ষার্থী বা শিক্ষকদের বড় একটি অংশ রাজনীতির সাথে যুক্ত। এক্ষেত্রে তারাও রাজনীতি করতে পারবেন এবং দরকারও আছে। তবে সেটা শিক্ষাঙ্গন কেন্দ্রিক রাজনীতি নয়, শিক্ষাঙ্গনে রাজনৈতিক কাজ পরিচালনা শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করে। শিক্ষাঙ্গনের বাইরে রাজনীতি এবং রাজনৈতিক কাজ পরিচালনা করা যেতে পারে।

আওয়ার ইসলাম: বুয়েট শিক্ষার্থী আবরারের খুনিদের গ্রেফতার করেছে সরকার। বুয়েটে নিষিদ্ধ করা হয়েছে ছাত্র রাজনীতি। আবরারের হত্যার সুষ্ঠু বিচারের ব্যাপারে আপনার মতামত কী?

মাওলানা মামুনুল হক: বর্তমানে ক্ষমতার লাঠিয়াল হিসেবে ছাত্রদের ব্যবহারের প্রবণতা এটা তারই ফসল।কাজেই যারা সরাসরি হত্যাকাণ্ডে জড়িত, আমি শুধু তাদেরকেই দায়ী করব না। বরং বর্তমান ক্ষমতাশীন মহলের শীর্ষ নেতৃত্বও এর জন্য দায়ী। প্রত্যেকটা শিক্ষাঙ্গনকে নিজেদের দখলে রাখা এবং ভিন্নমতকে দমন করার জন্য তারা ছাত্রদেরকে যেভাবে ব্যবহার করছে এটা তারই অনিবার্য ফসল।

আওয়ার ইসলাম: ভিন্নমতাবলম্বীদের সাথে আমাদের আচরণ কেমন হওয়া উচিত?

মাওলানা মামুনুল হক: যেকোনো বিষয়ে মতের ভিন্নতা, যুক্তির ভিন্নতা, আলোচনা হবে, তর্ক-বিতর্ক থাকবে।এসবের মধ্যেও মানবিক আচরণ ও মানবতার সৌন্দর্য বোধ থাকা উচিত। বর্তমানের পেশি শক্তি নির্ভর মতপার্থক্য, এটা উন্নতজাতির আচরণ হতে পারে না।

আওয়ার ইসলাম: মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ব্যাপারে ইসলাম কতটুকু অনুমোদন ও সীমানা দিয়েছে?

মাওলানা মামুনুল হক: মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ইসলাম অবশ্যই দিয়েছে। কিছু সুনির্দিষ্ট বিষয় যেগুলো আল্লাহ, আল্লাহর রাসুল, কুরআন অর্থাৎ সেসব বিষয়ে দ্বিমতের কোনো অবকাশ নেই। যেগুলো সর্বকালীন, সর্বজনীন এবং সুনির্ধারিত এগুলো ছাড়া বাকি সবক্ষেত্রেই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ইসলামে রয়েছে। যেমন ভিন্ন ধর্মাবলম্বন করার অবকাশ ইসলাম একেবারেই বন্ধ করে দেয়নি। তার মত, বোধ এবং স্বাভাবিক উপলব্ধি অনুযায়ী ইসলাম সত্যকে গ্রহণ করার সুযোগ রেখেছে।

আওয়ার ইসলাম: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু ধর্মীয় রাজনীতি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। আপনি ডাকসুর এই পদক্ষেপকে কতটা যুক্তিযুক্ত বলে মনে করেন?

মাওলানা মামুনুল হক: এটা ডাকসুর অসংবিধানিক ঘোষণা। বাংলাদেশের সংবিধান যেখানে ধর্মীয় রাজনীতিকে অনুমোদন দেয় সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা তার ছাত্র সংসদ ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে পারে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তো বাংলাদেশের বাইরে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতি বা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করতে পারে। তবে নির্দিষ্ট করে ধর্মীয় রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করার ইখতিয়ার ডাকসুর নেই। এটা ধর্ম এবং রাষ্ট্রাদোহী সিদ্ধান্ত।

আওয়ার ইসলাম: বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার হত্যা, ডাকসুর ধর্মীয় রাজনীতি বন্ধের ঘোষণায় ধর্মীয় দল, ছাত্রসংগঠনের ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত?

মাওলানা মামুনুল হক: ধর্মীয় সংগঠন ও ছাত্রসংগঠনগুলো এসব ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা রাখা উচিত, সাধারণ শিক্ষার্থী ও সাধারণ মহলের সাথে যোগাযোগের উপলক্ষ এগুলো। জাতির দায়িত্ব পালনের মোক্ষম সময়। এ সময়ে দায়িত্ব পালন না করলে তাদের অবস্থান মজবুত হবে না। এই মুহুর্তে তাদের রাজপথে সরব থাকা উচিত। মাঠে-ময়দানে শান্তিপূর্ণ বড় কর্মসূচি পালন করা উচিত।

আওয়ার ইসলাম: বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস এবং বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিসের আলাদা আলাদা ছাত্রসংগঠন আছে। একই দলের দু’টি ছাত্রসংগঠন না রেখে, সমন্বয়ের সুযোগ আছে কিনা?

মাওলানা মামুনুল হক: বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিস সাংবিধানিক নীতিমালা অনুযায়ী স্বতন্ত্র সংগঠন। যুব মজলিস বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সহযোগী সংগঠন, বৃহৎ আন্দোলনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসকে সহযোগিতা করে; অঙ্গসংগঠন নয়। তাই সংগঠন পরিচালনার ক্ষেত্রে ভিন্নতা ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ বৈশিষ্ট্যগুলোর আলোকে ছাত্রদের মধ্যে সংগঠন পরিচালনা করার এখতিয়ার যুব মজলিসের আছে। এক্ষেত্রে আমরা ছাত্র সংগঠনকে একেকটা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেমন একাধিক থাকতে পারে। এটা শিক্ষার জন্য ভালো। ঠিক সেভাবে একাধিক ছাত্র সংগঠনও পরিচালনা করা যেতে পারে

আওয়ার ইসলাম: ‘বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিস সাংবিধানিক নীতিমালা অনুযায়ী স্বতন্ত্র সংগঠন। যুব মজলিস বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সহযোগী সংগঠন;অঙ্গসংগঠন নয়’ আপনার এই ‘স্বতন্ত্র সংগঠন’ কথার উল্লেখ কি মূল সংগঠন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের গঠনতন্ত্রে আছে?

মাওলানা মামুনুল হক: বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যুব মজলিস সহযোগী সংগঠন হিসাবে পরিচালিত । যুব মজলিসের স্বতন্ত্র সংবিধান আছে, সে আলোকেই যুব মজলিস কার্যক্রম পরিচালনা করে।

আওয়ার ইসলাম: বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিস নানা কর্মসূচি এবং সাংগঠনিক তৎপরতায় গৌরবউজ্জ্বল ১০টি বছর পার করেছে। ইতোমধ্যে ১০ বছরপূর্তির ঘোষণাও করেছেন আপনারা। ১০ বছরপূর্তির প্রস্তুতি নিয়ে জানতে চাই…

মাওলানা মামুনুল হক: ইতোমধ্যে খেলাফত যুব মজলিসের ১০ বছরপূর্তি সম্মেলনের ঘোষণা করা হয়েছে। সারাদেশের জনশক্তি ও কর্মীদের নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ, বর্তমান প্রজন্মের পক্ষ থেকে যুব মজলিসের প্রতি বিপুল সাড়া পাচ্ছি। এ সম্মেলনের মাধ্যমে যুব মজলিসের কাজে নতুন মাত্রা যুক্ত হবে বলে আমরা আশা করছি।

আওয়ার ইসলাম: আমাদের সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।

মাওলানা মামুনুল হক: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।

আরএম/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ