মুফতি মুহাম্মাদ রাশিদুল হক রহ. ছিলেন একজন মুহাদ্দিস ও গবেষক লেখক। সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হয়ে দীর্ঘ এক বছর চিকিৎসাধীন থাকার পর গত বছরের ২৫ অক্টোবর ইন্তেকাল করেন।মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৩৫ বছর। লেখকের ‘হিজরী সন নিছক বর্ষপঞ্জি নয়’ শিরোনামের নিবন্ধটি ২০১৭ সালের ২২ সেপ্টেম্বর আওয়ার ইসলামে প্রকাশিত হয়। পাঠকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ লেখাটি পুন:প্রকাশ করা হলো।
বিশেষ ঘটনার স্মৃতিকে স্মরণ রাখার মানসকিতা ও তারিখ নির্ণয়ের প্রয়োজনীয়তার অনুভব থেকে দিন, মাস, বছর গনণার তাগিদে মানব সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই বর্ষ গণনার উদ্ভব ঘটেছে। আর এ গণনার পথপরিক্রমায় মানুষ চাঁদের গতি হিসাব করেছে। যার থেকে জন্ম হয়েছে চান্দ্রবর্ষের। আবার সূর্যের গতিপথ ধরে সৌরসনের জন্ম হয়েছে। এ সম্পর্কে কুরআনুল কারীমে ইরশাদ হচ্ছে,
(هُوَ الَّذِي جَعَلَ الشَّمْسَ ضِيَاءً وَالْقَمَرَ نُورًا وَقَدَّرَهُ مَنَازِلَ لِتَعْلَمُوا عَدَدَ السِّنِينَ وَالْحِسَابَ ..( - يونس :৫
“তিনিই সূর্যকে করেছেন তেজস্বী এবং চন্দ্রকে জ্যোতির্ময়। আর চন্দ্রের জন্য নির্ধরিত করেছেন মনযিলসমূহ, যেন তোমরা বছর গণনা ও সময়ের হিসাব জানতে পার ...। (সূরা ইউনুস-৫)
প্রাচীন আরবেরা বর্ষ গণনায় প্রথমত কোন নির্দিষ্ট সন সাব্যস্ত করতো না। একটি স্মরণীয় ঘটনাকে কেন্দ্র করে তার আগে-পরে সময় জুড়ে দিয়ে নিজেদের উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো মনে রাখতো। যেমন বলা হতো, অমুকের ছেলের জন্ম হস্তি বাহিনীর আক্রমণের বছর। অমুকের ব্যবসা শুরু হয় হেজাজের যুদ্ধ বা নজদের দুর্ভিক্ষের পাঁচ বছর আগে। তবে মহররম থেকে জিলহজ এই বারোটি মাসের নাম তারা পূর্ব থেকেই ব্যবহার করতো।
কিন্তু গোত্রীয় নানা প্রয়োজনে মাসগুলোকে ইচ্ছামত আগ-পিছ করে নিত। মহান আল্লাহর কুদরতে বিদায় হজের দিন মাসগুলো যথারীতি আপন আপন জায়গায় স্থিতি লাভ করে। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিদায় হজের ভাষণে ইরশাদ করেন:
عَنْ أَبِى بَكْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم- أَنَّهُ قَالَ: إِنَّ الزَّمَانَ قَدِ اسْتَدَارَ كَهَيْئَتِهِ يَوْمَ خَلَقَ اللَّهُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ السَّنَةُ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ... صحيح مسلم- ৪৪৭৭
“আসমান জমীন সৃষ্টির দিন যে বিন্যাসে আল্লাহ তাআলা মাহকালকে বিন্যাস্ত করেছিলেন আবার সে বিন্যাসেই তা ফিরে এসেছে। বারো মাসে এক বছর, এর মধ্যে চারটি মাস মহিমান্বিত ...।” মুসলিম-৪৪৭৭
হিজরী সনের মাসগুলো ইসলামপূর্বযুগ থেকে প্রচলিত থাকলেও সেটিকে কেবল আরবী সন হিসেবে সাব্যস্ত করা যায় না, বরং সনটিকে গোটা মুসলিম উম্মাহর সন হিসেবেই গ্রহণ করতে হবে। হিজরী বা চান্দ্রবর্ষের প্রভাব মুসলমানদের জীবনে ব্যাপক। বিশেষত ইবাদতের তারিখ, ক্ষণ ও মৌসুম নির্ধারণের ক্ষেত্রে হিজরী সনের গুরুত্ব অপরিসীম। যেমন রমযানের রোযা, দুই ঈদ, হজ, জাকাত ইত্যাদি ক্ষেত্রগুলোতে চান্দ্রবর্ষ বা হিজরী সন ধরেই আমল করতে হয়। রোযা রাখতে হয় চাঁদ দেখে, ঈদ করতে হয় চাঁদ দেখে। এভাবে অন্যান্য আমলও। এমনকি স্বামীর মৃত্যুর পর মহিলাদের ইদ্দতের ক্ষেত্রগুলোতেও চান্দ্রবর্ষের হিসাব গণনা করতে হয়।
এসব ক্ষেত্রে সৌরবর্ষ ধরে আমল করতে গেলে অনেক সময় বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়। কেউ যদি সৌর বৎসর ধরে জাকাত প্রদান করতে থাকে, তাহলে প্রতি ত্রিশ বছরে এক বছরের জাকাত বাদ পড়ে যাবে। কারণ প্রতি ৩০ সৌর বৎসরে চান্দ্র বৎসর এক বছর বেড়ে যায়। এমনিভাবে শরীয়তের বিধান মতে একটি বালক সাবালেক হয় পনেরো বছরে হলে। এক্ষেত্রেও চান্দ্রবৎরের হিসাব করতে হবে। সৌরবৎসরের হিসাব করলে সে ছয় মাসের ইবাদত ছেড়ে দেয়ার গুনাহগার হবে।
মোট কথা মুসলমানদের ধর্মীয় বহু বিষয়ে দিন-তারিখ হিসাব-নিকাশের ক্ষেত্র রয়েছে। সেগুলোতে চাঁদের হিসাবে তথা হিজরী সনের দিন, তারিখ, মাস ও বছর ধরে হিসাব করা আবশ্যক। একারণে ইসলামী তারিখ বা চান্দ্রবর্ষের হিসাব রক্ষা করা মুসলমানদের জন্য ফরযে কেফায়া। হিজরী সনটি কেবল আরবদের একটি সন নয়, বরং এটি মুসলমানদের সন এবং ইসলামী বর্ষপঞ্জি।
চান্দ্রবর্ষের হিসাব মেলালে দেখা যায়, একটি ইবাদতের মৌসুম কয়েক বছরের ব্যবধানে শীত-গরম-বর্ষায় পরিবর্তিত হতে থাকে। সৌরবর্ষে হিসাবে এটা হয় না। ইসলামের বিধিবিধান এমনভাবে প্রণিত হয়েছে যে, এতে শিক্ষিত-অশিক্ষিত, শহুরে-গ্রাম্য, সুবিধাভোগী ও সুবিধাবঞ্চিত সবাই যেন স্বাচ্ছন্দে আল্লাহর বিধিবিধানগুলো পালন করতে পারে। চাঁদের মাস ও বছরের হিসাবেই তা সহজ । জোতির্বিদ্যা না জানা মানুষও চাঁদ দেখে স্বাচ্ছন্দ্যে এ বিধানগুলো পালন করতে সক্ষম হয়। তাছাড়া চান্দ্রবর্ষের হিসাব অনুযায়ী হওয়ায় একটি ইবাদত বিভিন্ন মৌসুমে পালনের সুযোগ মুসলমানরা পান। শীত-গ্রীষ্মসহ সকল সবক’টি মৌসুমেই মুলসলামগণ রোজা পালন করতে পারেন। সকল ঋতুতেই উদ্যাপন করতে পারেন খুশির ঈদ।
গুরুত্বপূর্ণ এই হিজরী সন প্রবর্তিত হয় সাহাবায়ে কেরামের ঐক্যমতের ভিত্তিতে ৬৩৮ খ্রিষ্টাব্দে। ইসলামী খেলাফতের সীমানা তখন প্রায় অর্ধজাহান বিস্তৃত। ইরাকের কুফা নগরী থেকে খলীফাতুল মুমিনীন বরাবর একটি ঐতিহ্যবাহী পত্র আসে । পত্রটি প্রেরণ করেন কূফার গভর্নর বিশিষ্ট সাহাবী হজরত আবু মুসা আশ‘আরী রাযিআল্লাহু আনহু। এতে তিনি তদানিন্তন খলীফা হযরত উমর রাযিআল্লাহু আনহু এর দৃষ্টি আকর্ষণ করে উল্লেখ করেন, দরবারে খেলাফত থেকে প্রায়শই বিভিন্ন বিভিন্ন উপদেশ, পরামর্শ ও নির্দেশ সম্বলিত চিঠি-পত্র আমাদের কাছে আসে। তবে সেগুলোতে সনের উল্লেখ না থাকায় যথা সময়ে সেগুলো পালন ও কার্যকর করতে আমাদের বেশ অসুবিধায় পড়তে হয়।
এই গুরুত্ত্বপূর্ণ পত্রটি পাওয়ার পর হযরত উমর রাযিআল্লাহু আনহু নেতৃস্থানীয় সাহাবায়ে কেরামের একটি পরামর্শসভার আয়োজন করেন। মুসলমানদের জন্য একটি সতন্ত্র সাল প্রণয়নের জন্য শুরু হয় আলোচনা পর্যালোচনা। কোন বছরটি হবে ইসলামী বর্ষপুঞ্জির প্রথম বর্ষ- সে ব্যাপারে পরামর্শ চাইলে চারটি মত পাওয়া যায়। যথাক্রমে: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মের বছর, নবুয়ত প্রাপ্তির বছর, হিজরতের বছর এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওফাতের বছর।
হিজরতের মাধ্যমে প্রত্যক্ষভাবে হক-বাতিলের মধ্যে পার্থক্য সূচিত হয়েছে। হিজরতের থেকেই মুসলমানরা প্রকাশ্য ইবাদত ও সমাজ গঠনের রূপরেখা বাস্তবায়ন করতে পেরেছিলেন। প্রকাশ্যে আজান, নামাজ, ঈদ সবকিছু হিজরতের পর থেকেই শুরু হয়েছে। হিজরতের বছরই মসজিদে নববী নির্মিত হয়। যা মূলত ইসলামে প্রচার ও প্রসারের কেন্দ্র বা মারকায হিসেবে বিবেচিত। সর্বোপরি হিজরত ইসলামের ইতিহাসে সতন্ত্র একটি মাইল ফলক। তাই সাহাবয়ে কেরাম হিজরতের বছর থেকেই ইসলামী সালের গণনা শুরু করার সিদ্ধান্তে ঐক্যমতে পৌঁছেন। ঐতিহাসিক এই সিদ্ধান্তটি গৃহিত হয় হিজরতের ১৬ বছর পর।
ঐতিহাসিক বদর বিজয়, মক্কা বিজয় এবং বিদায় হজ্জসহ ইতিহাস ঐতিহ্য ও জাতীয় সমৃদ্ধির আরো অনেক ঘটনাই ছিল যা থেকে ইসলামী সাল গণনার সূচনা হতে পারত। কিন্তু বাহ্যত হিজরত মূলত মুসলমানদের কমজোরী শক্তিহীনতার প্রকাশ করে। তা সত্ত্বেও সাহাবায়ে কেরাম রাযি. সর্বম্মতভাবে এ বিষয়টিকেই ইসলামী বর্ষগণনার কেন্দ্রবিন্দু নির্বাচিত করেন। এটি সাহবায়ে কেরামের দূরদর্শিতা ও তীক্ষ্ণ মেধার সাক্ষর বহন করে।
হুদাইবিয়ার সন্ধির সাথে তুলনা করলেই বিষয়টিকে সহজে বোধগম্য হয়। সন্ধিচুক্তিটি বাহ্যত ছিল ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য পরাজয় বা অবমাননাকর। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা ছিল ‘ফাতহে মুবিন’ বা সমূহ বিজয়ের অবতরণিকা। ঠিক তেমনিভাবে বাহ্যিক দৃষ্টে হিজরতকে যেভাবেই দেখা হোক না কেন, কার্যত এটিই ইসলাম এবং মুসলমানদের উন্নতি অগ্রগতির সোপান সিঁড়ি হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। দ্বীনে মুহাম্মাদীর সকল প্রকার বিজয়, প্রচার ও প্রসারের উৎসমূল ছিল এই ঐতিহাসিক হিজরত। কালক্রমে সেগুলো বিকশিত হয়েছে মাত্র।
ইসলামী বছরের প্রথম মাস হবে কোনটি - এক্ষেত্রে যথাক্রমে রজব, রমজান, মহররম ও রবিউল আওয়াল এই চারটি মাসের নাম প্রস্তাবিত হলেও মহররম মাসই হবে হিজরী সনের প্রথম মাস এই মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লামের পূর্ব পুরুষ কিলাব বিন মুররার যুগ তথা ইসলাম আবির্ভাবের প্রায় দুইশ’ বছর পূর্ব থেকেই মুহাররম মাসটি বছরের প্রথম মাস হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছিলো। প্রচলিত ধারাটি ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক না হওয়ায় সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার সার্থে সেটিকে পূর্ববৎ বহাল রাখা হয়। তাছাড়া হিজরতের মূল পরিকল্পনা জিলহজ্জ মাসে অনুষ্ঠিত ‘আকাবার’ ২য় শপথ থেকে হয়, তাই জিলহজের পরবর্তী নতুন চাঁদ তথা মহররম মাস থেকে হিজরী সন গণনা শুরু হওয়া যুক্তিযুক্তও বটে।
প্রাক ইসলাম যুগ থেকেই মহররম মাসটি আরবদের কাছে মহিমান্বিত মাস হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এ মাসে যুদ্ধ বিগ্রহ নিষেধ। সন্মানের দিক বিবেচনায় এর নাম করণ হয় মহররম বা মহিমান্বিত মাস। দ্বিতীয় মাস সফর । যুদ্ধ নিষিদ্ধ তিনটি মাস শেষ হবার পর প্রাক ইসলাম যুগে আরবের লোকেরা ঘর বাড়ি প্রায় শূন্য করেই বেরিয়ে পড়ত এমাসে। তাছাড়া ওই সময়টি ছিল আরবের প্রধান অর্থকরিফসল খেজুর পাকার মৌসুম। তখন খেজুর পেকে হলুদ হত। তাই সে মাসের নাম রাখা হয় সফর। অর্থাত শূন্য (ঘর) বা হলুদ (শষ্য)-এর মাস।
আরবীতে ‘রবি’ অর্থ বসন্ত। আরবে বসন্তকাল দুই মাস জুড়ে হয়ে থাকে; রবিউল আওয়াল এবং রবিউল আখের। অর্থাত বসন্তের প্রথম ও শেষ মাস। যে জিনিসের গণনায় তিন আছে সে ক্ষেত্রে ‘সানী’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। এদুই মাসের পরে যেহেতু এ নামে আর কোনো মাস নেই তাই রবিউস সানী না বলে রবিউল আখের বলাই ভালো। অনেকের মতে তো ‘সানী’ শব্দ ব্যবহারের অবকাশই নেই।
শীতের মৌসুমে আরবে খুব বেশি ঠান্ডা নেমে আসে। সেখানে সাধারণত জমাদাল উলা এবং জমাদাল উখরা এ দুই মাসে শীত থাকে। আরবীতে জুমুদ অর্থ জমে যাওয়া। প্রচন্ড শীতে, কিম্বা প্রবল শৈত প্রবাহে সবকিছু প্রায় জমে জমে যায়। তাই এ দু’ মাসের এই নাম।
রজব হিজরী সনের সপ্তম মাস। প্রাকইসলামযুগ থেকেই আশহুরে হুরুম বা যুদ্ধ নিষিদ্ধ মাস হওয়ার কারণে তা সকলের কাছে মহিমান্বিত বিবেচিত হত। এ মাসের আরেকটি নাম হল ‘আসম’ বা বধির। মাসটি যুদ্ধাস্ত্রের ঝনঝনানি শুনতে পায় না বলে এর নাম আসম। এর পরের মাসের নাম শাবান। সংঘাত নিষিদ্ধ মাস শেষ হওয়ার পরের মাস এটি। এ মাসে আরবরা যুদ্ধ বিগ্রহে লিপ্ত হয়ে শতধা ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ত। তাই এমাসের নাম ‘শা‘ব’ (শাখা-প্রশাখা) থেকে উদগত শব্দ ‘শাবান’ দ্বারা করা হয়েছে।
চান্দ্র নবম মাস রমজান। ‘রমজ’ শব্দের অর্থ প্রখর তাপ, প্রচন্ড গরম। এমাসের নাম করণের সময় তা ছিল গররেম মৌসুম। তাই তার এ নাম। রমজান মাসে গুনাহের গান্দেগী জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে বান্দা বন্দেগীতে উদ্ভাসিত হয়। এদিক বিচারেও নামটি বেশ যুৎসই। হিজরী সনের দশম মাসের নাম শাওয়াল। ‘শাওল’ শব্দের অর্থ ক্ষিপ্রতা। এমাসে আরবরা সফর ও শিকারের উদ্দেশ্যে নিজ নিজ এলাকা থেকে বের হত। শিকারের সময় শিকারীর ক্ষিপ্রতা না থাকলেই নয়। সে সুবাদে তখন প্রায় সকল আরবের মধ্যেই শিকারে ক্ষিপ্রতা বিরাজ করতো। আরবদের সমকালীন অবস্থার দিকে লক্ষ করে এমাসের নাম রাখা হয়, শাওয়াল।
জিলক্বদ হিজরী সনের এগারোতম মাস। এ মাসটিতেও যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ। তাই ঘরে বসেই আরবরা এ সময়ে দিন কাটাত। তাই এর নাম জিলক্বদ বা ‘বসে থাকার মাস’। দ্বাদশ ও সর্বশেষ মাসটি হল জিলহজ্জ বা হজের মাস। মহিমান্বিত এমাসে পবিত্র হজ পালিত হয়। এদিক লক্ষ করেই এ মাসের নাম জিলহজ বা হজের মাস।
জাতি-ধর্ম ভেদে নববর্ষ উদ্যাপনের একটি প্রথা লক্ষ করা যায় অনেক পৃথিবীর অনেক জায়গাতেই। যেসব বর্ষপুঞ্জির ভিত্তি কারো জন্ম বা অন্য কোনো উৎসবকে কেন্দ্র করে সেসব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জাতি বা গোষ্ঠি বেশ ঘটা করে নববর্ষে উৎসব পালন করে। অনেক জাতি আবার নতুন বছর আসছে শুধু সেই আনন্দেই উচ্ছাসিত হতে থাকে। হিজরী বর্ষ কোনো গতানুগতিক বর্ষপঞ্জি নয়। এর ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে অভূতপূর্ব এক ত্যাগকে কেন্দ্র করে। যেন এই বর্ষ সংশ্লিষ্ট সকলে সারা বছর তো বটেই, বিশেষ করে নতুন বছরে দ্বীনের জন্য নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সীমাহীন ত্যাগের কথা স্মরণ করে এবং নিজেদের মধ্যে এর প্রতিফলন ঘটাতে পারে।
প্রতিটি নতুন হিজরীবর্ষ গোটা মুসলিম জাতিকে দীনের জন্য ত্যাগের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। মনে করিয়ে দেয় অনন্দ উৎসব নয়, বছর শেষে গেল বছরের আমলের জমা-খরচ মিলিয়ে দেখার পালা। সময় আসে দীনের জন্য কতুটুকু করা হল তার হিসাব-নিকাষ কষার। প্রস্তুতি নিতে হয় আগামীর জন্য। শুধু বছরের শুরু কেন, প্রতিটি নাতুন চাঁদে আমাদের জন্য ঈমান-ইসলামের মজবুতি ও আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি কামনায় প্রয়াসী হওয়ার হেদায়েত দেয়া হয়েছে। এজন্যই প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে প্রতিটি নতুন চাঁদ দেখার সময় দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন:
اللَّهُمَّ أَهِلَّهُ عَلَيْنَا بِالْيُمْنِ وَالْإِيمَانِ وَالسَّلَامَةِ وَالْإِسْلَامِ رَبِّي وَرَبُّكَ اللَّهُ - مسند أحمد -৩ / ১৭
অর্থাৎ : হে আল্লাহ! আপনি আমাদের জন্য এই চাঁদকে সৌভাগ্য ও ঈমান, শান্তি ও ইসলামের সঙ্গে উদিত করুন। আল্লাহই আমার ও তোমার রব। -মুসনাদে আহমাদ: ৩/১৭
আরএম/