আহমদ সালেম নকি ও মাহমুদ সালমান জকি। জময সহোদর। বর্তমান সময়ে কওমি অঙ্গনে আলোচিত নাম। সম্মিলিত কওমি শিক্ষাবোর্ড আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ এর অধীনে তাকমীল (মাস্টার্স) কেন্দ্রীয় পরীক্ষার মেধা তালিকায় ১ম ও যৌথভাবে ২য় স্থান অধিকার করেছে দারুল উলূম হাটহাজারী মাদরাসার এই দুই ছাত্র। দাওরায়ে হাদীসের ১০টি বিষয়ে মোট ১০০০ নম্বারের পরীক্ষায় নকি পেয়েছে ৯৩৯ এবং জকি পেয়েছে ৯৩০ নম্বার।
দারুল উলূম হাটহাজারীর শীর্ষস্থান অর্জনের অবদান রাখায় জামিয়ার শিক্ষক-ছাত্ররা তাদের অভিনন্দন ও মোবারকবাদ জানাচ্ছে। সম্মিলিতভাবে ছাত্রজীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা ও দেশসেরা হওয়ার পর তাদের অনুভূতি জানালেন এই সহদোর। তাদের সঙ্গে আলাপচারিতায় ছিলেন আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকমের হাটাহাজারী প্রতিনিধি ইশতিয়াক সিদ্দিকী।
হাইয়াতুল উলয়ার শীর্ষস্থান অর্জন নিয়ে আপনাদের অনুভুতি কী?
সর্বপ্রথম মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি একমাত্র আল্লাহ তা'আলার অনুগ্রহে আমরা এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি আর যাদের দোয়া ও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অবদান এই অর্জন সম্ভব হয়েছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ আমাদের মন ছেয়ে গেছে। ফলাফল প্রকাশের পর মুহতারাম উস্তাদগণের দোয়া ও আন্তরিক মোবারকবাদ আর আত্মীয়-স্বজনের উচ্ছ্বাসভরা অনুভূতি আমাদের আনন্দিত করেছে।
তবে এই অর্জন অভীষ্ট লক্ষ্য নয়; ভবিষ্যতের উৎসাহ মাত্র। পরবর্তী লক্ষ্যসমূহে আত্মবিশ্বাস জুগিয়ে দু'জাহানের সফল ব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজেদের গঠন করার ক্ষেত্রে সাফল্য যদি আমাদের সারথী হয় তবেই তা সার্থক হবে। উম্মুল মাদারিস দারুল উলূম হাটহাজারী এবং আমাদের অভিভাবক শাইখুল ইসলাম আল্লামা আহমদ শফী দামাত বারকাতুহুমসহ আব্বু আম্মু ও সকল উস্তাদদের প্রতি এ অর্জনকে উৎসর্গ করে নিজেদের ধন্য মনে করছি।
শীর্ষস্থান অর্জন করার পেছনে কার কার অবদানকে বিশেষভাবে স্মরণ করছেন?
প্রথমেই দারুল উলূম হাটহাজারীর মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফীসহ সকল আসাতিযায়ে কেরামের কথা উল্লেখ করতে হয়। তাঁরা প্রেরণা জুগিয়েছেন ও উৎসাহ দিয়েছেন, সর্বোপরি উপযুক্ত পরিবেশ গঠনে সদা সচেতন ছিলেন।
পূর্ণ দায়িত্ববোধ, কর্তব্য ও নিষ্ঠার সঙ্গে আমাদের প্রতি যত্নবান ছিলেন আমরা সবসময় তা অনুভব করেছি। তেমনিভাবে সাফল্যের পেছনে নিয়ামক ভূমিকা পালন করেছেন পরিবারের সদস্যরা। পরম শ্রদ্ধেয় বাবা-মায়ের কথা বলাই বাহুল্য।
পরীক্ষা প্রস্তুতি বটেই, আমাদের পুরো শিক্ষাজীবনই তাঁদের নিবিড় পরিচর্যা ও নিপুণ তত্ত্বাবধানে কেটেছে। তারবিয়াত, অনুশাসন ও সর্ববিধ ব্যবস্থাপনায় তারা যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন তারা শুধু অতুলনীয় নয় ক্ষেত্রবিশেষে অকল্পনীয়ও বটে।
অধিকাংশ মূল্যবান পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দিয়েছেন মুহতারাম বড় ভাই, মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ ত্বকী। শ্রদ্ধেয় নানাজান আল্লামা মুফতি ইজহারুল ইসলাম দামাত বারকাতুহুম ও মুহতারাম মামাদের উৎসাহ ও প্রেরণাসহ অন্য সবার দোয়া হিতকামনা ভুলা সম্ভব নয়। আল্লাহ তাআলা সবাইকে জাজায়ে খায়ের দান করুন।
চলতি বছর কোথায় কী পড়ছেন?
বর্তমানে মুরুব্বিদের পরামর্শে আকাবির আসলাফের নির্বাচিত কিছু কিতাব মুতালাআ করছি। অল্প কিছু দিনের মধ্যে শায়খুল ইসলাম আল্লামা মুফতী তাকী উসমানী দামাত বারকাতুহুম এর সাহচর্যে কিছুকাল থাকার জন্য জামিয়া দারুল উলুম করাচি যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। মুহতারাম আব্বার তত্ত্বাবধানে মুফতি আজম ফয়জুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি এর ফতোয়া সংকলন 'ফতোয়ায়ে ফয়জিয়্যা'র অবশিষ্ট কাজে অংশগ্রহণ করছি।
আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী এবং কোন লাইনে খেদমত করতে আগ্রহী?
উলূমুল কুরআন, হাদিস ও ফিকহ তথা উলূমে শরীয়াহর সকল ক্ষেত্রে রুসুখ ও তাফাক্কুহ হাসিল করাই আমাদের শিক্ষাজীবনে অভিষ্ট লক্ষ্য। বিশেষ করে হাদিস ও ফিকহ নিয়ে দীর্ঘ পড়াশুনা ও গবেষণামূলক কাজে আমরা আগ্রহী। এছাড়াও সমসাময়িক নানান ফিতনা প্রতিরোধ ও বিভিন্ন দীনি প্রয়োজন পূরণে আমরা নিজেদের যোগ্য করে গড়ে তুলতে চাই। দীনের প্রয়োজনে যেকোনো খিদমতে শামিল হওয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালা আমাদের তৌফিকদাতা।
চলতি বছর দাওরায়ে হাদীস পড়ুয়াদের প্রতি আপনাদের পক্ষ থেকে যদি কোন পরামর্শ থাকে...?
বড় মোবারক সময় পার করছেন তারা। হাদিসে নববীর আলোকে জীবনগঠনের শ্রেষ্ঠ সুযোগ তাদের সামনে। এদিকে তাদের পূর্ণ মনোযোগী হওয়া উচিত। নিছক পরীক্ষাকেন্দ্রিক মানসিকতা পরিহার করে ইলমে হাদিসের সঙ্গে মুনাসাবাত গড়ে তুলতে হবে। এর জন্য চাই পরিশ্রম ও অধ্যবসায়।
ইখতেলাফি মাসাইলের দালাইল তো আছেই, জীবনের সকল পর্যায়ে কাজে আসবে এমন নির্দিষ্টসংখ্যক হাদিস নির্বাচন করে মুখস্থ করা বাঞ্ছনীয়। বছরের শুরু থেকেই নিয়মতান্ত্রিক মেহনত জারি রাখলে পরীক্ষায়ও সফলতা আসবে। এজন্য নিজেদের দুর্বল দিক চিহ্নিত করে সেসব কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করতে হবে। পরীক্ষা সফলতা তাদেরই প্রাপ্য যারা কিতাব ও দরসের হক আদায় করে।
আরএম/