আওয়ার ইসলাম: প্রতিবছর জুন-জুলাই থেকে অক্টোবর-নভেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপ দেখা দেয়। স্বভাবতই শিশুর ডেঙ্গু জ্বর হলে বাবা-মা অস্থির হয়ে যান। শুরু করেন বাচ্চাকে নিয়ে হসপিটালে ছুটোছুটি।
অনেকেরই ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে ভুল ধারণা রয়েছে। ডেঙ্গু হলেই যে তার আলাদা কোন চিকিৎসা শুরু করতে হবে অথবা প্লেটলেট কমে গেলেই রক্ত বা স্যালাইন দিতে হবে, তা নয়। কিছু সাবধানতা অবলম্বন করলেই শিশুকে ডেঙ্গু থেকে রক্ষা করা সম্ভব। সব ডেঙ্গু জ্বরেই জটিলতা দেখা দেবে তা নয়। দুদিনেই জ্বর ভালো হয়ে যেতে পারে। তবে জ্বরের পরের ৫ থেকে ৬ দিন সাবধান থাকতে হয়।
শিশুর ডেঙ্গু জ্বরে করণীয়: অন্যান্য জ্বরের মতই ডেঙ্গু জ্বর হলে বাচ্চার গা মুছে দেবেন। প্রচুর পানি পান করাবেন। তবে একটু একটু করে। সেই সাথে তরল খাবার যেমন, ডাবের পানি, স্যুপ, শরবত বেশি বেশি করে দেবেন।
বমিভাব দূর করার জন্য প্রয়োজনে সেভেন আপ বা স্প্রাইট গ্লাসে ঢেলে আগে গ্যাসটুকু বের হয়ে যেতে দেবেন। গ্লাসে বুদবুদ ওঠা বন্ধ হয়ে গেলে ঔষধের মতো করে এক চামচ এক চামচ করে ১০-১৫ মিনিট পর পর খাওয়াবেন। এর ফাঁকে ফাঁকে এক চামচ করে খাবার খাওয়াবেন।
বাচ্চাকে যতটা সম্ভব বিশ্রামে রাখতে চেষ্টা করবেন। দৌড়ঝাপ না করে ও গায়ে যেন ঘাম বসে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। গা ঠান্ডা রাখতে ও জ্বর কমাতে মাথায় পানিপট্টি দিতে হবে। কিন্তু অতিরিক্ত পানিযুক্ত ভেজা গামছা দিয়ে গা মোছাবেন না। এতে ঠান্ডা লেগে জ্বর আরো বেড়ে যাবে।
পানিতে গামছা বা পাতলা কাপড় ভিজিয়ে ভালো করে চেপে পানি ঝরিয়ে সেই কাপড় দিয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত বার বার করে মুছে দেবেন। স্বাভাবিক গোসল বন্ধ করবেন না, প্রয়োজনে কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করাবেন।
জ্বর যদি ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি হয় তাহলে প্যারাসিটামল সিরাপ খাওয়াবেন ছয় ঘন্টা পর পর। তবে অপ্রয়োজনে বা জ্বর না মেপেই ওষুধ খাওয়াবেন না। অপ্রয়োজনে প্যারাসিটামল বা ক্লোফেনাক জাতীয় বা অন্য কোন NSAID জাতীয় ব্যথার ঔষধ; আবারও বলছি, ভুলেও খাওয়াবেন না।
এগুলো শরীরের প্লেটলেটের উপর বিরূপ প্রভাব (প্লেটলেট এগ্রিগেশনে বাঁধা দেয়া) ফেলে এবং হঠাৎ ব্লিডিং শুরু হতে পারে ও কিডনি বিকল করে দিয়ে পরিস্থিতি আরো জটিল হতে পারে। তবে ব্যথা বেশি হলে টকজাতীয় খাবার যেমন লেবু, কমলা, জাম্বুরা, আমড়া ইত্যাদি ফল খাওয়ালে উপকার পাবে। জ্বর বেশি হলে গা মুছিয়ে ঠান্ডা রাখতে হবে।
অনেকসময় প্যারাসিটামল দেয়ার পরও জ্বর কমতে চায় না। তাই জ্বর খুব বেশি হলে (১০৩°F – ১০৫°F), সাপোজিটরি ব্যবহার করতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে, একটা সাপোজিটরি ব্যবহারের ৮ ঘন্টার মধ্যে আর নতুন করে সাপোজিটরি দিতে পারবেন না। সারাদিনে তিনবারের বেশি সাপোজিটরি ব্যবহার করা যাবে না।
কিছু সতর্কতা: জ্বর অবস্থায় বাচ্চারা খেতে চায় না। সেজন্য খাবার নিয়ে জোরাজুরি না করে যতটা সম্ভব পানি ও তরল খাবার অল্প করে বার বার খাওয়াবেন।
বাচ্চা কিছুই খায় না, এটা এক জাতীয় সমস্যা। শিশু খেতে চায় না আর খেতে পারে না এক জিনিস নয়। যে শিশু ইচ্ছা করে খাচ্ছে না তাকে বুঝিয়ে খাওয়ানো যায়। কিন্তু যে শিশু খেতে পারছেনা, তার চিকিৎসা প্রয়োজন।
অনেকে বাচ্চাকে স্যালাইন দেয়ার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন। বাচ্চাকে কতটুকু স্যালাইন দেয়া হবে তার একটি নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। এগুলো কিছু শারীরিক লক্ষণ ও রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টের উপর নির্ভর করে। তাই ডেঙ্গু হলেই অযথা রক্ত পরীক্ষা করা হয় না।
অপ্রয়োজনে স্যালাইন দিলে বা প্লেটলেট ট্রান্সফিউজ করলে শরীরে অতিরিক্ত পানি জমে উল্টো শিশুর শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। অনেকসময় শিশু মারাও যেতে পারে। কাজেই আতঙ্কিত না হয়ে বরং ডেঙ্গু সিজনে যেন মশা বংশবৃদ্ধি না করতে পারে সে ব্যবস্থা নিন। বাসার ভেতর ও আশেপাশে পরিস্কার পানি জমে এমন কিছু রাখবেন না।
গাছের গোড়া, টব, এসি, বালতির পানি, ডাবের খোসা, ফ্রিজের তলা পরিস্কার বা পানিশূন্য রাখুন। জানালায় নেট, ঘরে মশারী, কয়েল, গায়ে রেপেলেন্ট ব্যবহার করুন। ডেঙ্গু মশা দিনের বেলা যেন না কামড়াতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।
-এএ