সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
চিকিৎসকরা বছরে দুইবারের বেশি বিদেশ যেতে পারবেন না ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের

রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দীনের খেদমত করতে চান দাওরায়ে হাদীসে ৬ষ্ঠ স্থান অধিকারী সুহাইল

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মোস্তফা ওয়াদুদ
বিশেষ প্রতিনিধি

আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতুল কওমিয়া বাংলাদেশের অধীনে অনুষ্ঠিত দাওরায়ে হাদীস পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে ৩ জুন (বুধবার)। এতে সারাদেশের ছাত্রদের মাঝে মেধা তালিকায় ৬ষ্ঠ তম স্থান অধিকার করেছেন মাতার বাড়ী, মহেশখালী, কক্সবাজারে বেড়ে উঠা পটিয়া মাদরাসার মেধাবী ছাত্র সুহাইলুল কাদের। তার বাবার নাম মাওলানা ফয়জুল্লাহ ও মায়ের নাম জনাবা রুকেয়া বেগম। তার সাথে কথা বলেছেন আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোরের বিশেষ প্রতিনিধি- মোস্তফা ওয়াদুদ

আওয়ার ইসলাম: আপনার শিক্ষাজীবনের সূচনা কোথায় হয়?

সুহাইলুল কাদির: ছোটবেলায় মায়ের কাছে আমপারা পড়ার মাধ্যমে আমার শিক্ষা জীবনের শুরু। পাঁচ বছর বয়সে বাবার হাত ধরে বাড়ির পাশে মগড়েইল ইউনুছিয়া ফয়জুল উলুম মাদরাসায় নুরানীতে ভর্তি হই।

এরপর মাতার বাড়ী তাজবীদুল কুরআন দারুচ্ছুন্নাহ মাদরাসায় প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করি ও কাফিয়া পর্যন্ত পড়ি। মহেশখালীর জামিয়া আরাবিয়া গোরকঘাটায় মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করি। অবশেষে উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য ২০১৬ সালে ভর্তি হই জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ায়।

আওয়ার ইসলাম: আপনার পেছনের ক্লাসগুলোর রেজাল্টের বিবরণ দিবেন?

সুহাইলুল কাদির: আলহামদুলিল্লাহ, ছোট থেকে প্রতি ক্লাসে অধিকাংশ সময় ১ম হতাম। জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়াতে হেদায়া ক্লাসের বার্ষিক পরীক্ষায় ১ম স্থান অর্জন করেছি। জালালাইনের বার্ষিক পরীক্ষায় চট্টগ্রাম আঞ্জুমান ইত্তেহাদুল মাদারিস বোর্ডে ৫ম স্থান অধিকার করেছি।

আওয়ার ইসলাম: কখনো কোনো প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন?

সুহাইলুল কাদির: জ্বী, বাংলাদেশ তাহফিজুল কুরআন সংস্থার উদ্যোগে আয়োজিত 'হিফজুল হাদিস' বিষয়ক প্রতিযোগিতায় দুইবার অংশগ্রহণ করেছি। প্রতিযোগিতায় দুইশ হাদিস অনুবাদ ও ব্যাখ্যাসহ মুখস্থ প্রতিযোগিতা হয়েছে। সেখানে উভয় বছর ১ম স্থান অর্জন করেছি।

আওয়ার ইসলাম: মাদরাসায় ছাত্রভাইদের থেকে কেমন রেসপন্স পেতেন?

সুহাইলুল কাদির: অধিকাংশ ছাত্রভাইকে পেয়েছি আমার কল্যাণকামী হিসেবে। তারা আমাকে উৎসাহ দিতেন। বিভিন্ন বিষয়ে সাহস দিতেন।

আওয়ার ইসলাম: আপনি কোন বিষয়গুলো বেশি পড়েন?

সুহাইলুল কাদির: তাফসির, হাদিস ও ফিকাহ বেশি পড়ি। তবে ছোট থেকে ফিকাহর প্রতি আগ্রহ বেশি।

আওয়ার ইসলাম: পাঠ্যবই ছাড়া কোন কোন বই বেশি পড়েন?

সুহাইলুল কাদির: সিরাতের প্রতি ঝোঁক অনেক বেশি। আরবী সাহিত্য, বাংলা সাহিত্য চর্চা করতে ভালোবাসি। বিশেষ করে ইসলামিক ইতিহাস, আত্মজীবনী, সফরনামা বিষয়ক গ্রন্থাদি বেশি অধ্যয়ন করি।

আওয়ার ইসলাম: সারাদেশে ৬ নম্বর হওয়ার পর আপনার অনুভূতি কি?

সুহাইলুল কাদির: আমার অন্তর আল্লাহর কৃতজ্ঞতায় পরিপূর্ণ হয়ে আছে। আমি আমার রবের প্রতি কৃতজ্ঞ। আসলে পরীক্ষা মূল লক্ষ নয়। একটি উপলক্ষ মাত্র। এ ফলাফল আমার মূল যোগ্যতার মাঝে কোন হ্রাস-বৃদ্ধি করেনি। আমার মূল লক্ষ হল তাফাক্কুহ ফিদ-দীন অর্জন ও মুহাক্কেক আলেম হওয়া।

আওয়ার ইসলাম: আপনার পড়ার জন্য নির্দিষ্ট কোনো রুটিন ছিলো?

সুহাইলুল কাদির: রুটিন অবশ্যই ছিল। তবে সর্বদা চেষ্টা করতাম যেন সময় অপচয় না হয় ও অল্প সময়ে বেশি কাজ হয়।

আওয়ার ইসলাম: আপনার হাইয়া পরীক্ষায় সফলতার পেছনে মূল মেহনতের ধারা কী ছিলো?

সুহাইলুল কাদির: দরসে হুজুরদের তাকরীর আত্মস্থ করার চেষ্টা করতাম। প্রয়োজনে নোট করতাম। কিতাবের ইবারত হাশিয়াসহ পড়তাম। প্রয়োজনীয় শরাহ ও নোট সঙ্গে রাখতাম। ফিকহী এখতেলাফী মাসআলাগুলো দলিলসহ সংক্ষেপে লিখে বারবার পড়তাম।

আওয়ার ইসলাম: আপনার সফলতার পেছনে অবদান কার বেশি ছিলো?

সুহাইলুল কাদির: এটি অধমের প্রতি মাওলার বিশেষ অনুগ্রহ। আমার মা-বাবার দোয়া। জীবনের শুরু থেকে এ পর্যন্ত যাদের কাছে পড়েছি, এ সফলতার জন্য সকলের কাছে আমি ঋণী। যে ঋণ শোধ করার নয়। তবে এ তালিকার শীর্ষে তিনি, যার সুদক্ষ হাতে এ জামিয়া পরিচালিত হয়ে আসছে।

তিনি হলেন আল্লামা মুফতি আব্দুল হালীম বোখারী। বিশেষ করে আল্লামা আবু তাহের নদভীর উৎসাহ, আল্লামা শামসুদ্দীন জিয়ার তাওয়াজ্জুহ, মুফতি জসীমুদ্দীনের নেগরানী, মুফতি মনজুর সিদ্দীকর দিকনির্দেশনা, আল্লামা কাজী আখতার ও আল্লামা জাকারিয়া আল আজহারীর তত্ত্বাবধান আর আল্লামা রফিক আহমদ ও মুফতি আহমদুল্লাহসহ সকল উস্তাদদের দোয়াকে এ সফলতার কারণ বলে মনে করি।

হযরত আলী রা. এর বিখ্যাত উক্তি মনে পড়ে গেল, ‘যিনি আমাকে একটি অক্ষরও শিক্ষা দিয়েছেন, তিনি আমার মনিব। তিনি চাইলে আমাকে অন্যের কাছে বিক্রি করে দিতে পারেন।

আওয়ার ইসলাম: আপনি জীবনে কী হতে চান?

সুহাইলুল কাদির: আমি জীবনে একজন মুত্তাকী, মুহাক্কিক আলেম ও দীনের জন্য নিবেদিত প্রাণ খাদেম হতে চাই। যেন ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় জীবন পর্যন্ত সহিহ তরিকায় ইসলাম বাস্তবায়ন করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে পারি।

আওয়ার ইসলাম: আপনার সহপাঠিদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন?

সুহাইলুল কাদির: আমি তাদের জন্য একটি কথাই বলবো, 'বর্তমানে মুসলমানরা বিজাতিদের বহুমুখী ফাঁদে আটকে পড়ে নিজেদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ভুলে যেতে বসছে। তাই আমাদের উচিৎ, রাসূল সা. এর আদর্শ ও সাহাবায়ে কেরামের তরিকায় নিজের জীবনকে রাঙানো।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ