পীর যুলফিকার আহমদ নকশাবন্দী
ব্যভিচার থেকে অনেকেই বেঁচে থাকতে পারে। কারণ, এটি করার জন্য পস্ন্যান ও আয়োজন লাগে। প্রথমত সঙ্গীর সম্মতি লাগে। দ্বিতীয়ত উপযুক্ত স্থান ও সুযোগের দরকার হয়। তৃতীয়ত মানুষের সামনে ধরা খেলে লাঞ্ছিত হতে হয়, তাই নির্জনতারও প্রয়োজন হয়। এজন্য ভদ্র ও সম্মানিতলোকেরা এতে কম জড়ায়।
পেশাদারনারীর সাথে ব্যভিচার করতে হলে টাকা-পয়সা পানির মত ঢালতে হয়। তাছাড়া এইডস সিফিলিস টাইপের যৌন রোগের ভয় তো আছেই।
পক্ষান্তরে কুদৃষ্টির গুনাহ করতে হলে এত কিছুর দরকার হয় না। এতে মানসম্মান যাওয়ার ভয় থাকে না। কারণ, কে কোন্ দৃষ্টিতে কার দিকে তাকাচ্ছে- এটা তো আল্লাহই ভালো জানেন। বৃদ্ধ লোকটি যে কি-না যৌনক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে, সেও খারাপ দৃষ্টিতে দেখতে পারে। বরং অনেক সময় সে গুনাহ না করতে পারার আফসোসেও কুরে কুরে জ্বলতে পারে।
কবির ভাষায়-
جوانىسےزيادہوقتپيرىجوشہوتاہے
بهڑكتاہےچراغصبحجبخاموشہوتاہے
‘অনেক সময় যৌবনের চাইতে বার্ধক্যের তেজ বেশি হয়,
(যেমন) নিস্তব্ধ ভোরে প্রদীপ জ্বলে ওঠে।’
অনেকে দেহের দিক থেকে বৃদ্ধ হলেও অন্তরের দিক থেকে সতেজ থাকে। এরা যৌবনের স্মৃতি সবসময় নিজেদের মাঝে খুঁজে ফিরে।
কবির ভাষায়-
پيرىتمامذكرجوانىكٹگئ
كياراتتھىكہايككہانىميںكٹگئ
‘যৌবনস্মৃতিতে চলে গেল গোটা বার্ধক্য,
কী সে রাত ছিল যে, এককাহিনীতেই শেষ হয়ে গেল।’
অনেকের এক পা চলে যায় কবরে, কোমরটা সোজা রাখতে পারে না, তবুও খুঁজে বেড়ায় হারিয়ে যাওয়া যৌবনকে।
কবির ভাষায়-
عہدپيرىميںجوانىكىامنگ
أهكسىوقتميںكيايادآيا
‘বৃদ্ধবেলায় যৌবনের উদ্দামতা,
আহ! কোন্ সময় কী যে মনে পড়ে গেল।’
তামাশার আরেকটি দিক হল, অনেক সময় নারীরা পরপুরুষকে ‘বুড়োমানুষ’ মনে করে পর্দা করে না, ফলে বুড়োমানুষটি কুদৃষ্টির গুনাহ সহজেই করে নিতে পারে। কামনালিপ্সু বৃদ্ধরা চুল সাদা করে ফেলে, কিন্তু অন্তর থাকে কলুষিত।
বিচারদিবসে সময়ের ভাষাতে বলবে-
ناكردهگناہوںكىبهىحسرتكىملےداد
يارب! اگرانكردهگناہوںكىسزاہے
‘না করা গুনাহগুলোর যে আফসোস, তারও আজ সাজা হবে।
প্রভু হে! যদি শুধু কৃত গুনাহগুলোর শাস্তি হত।’
হযরত থানবী রহ. বলেন, একবৃদ্ধকে আমি চিনতাম। অনেক কাজে তিনি ছিলেন আল্লাহভীরু। কিন্তু তিনি নিজে বলেছেন, তিনি কুদৃষ্টির রোগে আক্রান্ত। কুদৃষ্টির গুনাহ এতটাই ভয়াবহ। বুড়োমিয়া কবরের পাড়ে চলে গেছেন কিন্তু পুরনোরোগ তার সাথে লেগেই আছে।
শাইখুল হাদীস মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া রহ. বলেন, কুদৃষ্টি অত্যন্ত খতরনাক রোগ। এ বিষয়ে আমার নিজেরও একটা অভিজ্ঞতা আছে। আমার অনেক বন্ধু-বান্ধব যিকির ও মুজাহাদার প্রথম দিকে জোশ ও মজার ঘোরে থাকেন। কিন্তু কুদৃষ্টির কারণে ইবাদতের মজা হারিয়ে ফেলেন। পরিণামে ধীরে ধীরে ইবাদত ছেড়ে দেয়ার দিকে অগ্রসর হন।(আপবীতী খন্ড-০৬, পৃষ্ঠা- ৪১৮)
উদাহরণস্বরূপ, সুস্থ যুবকের যদি জ্বর হয়, ভালো হওয়ার নামও না থাকে তাহলে দুর্বলতার কারণে সে চলাফেরাতেও অক্ষম হয়ে পড়ে। কাজের প্রতি সে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। তার মন চায় বিছানায় পড়ে থাকতে।
অনুরূপভাবে কুদৃষ্টির রোগে আক্রান্তব্যক্তিও আধ্যাত্মিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। নেককাজ করা তার জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। কিংবা কথাটা এভাবেও বলা যেতে পারে যে, আমলের তাওফিক তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয়। নেককাজের নিয়তও করে, কিন্তু কুদৃষ্টির কারণে নিয়তে দুর্বলতা চলে আসে।
কবির ভাষায়-
تيارتهےنمازكوہمسنكےذكرحور
جلوهبتوںكاديكھكرنيتبدلگئ
‘জান্নাতিহূরের কথা শোনে নামাযের জন্যপ্রস্ত্তত ছিলাম,
মূর্তিগুলোর দাপানি দেখে নিয়ত পাল্টে গেল।’
(অনুবাদ ও সম্পাদনা- মাওলানা উমায়ের কোববাদী নকশবন্দী, মুহাদ্দিস, মাদরাসা দারুর রাশাদ, মিরপুর, ঢাকা, খতিব, বাইতুল ফালাহ জামে মসজিদ, মধ্যমনিপুর, মিরপুর, ঢাকা।)
আরএম/