আব্দুল্লাহ আফফান ।। মফস্বল সম্পাদক
সম্প্রতি ক্যাসিনো, বার, ক্লাব, স্পা, পার্লারসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার বাড়িতে অভিযান চালাচ্ছে প্রশাসন। সেখান থেকে উদ্ধার করা হচ্ছে মদ ও জুয়ার বিভিন্ন সরঞ্জাম, বিপুল পরিমান অবৈধ টাকা। সরকারদলীয় লোকজন এ অভিযানকে ‘শুদ্ধি অভিযান’ বলে আখ্যায়িত করছে। এ অভিযান অনেক রাজনৈতিক নেতার উৎকণ্ঠার কারণ হলেও ইসলামভিত্তিক রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা সরকারের এ উদ্যোগতে স্বাগত জানিয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরণের অভিযান দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা তাদের।
ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল লতিফ নিজামী এ অভিযানকে সরকারের ‘সাহসী উদ্যোগ’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে যে শুদ্ধি অভিযান চালাচ্ছে তা সাহসী উদ্যোগ। এর জন্য সরকার প্রশংসার দাবি রাখে। এটা সরকারের সময় উপযোগী চিন্তার বহিঃপ্রকাশ।
তিনি বলেন, ক্যাসিনো, বার, স্পা এছাড়াও যেসব জায়গায় অনৈতিক কাজ হয় সেগুলোও বন্ধ করা হোক। এক সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানও দেশে মদ জুয়া বন্ধ করেছিলেন। আগে রেসকোর্স ময়দানে ঘোড়া দৌড় হতো তিনি তা বন্ধ করেছিলেন।
দুর্নীতি বিষয়ে তিনি বলেন, দুর্নীতি দেশ উন্নয়নে প্রবল বাধা। অপরাধের শিকড় হলো- মদ, জুয়া, দুর্নীতি। তাই দুর্নীতিবাজ বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত। এ বিষয়ে কঠোর আইন প্রনোয়ন করা উচিত। বর্তমানে মদ, জুয়ার শাস্তি খুব লঘু।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমেদ বলেন, সরকার বর্তমানে শুদ্ধি অভিযানের নামে যে অভিযান চালাচ্ছে তা আরো আগে চালানো দরকার ছিলো। অন্তত ৪-৫ বছর আগে চালালে দেশে এ অবস্থা হতো না। শুদ্ধি অভিযানের উদ্দেশ্য যদি ভাল থাকে তবে তা ইতিবাচক হবে বলে মনে করছেন তিনি।
মাওলানা ইউনুস আহমেদের ধারণা, বিভিন্ন কারণে গডফাদাররা ধরা ছোয়ার বাহিরে থেকে যায়, তাদের যদি আইনের আওতায় আনা যায়। এ অভিযান যদি চলমান থাকে তাহলে দেশের পরিবর্তন আসবে। দেশ থেকে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি কমে যাবে। এখন অনেকেই গা ঢাকা দিবে। তাই এ অভিযান চলমান রাখতে হবে। এটা যদি সবসময় চালানো হয় তাহলে এখন যারা গা ঢাকা দিবে তারা পার পাবে না।
‘বিভিন্ন গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, র্যাবকে ১০ কোটি টাকার অফার দেয়ার পরেও তারা সেদিকে ঝুকে নাই। এটা ভাল বিষয়। র্যাব, পুলিশসহ প্রশাসনের অন্যরা যদি দায়িত্বশীল হয় তাহলে দেশ থেকে অন্যায়-অপকর্ম অনেকটাই কমে যাবে। প্রশাসনকে যত বড় অফারই দেয়া হোক না কেন তারা যদি সেগুলোতে উপেক্ষা করে তাদের অভিযান চালিয়ে যেতে পারে তাহলে দেশে পরির্বতন আসবে।’ যোগ করেন মাওলানা ইউনুস।
একই মনোভাবের কথা জানালেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্মমহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী। তিনি বলেছেন, আমরা জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রসাশনের শুদ্ধি অভিযানকে স্বাগত জানাই। সাথেসাথে এই অভিযান যেন অব্যাহত থাকে এবং দু’ চার সপ্তাহ পর বন্ধ হয়ে না যায়, এটা আমরা কামনা করি।
তিনি আরও বলেন, সংবাদমাধ্যমে দেখলাম, একজনের সিন্দুকের মধ্যে কোটি কোটি টাকা পাওয়া গেছে, একটি সমাজ বা রাষ্ট্রের অবকাঠামো ধ্বংস হওয়ার জন্য এ ধরণের দূর্নীতিই যথেষ্ঠ বলে আমি মনে করি। এই দূর্নীতির শিকড় উপড়ে ফেলতে হবে। আমাদের দাবি, সরকার দলীয় লোকদের দিকে না তাকিয়ে, সকল দূর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় আনুক। শুধু ক্লাব ও ক্যাসিনোতে নয় বরং সকল জায়গায় এ অভিযান অব্যাহত রেখে দূর্নীতিকে শিকড় থেকে উপড়ে ফেলা হবে। এটা আমরা আশা করছি, দাবি করছি।
আজ এক আলোচনায় খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক বলেছেন, সরকার, প্রশাসন ও সরকার দলীয় লোকদের ভয়াবহ দুর্নীতি দেশকে সংকটরে মধ্যে ফেলেছে। আজকে সরকার দলীয় লোকদের কাছে অবৈধ অর্থ-সম্পদের যে খনি আবিস্কৃত হচ্ছে তা প্রমাণ করে বর্তমান সরকার দুর্নীতিবাজ সরকার। সরকার ও প্রশাসনের আশ্রয়, প্রশ্রয়ের কারণেই দুর্নীতিবাজরা এ পর্যায়ে পৌঁছতে পেরেছে।
‘দুর্নীীততে আকন্ঠ নিমজ্জিত একটি সরকারের পক্ষে দেশ পরিচালনা সম্ভব নয়। দুর্নীতির করালগ্রাস থেকে জাতিকে মুক্ত করতে হলে দুর্নীতির গড়ফাদারদের বিরুদ্ধে সাড়াশী অভিযান পরিচালনা করতে হবে। যারা দুর্নীতিবাজদের লালন করেছে, প্রশ্রয় দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
আরএম/