সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান এবং জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ আর নেই। ঢাকা সিএমএইচে ১৭ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর রোববার সকাল পৌনে আটটার দিকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ছাড়েন। তার মৃত্যুতে বিভিন্ন ব্যক্তি, শুভাকাঙ্ক্ষী ও সংগঠন শোক প্রকাশ করছে। তার মৃত্যুতে স্মৃতিচারণ করলেন এরশাদের শাসনামলের ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সভাপতি মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাস।
১৯৮৬ সালের নির্বাচনে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে করলে জয়ী হই। পরে স্থানীয় ওলামায়ে কেরাম ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতৃবৃন্দের পরামর্শে আমি হুসাইন মুহম্মদ এরশাদের মন্ত্রী পরিষদে ধর্মমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করি। এই সুবাদে এরশাদ সাহেবের সঙ্গে দীর্ঘ একটা সময় অতিবাহিত হয়েছে আমার।
বিশেষকরে, আমি তার রাজনৈতিক জীবন অনেক কাছ থেকে দেখেছি। তার কর্মপদ্ধতি, বিচক্ষণতা ও দেশের জন্য নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ সব সিদ্ধান্ত বরাবর জাতির জন্য কল্যাণ বয়ে এনেছে।
১৯৮২ সালের ৭ নভেম্বর থেকে ১৯৮৩ সালের ৭ নভেম্বর-এর মধ্যে ৪৬০ উপজেলা পরিষদ সৃষ্টি করে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ করেছেন তিনি। তার এই সিদ্ধান্তের ফলে কয়েকটি গ্রামকে কেন্দ্র করে একটি করে শহরের জন্ম হয়েছে। ১৯৮৮ সালের বন্যার সময় শক্তহাতে দেশের মানুষকে আগলে রেখেছিলেন তিনি।
বিশেষত, দেশের মুসলিম ও ইসলাম ধর্মের জন্য অনেকে কাজ করেছেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি। শুক্রবারকে সাপ্তাহিক ছুটি ঘোষণা, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ঘোষণা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের বিল মওকুফ, জাকাত তহবিল ও ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের ভবন সম্প্রসারণ এবং সৌন্দর্যবর্ধনসহ এমন অনেক কাজের মাধ্যমে তিনি আমাদের কাছে চিরস্মরণীয়।
বিচারব্যবস্থা সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে রংপুর, যশোর, কুমিল্লা, বরিশাল, সিলেট এবং চট্টগ্রামে ৬টি হাইকোর্টের বেঞ্চ সম্প্রসারণ করেছিলেন। এছাড়াও বিচারব্যবস্থাকে আরও বেগবান করতে প্রতিটি উপজেলায় মুনসেফ কোর্ট স্থাপন করেন।
আমি তখন সংসদ সদস্য, নিজ চোখে তার এসব কাজ দেখতাম আর দেশের কল্যাণের জন্য দোয়া করতাম। তবে তার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে আমি খুব বেশিকিছু জানিনা। অনেক রাজনীতিবিদকে নিয়ে রিউমার ছড়ায়ং, তাকে নিয়েও এদেশে রিউমার কম হয়নি। তবে আমি সবসময় তার গঠনমূলক কাজগুলোকে উল্লেখ করি। তার মৃত্যুতে আল্লাহর কাছে দোয়া করব, তিনি যেন তাকে জান্নাতের সুশীতল ছায়ায় স্থান করে দেন। আমিন।
শ্রুতিলিখন: রকিব মুহাম্মদ
আরএম/