সুহাইলুল কাদের
এলাকার চারজন যুবক নিয়ে বসেছিলাম মসজিদে। চৌদ্দ, পনের বা ষোলো হবে তাদের বয়স। দিন মজুরি করে রুজি জোগাড় করা তাদের কর্ম। দীনী বিষয়ে কথা বলছি। ঈমান ও আমলের আলোচনা করতে গিয়ে রাসূল সা. এর প্রসঙ্গ এল । তাদেরকে জিজ্ঞেস করলাম, আমাদের নবির নাম কী?
চারজনের দু’জন কাঁচুমাচু হয়ে বলল, জানি না। আমি মনে করতাম সাধারণ যুবসমাজ অজ্ঞ; দীন বিষয়ে তেমন জ্ঞান রাখে না। কিন্তু একথা কোনদিন ভাবিনি যে -তারা আমাদের প্রিয় নবি মুহাম্মদ সা. এর নাম পর্যন্ত জানে না। একটু আগে বেড়ে বললাম আচ্ছা, আমরা যে কালিমা পড়ে মুসলমান হয়েছি, ঐ-কালেমাটা বলতো?
আপনি আশ্চার্যান্বিত হলে হতে পারেন, নিরেট সত্য হল তাদের একজন কালেমা জানে না; আর দু’জন কোনমতে কালেমা পড়তে পারে কিন্তু অর্থ জানে না! আহ্হা, কালেমা জানে না, কালেমার অর্থ বুঝে না অমন মুসমিম আর অমুসলিমের মাঝে পার্থক্য কোথায়?!
তেমনি আরেকটি তিক্ত অভিজ্ঞতা আমার আছে। গত রমজানের আগের রমজান। আমরা ছিলাম নোয়াখালী চিল্লার জামাতে। এক মসজিদে জন দশেক যুবক নিয়ে কথা বলছিলাম। কথা প্রসঙ্গে জানতে চাইলাম, চার খলিফার নাম কী?
বুকভরা বেদনা নিয়ে বলতে হচ্ছে, তাদের অধিকাংশ সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। অথচ তাদের অনেকে স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করে। বহুরৈখিক জ্ঞান ও আধুনিক বিশ্বের সব খবর জানে।
আমাদের যুবসমাজ দীন নিয়ে খুব কম সচেতন। বরং তারা দীন থেকে যোজন-যোজন দূরে। যার ধরুন সিংহভাগ যুবক পশ্চিমা বিষাক্ত সংস্কৃতির ছোবলে আক্রান্ত। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, তাদের কাছে পশ্চিমা কালচার রাসূল সা. এর সুন্নতের ছেয়ে অধিক প্রিয়! যাদের কাছে কোন ক্রিকেটার বা ফুটবলারের নাম জিজ্ঞেস করলে তরিৎ উত্তর দিয়ে দিবে।
কিন্তু কুরআনের সহজতর কোন সূরা বা নামাজের কোন দোয়া জানতে চাইলে সঠিক উত্তর দিতে পারবে না। ইসলামী ইতিহাস, আদব-চিষ্টাচার ও মুয়ামালা-মুয়াশারা সম্পর্কে জানাশোনা তো শূন্যের কোটায়।
আমাদেরকে যুবকদের নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। সভা-সম্মেলনের ফলে দীনী কিছু কথা শুনা, সত্যকে জানা ও সমকালীন ফিতনা সম্পর্কে অবগত হওয়া ইত্যাকার ফায়দা হচ্ছে। কিন্তু ইসলামের মৌলিক জ্ঞান অর্জনের জন্য তা কক্ষনো যথেষ্ট নয়। দাওয়াত ও তাবলীগের উসিলায় দুনিয়া-মুখী মানুষ আখেরাত-মুখী হচ্ছে; বাজার-মুখী মানুষ মসজিদ-মুখী হচ্ছে।
কিন্তু কুরআন তেলাওয়াত সহিহ-শুদ্ধ করার জন্য, দীনের মৌলিক বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ জ্ঞান অর্জনের জন্য তাবলীগের চিল্লা যথেষ্ট নয়। তাই দেখা যায়, অনেক তিন চিল্লা লাগানো সাথীর সূরা-কেরাত মখরজ-সেফাতের বিচারে শুদ্ধ নয়। জরুরী মাসআলা বিষয়ে তার সঠিক জ্ঞান নেই।
দাওয়াত-তাবলিগ, সভা-সম্মেলনের দ্বারা স্ব-স্ব স্থানে প্রচুর ফায়দা হচ্ছে। তার পাশা-পাশি আগ্রহী যুবক -যারা ওয়াজ-মাহফিল, দাওয়াত ও তাবলীগে কিংবা অন্যকোন উসিলায় দীনের প্রতি ঝুঁকেছে- তাদের যথাযথ ফায়দার জন্যে যদি মসজিদ-সাদরাসার অধীনে বিশুদ্ধ কুরআন ও দীনের মৌলিক জ্ঞান শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, তাহলে অধিকাংশ যুবক ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ থাকবে না। আর আমরা পশ্চিমাদের বুদ্ধিভিত্তিক যুদ্ধে পরাজিত হবে না।
মুরুব্বিদের পরামর্শ অনুযায়ী তার রূপরেখা তৈরি করা যেতে পারে। কোর্সভিত্তিক করে পুরো বছর তা চালু রাখতে হবে। ফলে যারা যে সময়ে ফ্রি থাকে উক্ত কোর্সে ভর্তি হয়ে ইসলাম সম্পর্কে জানতে পারবে। বিশুদ্ধ কুরআন শিখতে পারবে। ফলে দীনের মৌলিক আকদা-বিশ্বাস তাদের অহন্তরে প্রোথিত হবে। জীবন চলার পাথেয় সংগ্রহ হবে।
লেখক: ছাত্র, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম