বেলায়েত হুসাইন। ।
:কই যাবেন?
:ফরিদপুর হয়ে বোয়ালমারী।
:এইযে টিকিট নেন,এখনি আমাদের গাড়ি ছাড়বে।
:কি গাড়ি, টিকিটের দাম কতো?
:মাত্র দুইশো পঞ্চাশ।
:গাড়ির নাম তো বললেন না!
: জাকের পরিবহণ।
:চেয়ারকোচ?
: না, সেমি চেয়ার (নরমাল)।
:দেড়শো দিবো, হবে?
:হে…এই টাকায় বোয়ালমারী যাবেন? যাওয়া লাগবেনা যান(গালমন্দ...)।
:আচ্ছা, দেখি অন্যকোন গাড়ি পাই কিনা!
:আল্লাহর কসম আমাদের এই গাড়ি ছাড়া আর কোন গাড়ি নাই। ।
:দেখিনা! হাত ছাড়েন।
:এই মিয়া কই যান, দুইশো দেন আর টিকিট নেন।
: না আঙ্কেল, আমি দেড়শো হলে যাবো।
:সত্যিই, আপনারা খুবই খারাপ মানুষ, মানুষরে বিশ্বাস করেন না ( চোখ উল্টিয়ে)। বললাম না কোন গাড়ি নাই!
-গাবতলি বাস-স্ট্যান্ডের মুখে দাঁড়িয়ে আমার আর মধ্যবয়সী এক দালালের মাঝে এরকম কথাবার্তা হচ্ছিলো। কোনমতে দালালের কবজা থেকে ছুটে এসে কাউন্টারে ঢুকলাম। দেখি অনেকেই ‘বোয়ালমারী-বোয়ালমারী, ফরিদপুর-ফরিদপুর’ বলে যাত্রীদের ডাকছে। তখন দালালের ‘আল্লাহর কসম’ স্মরণ হলো।
আমি তিনশো টাকা দিয়ে নামকরা একটি চেয়ারকোচ বাসের টিকিট কাটলাম, যখনি গাড়ির দিকে রওনা হবো, পিছনে ফিরতেই দেখি দালাল নামক সেই সাক্ষাৎ দারোগা(!)। এবার তার দ্বিতীয় অভিযানের শিকার হলাম।
:মিয়া,এখান থেকে কেন টিকিট কাটলেন?
এখানে তো ঠিকই তিনশো দিছেন! আমি একশো কম বলেছিলাম-পছন্দ হয়নি। আসলেই আপনারা জাতিটাই খারাপ-এভাবে কয়েক মিনিট আরো একবার ভালোমন্দ কথার মিশেলে আমার জাত-গুষ্ঠি উদ্ধার করে ছাড়লো জাকের বাসের মাঝবয়সী দালালটি।
ক্লান্তিতে আমার তখন কিছু বলা বা করার অবস্থা ছিলোনা। আর এসব মানুষরে কিছু বলার চেয়ে মুখবন্ধ রাখাই সমীচীন মনে হয়। কারণ, একটি মাঝারি কথার বিনিময়ে চারটি মন্দ কথা হজম করা লাগে। তাই আল্লাহ! আল্লাহ! জপে দ্বিতীয়বারের জন্য কোনমতো দারোগা নামক দালালটির হাত থেকে রক্ষা পেলাম।
এভাবে এর আগেও অনেক দালালের রকমারি দালালীর খপ্পরে পড়েছি। অধিকাংশ সময়ে যা হয়-কাউন্টারে ঢোকার আগেই একসাথে আসসালামু আলাইকুম বলে কয়েকজন লোক নিকটে এসে খুব হামদর্দী দেখায়-ভাইজান আপনার খুব কষ্ট হচ্ছে, এদিকে দেন,এদিকে আসেন, ব্যাগ নিয়ে টানাটানি-কার আগে কে নিতে পারে।
আমাদের গাড়ি আগে ছাড়বে। অন্যজন বলে আমাদের গাড়ি এখনি স্টার্ট দিবে-আমাদেরটায় আসেন-এই নেন টিকিট।এক্ষেত্রে দেখা যায় বারোটার টিকিট কাটলে একটা বাজার পরেও গাড়ির একজন সংশ্লিষ্টকেও খুঁজে পাওয়া যায়না। কোথায় ড্রাইভার আর কোথায় সুপারভাইজার?
টিকিট বিক্রি করা সেই চতুর দালালকেও যে আর হারিকেন দিয়ে তালাশ করে খুঁজে বের করা যায়না। যদিওবা কদাচিৎ দালালের দেখা পাওয়া যায়,কিন্তু ভাবটা এমন দেখায় যেন, জন্মের পর থেকে আপনার সাথে তার কখনো সাক্ষাত তো দূরের কথা দেখাও হয়নি।
এছাড়াও, গাবতলি বাস-স্ট্যান্ডে অনেক ভদ্র যাত্রী অসংখ্যবার এমন অসহায় আক্রমণের শিকার হয়েছেন-একথা বহুবার শুনেছি। বাস-মালিক সমিতি ব্যাপারটা জানে কিনা আল্লাহই ভালো জানেন। না জানলে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরকে বিষয়টি মালিক-সমিতিকে অবগত করার অনুরোধ জানাই।
বাড়িগামী মানুষেরা মাস-মাস কষ্ট শেষে একটু স্বস্তির জন্য আপন পরিবারের কাছে ছুটে যায়। কিন্তু ফুরফুরে মেজাজটা বাসের দালালদের হস্তক্ষেপে যাত্রার সূচনাতেই নষ্ট হয়ে যায়-যার প্রভাব অনেকসময় পর্যন্ত থাকে।
তাই আমি সবশেষে বাস-মালিক সমিতিকে অনুরোধ করে বলি (যদি লেখাটি তাদের কারো নজরে পড়ে) আপনারা ব্যাপারটি নিয়ে ভাবুন এবং সহজ ও সুন্দরভাবে যাত্রীগণ আপনাদের সেবায় যাতে মুগ্ধ হয় সে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। আমরা সবাই সচেতন হলেই আমাদের দেশ সুন্দর হবে এবং একে অপরের প্রতি সম্মান দেখানোর আগ্রহটা বৃদ্ধি পাবে। আল্লাহ আমাদের কবুল করুন।
লেখক- মাদরাসা শিক্ষার্থী ও সংবাদকর্মী