সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
চিকিৎসকরা বছরে দুইবারের বেশি বিদেশ যেতে পারবেন না ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের

প্রশ্নবিদ্ধ ইতিহাস কি রুখতে পারবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

পলাশ রহমান
ইতালি থেকে

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশের একটি আলোচিত ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল। এর প্রতিষ্ঠতা সৈয়দ ফজলুল করিম রহ.। বর্তমানে দলটির নেতৃত্বে আছেন সৈয়দ রেজাউল করিম। এ দলের আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা সৈয়দ ফয়জুল করিম। সম্পর্কে সৈয়দ রেজাউল করিম এবং ফয়জুল করিম দুই ভাই। স্বভাব চরিত্রে দুই ভাই দুই রকম। বড় ভাই রেজাউল করিম প্রচন্ড রকমের সাংগঠনিক একজন মানুষ। তার সাংগঠনিক চিন্তা, ধৈর্য এবং তাকওয়া সর্ব মহলে প্রশংসিত।

অপরদিকে সৈয়দ ফয়জুল করিমকে সবাই ‘গরম’ মানুষ বলে জানেন। মাঠ পর্যায়ের নেতা হিসাবে তিনি বেশ সাহসী। আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে যখন কেউ মাঠে নামতে, মুখ খুলতে সাহস পায় না তখনও তিনি বেশ কড়া ভাষায় সরকারের সমালোচনা করেন।

ছোট বড় নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামেন। যা অনেকের মাঝেই কৌতুহল সৃষ্টি করে। কেউ কেউ মনে করেন সরকারের সাথে ইসলামি আন্দোলন নেতাদের একটা বোঝাপড়া আছে। যখন কোনো রাজনৈতিক দল মাঠে নামতে পারে না, কথা বলতে পারে না তখনো তারা রাজপথ কাঁপানো কর্মসূচি পালন করেন। যা কৌতুহল সৃষ্টির জন্য একটা বড় উপাদান।

গত নির্বাচনেও ইসলামি আন্দোলন সবার দৃষ্টি কেড়েছে। তিনশ আসনে একক প্রার্থী দিয়ে চমক সৃষ্টি করেছে। ভোটের মাঠে অন্যান্য দলের জন্য প্রচার প্রচারণার পরিবেশ না থাকলেও নৌকার পাশাপাশি হাতপাখার ব্যানার পোষ্টার সবার চোখে পড়েছে। প্রায় সব দলের বিরোধী রাজনীতিকরা হামলা মামলা গুমের স্বীকার হলেও এই দলের কোনো নেতাকে এখন পর্যন্ত এসব মোকাবিলা করতে হয়নি, হচ্ছে না। সব মিলিয়ে ইসলামী আন্দোলন সত্যিই এক রহস্যজনক রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে।

সমালোচকদের ভাষায়, ইসলামি আন্দোলন সরকারের দালালী করে। সরকারী অর্থে রাজনীতি করে। কিন্তু এই অভিযোগের পক্ষে এখন পর্যন্ত কোনো প্রমাণ দৃশ্যমান হয়নি। সরকারের কাছ থেকে সুযোগ সুবিধা গ্রহণের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাছাড়া ইসলামি আন্দোলনের নেতারাও এসব অভিযোগ গায়ে মাখেন না, ছুঁড়ে ফেলে দেন।

আমি এই বিষয়গুলো একটু অন্যভাবে দেখতে চাই। আমি মনে করি ইসলামী আন্দোলন এখন ইতিহাসের স্বর্ণ সময়ে অবস্থান করছে। যে কারনেই হোক বাংলাদেশের অন্যান্য যে কোনো বিরোধী রাজনৈতিক দলের তুলনায় ইসলামী আন্দোলন সুবিধাজনক জায়গায় আছে। আমরা জানি রাজনীতিতে কেউ কারো জন্য জায়গা করে দেয় না, ছেড়ে দেয় না। নিজের যোগ্যতায় জায়গা করে নিতে হয়। ইসলামী আন্দোলন আদর্শহীন জোটের রাজনীতিতে না গিয়ে, অযথা গায়ের জোর না দেখিয়ে, উত্তেজনা সৃষ্টি না করে রাজনীতিতে টিকে আছে, কর্মসূচি পালন করছে বিষয়টা কোনো ভাবেই মামুলি ব্যাপার নয়।

বাংলাদেশের বৈরী রাজনৈতিক পরিবেশে তারা রাজপথে নামতে পারছে, নিজ দলের নেতাকর্মীদের নিরাপদে রাখতে পারছে এটা নেতৃত্বের বিচক্ষণতা, দুরদর্শিতা ছাড়া সম্ভব নয়। সব মিলিয়ে সৈয়দ রেজাউল করিমের নেতৃত্বে ইসলামি আন্দোলন এখন ‘স্যুইট’ সময়ে অবস্থান করছে। ভবিষ্যতে কোনো দিন এই দলটি এত ভালো সময় বা নিরাপদ সময় অতিবাহিত করতে পারবে বলে সন্দেহ করার যথেষ্ঠ অবকাশ আছে। কারণ পৃথিবীর কোথাও রাজনীতির মাঠ ইসলামপন্থীদের জন্য কুসুমাস্তির্ণ নয়। বর্তমানের বাংলাদেশ তো নয়’ই।

ইসলামি আন্দোলনের উচিত এখন ঘর গোছানো। দক্ষ এবং পরীক্ষিত কর্মীবাহিনী গড়ে তোলার প্রতি নজর দেয়া। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করা। বিশেষ করে সকল মুসলিম প্রধান দেশের রাষ্ট্রদূতদের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি করা। দেশে দেশে যেসব ইসলামপন্থরা রাজনীতি করছেন তাদের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি করা। আন্তর্জাতিক মানের ইসলামি স্কলারদের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি করা, তাদের পরামর্শ গ্রহণ করা।

আন্দোলনের শীর্ষ নেতাদের বেশি বেশি বিদেশ সফর করা। অনলাইন ভিত্তিক কার্যক্রম বৃদ্ধি করা। বাংলা, ইংরেজি, আরবিসহ বিভিন্ন ভাষায় ইসলামি আন্দোলনের আদর্শ, চিন্তা, চেতনা তুলে ধরা। রাষ্ট্রের প্রয়োজনে গড়ে ওঠা প্রতিটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে গবেষণা করা। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য যোগ্য মানুষ তৈরীর কার্যক্রম হাতে নেয়া।

বিশেষ করে দেশের প্রতিরক্ষা বিভাগে যোগ্যমানের দাওয়াতী কার্যক্রম শুরু করা। দলের জন্য তাত্বিক কার্যক্রম প্রসারিত করা। দলের ভেতরে ব্যবসায়ীদের প্রভাব কমানো। দলকে পুঁজি করে ব্যাবসা বাণিজ্য বন্ধ করা। দলের বাইরে কিছু সচেতন সমালোচক, বুদ্ধিজীবী তৈরী করা। দেশের সাংস্কৃতিক কর্মীদের কাছে সংগঠনের মানসম্মত দাওয়াত নিয়ে যাওয়া।

ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে এই দলের অনেক নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন বর্তমানের নেতারা দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের যোগ্য মূল্যায়ন করেন না। বিশেষ করে সাবেক নেতাকর্মীদের খোঁজ খবর রাখেন না। অনেক ত্যাগী, মেধাবী এবং পরীক্ষীত নেতাকর্মী অভিমান করে দলীয় কার্যক্রম থেকে দুরে সরে থাকলেও তাদের খোঁজ খবর নেন না। যা অত্যাধিক দূভ্যার্গজনক।

ইসলামী আন্দোলন এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলোর সাবেক নেতাকর্মীদের নিয়মিত খোঁজ খবর নেয়া দরকার। তাদের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি করা দরকার। তাদের কথা শোনা দরকার। দুর থেকে হলেও দলের জন্য তাদের যোগ্যতা মেধা কাজে লাগানো দরকার।

চরমোনাই পীর সাহেবর মুরিদ, ভক্তদের ছেলে মেয়ে, আত্মীয় স্বজনরা কে কোথায় আছেন, দেশে বিদেশে কে কী করছেন তার খবর নেয়া দরকার। তাদের সাথে ব্যাক্তিগত সম্পর্ক বৃদ্ধি করা দরকার। এর জন্য মুজাহিদ শুমারির সাথে সাথে মুজাহিদদের পরিবার আত্মীয় স্বজনদেরও শুমারি করা উচিত এবং দলের কৌশলগত গোপনীয়তা রক্ষা করা উচিৎ।

মোদ্দা কথা হলো বর্তমানের স্বর্ণ সময় কাজে লাগিয়ে ইসলামী আন্দোলন যদি দক্ষ এবং পরীক্ষীত কর্মীবাহিনী গড়ে তুলতে না পারে, আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে না পারে তবে সত্যিই ইতিহাসের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকবে এই দল এবং দলের শীর্ষ নেতারা।

লেখক: ইসলামী রাজনীতি বিশ্লেষক

আরএম/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ