মাওলানা ইউসুফ নূর
বাংলাদেশ লেখক সাংবাদিক এসোসিয়েশন কাতার আয়োজিত ইসলামের দৃষ্টিতে সাংবাদিকতা শীর্ষক সেমিনারে পঠিত প্রবন্ধ পাঠ করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক আমিনুল হক। প্রধান অতিথি ছিলেন কাতারস্হ বাংলাদেশ দূতাবাসের অন্যতম সচিব একে এম মনিরুজ্জামান।
গত ২৬ মে ইসলামের দৃষ্টিতে সাংবাদিকতা শীর্ষক সেমিনারে আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ কমিউনিটি কাতারের সভাপতি প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন আকন, কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মাওলানা হুসাইন মুহাম্মদ নাইমুল হক, কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড,ইসরাত হোসেন, বাংলাদেশ স্কুল এন্ড কলেজের প্রভাষক আবদুল ওয়াকিল প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে কাতারে কর্মরত বাংলাদেশী গণমাধ্যমের প্রতিনিধি ও সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন। আওয়ার ইসলামের সম্মানিত পাঠকদের জন্য প্রবন্ধটি প্রকাশ করা হলো।
বর্তমান তথ্যপ্রবাহ ও তথ্যায়নের যুগে সর্বাধিক প্রচলিত ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও পেশার নাম সাংবাদিকতা। ইসলাম পরিপূর্ণ জীবন বিধান। সাংবাদিকতা বিষয়ে রয়েছে ইসলামের সুস্পষ্ট বিধান ও নীতিমালা। এর উপর আলোকপাত করার জন্যই বক্ষমান নিবন্ধের অবতারণা।
সাংবাদিকতার সংজ্ঞা: উইকিপিডিয়ায় সাংবাদিকতার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে- সাংবাদিকতা হল বিভিন্ন ঘটনাবলী, বিষয়, ধারণা, ও মানুষ সম্পর্কিত প্রতিবেদন তৈরি ও পরিবেশন, যা উক্ত দিনের প্রধান সংবাদ এবং তা সমাজে প্রভাব বিস্তার করে। এই পেশায় শব্দটি দিয়ে তথ্য সংগ্রহের কৌশল ও সাহিত্যিক উপায় অবলম্বনকে বোঝায়। মুদ্রিত, টেলিভিশন, বেতার, ইন্টারনেট, এবং পূর্বে ব্যবহৃত নিউজরিল সংবাদ মাধ্যমের অন্তর্গত।
ইসলামে সাংবাদিকতা- সাংবাদিকতা’ শব্দটি এসেছে সংবাদ থেকে, যার ইংরেজি প্রতিশব্দ হল নিউজ এবং আরবী প্রতিশব্দ হল খবর, হাদিস, কিসসা বা নাবা। এই নাবা থেকেই নবি। নবি শব্দের অর্থ সংবাদদাতা, সংবাদ বাহক, দূত ইত্যাদি। এই দৃষ্টিতে প্রত্যেক নবিই একেকজন সাংবাদিক তা বলা যায়। কুরআন ও হাদিসে ’নাবা’ শব্দটি অনেকবার এসেছে। ৩০তম পারার প্রথম সূরাটির নাম ‘আন্নাবা’ তথা সংবাদ।
মহানবি সা. এর যত বাণী রয়েছে সেগুলোকে খবর বা সংবাদ বলা হয়েছে। তিনি সাহাবিদের উপদেশ দিতে গিয়ে এভাবে উল্লেখ করেছেন, “আমি কি তোমাদেরকে এমন সংবাদ দিব না যার উপর আমল করলে তোমরা জান্নাতে যেতে পারবে?” যেহেতু প্রত্যেক নবি-রাসুল আল্লাহর দেয়া সংবাদ পৃথিবীর মানুষদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন সেহেতু তাঁরা মূলত ইসলামি সাংবাদিকতা তথা ইসলামের সংবাদ কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
আরো বুঝা গেল, সাংবাদিকতা এক মহান, মহৎ, মর্যাদাশীল ও দায়িত্বপূর্ণ পেশা। ইসলামি সাংবাদিকতার মূল ভিত্তি- ইসলামে সাংবাদিকতার গুরুত্ব অপরিসীম। দাওয়াত তথা আল্লাহর দিকে মানুষকে আহ্বান করা ইসলামের অন্যতম ইবাদত। আর সাংবাদিকতা কিছুতেই দাওয়াত বিমুুক্ত হতে পারে না।
তাই ইসলামে সাংবাদিকতার মূল ভিত্তি তিনটি- এক. 'দাওয়াত ইলাল খাইর' তথা কল্যাণের পথে আহ্বান। দুই. সৎ, সত্য ও ন্যায়ের আদেশ। তিন. অসৎ, অসত্য ও অন্যায় থেকে বাধা প্রদান।
ইসলামি সাংবাদিকতার নীতিমালা
আমানত বা বিশ্বস্ততা রক্ষা করা: ইসলামে সাংবাদিকতা একটি আমানত। আর এর দাবী হচ্ছে, যেকোনো তথ্য ও সংবাদকে বস্তুনিষ্ঠভাবে গণমাধ্যমে তুলে ধরা। নিজস্ব চিন্তা কিংবা দল-মতের রংচং মাখিয়ে সংবাদকে আংশিক বা পুরোপুরি পরিবর্তন করে উপস্থাপন করা ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম।
আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَقُولُوا قَوْلًا سَدِيدًا হে ইমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় করো এবং সঠিক কথা বলো- (সুরা আল আহজাব-৭০)।
আমানতের খেয়ানত ইসলামে কঠোরভাবে নিষেধ আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تَخُونُواْ اللّهَ وَالرَّسُولَ وَتَخُونُواْ أَمَانَاتِكُمْ وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ হে ঈমানদারগণ, খেয়ানত করোনা আল্লাহর সাথে ও রসূলের সাথে এবং খেয়ানত করো না নিজেদের পারস্পরিক আমানতে জেনে-শুনে। (সুরা আল আনফাল-২৭)
খবরের সত্যতা যাচাই: ইসলামে সততা ও সত্যবাদীতার গুরুত্ব অপরিসীম। মিথ্যা বলা মহাপাপ বা কবিরা গুনাহ। আনাস রা. বলেন, سُئِلَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَنِ الْكَبائِرِ قَالَ: (الإِشْراكُ بِاللهِ، وَعُقوقُ الْوالِدَيْنِ، وَقَتْلُ النَّفْسِ، وَشَهادَةُ الزّورِ রাসুল সা. কে কবিরা গুনাহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হল। তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করা, মা-বাবার অবাধ্য হওয়া। কাউকে হত্যা করা আর মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া। বুখারি।
তাই সংবাদের তথ্য যাচাই ও সত্যতা নিরূপণ করা সাংবাদিকের অপরিহার্য কর্তব্য। শোনা কথা বা ব্যক্তি বিশেষের দেয়া তথ্যের উপর নির্ভর করে সংবাদ পরিবেশন জায়েয নয়। মহান আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن جَاءكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَأٍ فَتَبَيَّنُوا أَن تُصِيبُوا قَوْمًا بِجَهَالَةٍ فَتُصْبِحُوا عَلَى مَا فَعَلْتُمْ نَادِمِينَ হে মুমিনগণ, যদি কোনো পাপাচারী তোমাদের কাছে কোনো বার্তা নিয়ে আসে, তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখবে। যাতে অজ্ঞতাবশত তোমরা কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতি সাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে যাতে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য তোমাদের অনুতপ্ত হতে না হয়'- (সুরা আল হুজুরাত-৬)।
মহানবি সা. বলেছেন, كَفَى بالمَرْءِ كَذِبًا أَنْ يُحَدِّثَ بِكُلِّ مَا سَمِعَ 'যা শুনবে, তা-ই (যাচাই করা ছাড়া) প্রচার করা মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য যথেষ্ট- (মুসলিম শরিফ)।
তথ্য গোপন রোধ: ব্যক্তি স্বার্থ, দলীয় স্বার্থ কিংবা নিজস্ব চিন্তা-চেতনা বিরোধী হওয়ায় অনেকে প্রাপ্ত তথ্য গোপন করে থাকে। নিউজ রুমে অনেক নিউজ 'কিল' করা হয়। এটি ইসলাম সমর্থন করেনা। সত্য ও সাক্ষ্য গোপন করা আল কুরআনের দৃষ্টিতে অসুস্থ মনমানসিকতার পরিচায়ক। আল্লাহ বলেন, وَلاَ تَكْتُمُواْ الشَّهَادَةَ وَمَن يَكْتُمْهَا فَإِنَّهُ آثِمٌ قَلْبُهُ আর তোমরা সাক্ষ্য গোপন করো না, আর যে ব্যক্তি তা গোপন করে, অবশ্যই তার অন্তর পাপী' (সুরা আল বাকারা-২৮৩)।
প্রিয় নবি সা. ইরশাদ করেছেন, نضَّرَ الله عبدًا سَمِع مقالتي فوعاها، فبَلَّغها مَن لَم يَسْمعها ‘আল্লাহ ওই ব্যক্তির চেহারা উজ্জ্বল করুন; যে আমার কথা শুনে অতঃপর তা হুবহু ধারণ করে অবিকল অন্যের কাছে পৌঁছে দেয়’ (তিরমিজি শরিফ)।
ব্যক্তিস্বার্থে কাউকে দোষারোপ করা যাবে না: আক্রোশ তাড়িত হয়ে কাউকে হেয় করার মানসে তার ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করা খুবই অন্যায়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ كُونُواْ قَوَّامِينَ لِلّهِ شُهَدَاء بِالْقِسْطِ وَلاَ يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَآنُ قَوْمٍ عَلَى أَلاَّ تَعْدِلُواْ اعْدِلُواْ হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর উদ্দেশে সাক্ষ্যদানের ব্যাপারে নীতিবান থাকবে এবং কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ তোমাদের কখনো যেন সুবিচার বর্জনে প্ররোচিত না করে- (সুরা মায়েদা : ৮)।
ব্যক্তি অধিকার ও জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট না হলে কারো দোষ-ক্রটি জনগণের সামনে তুলে ধরার অনুমতি ইসলাম দেয় না। বরং প্রিয় নবী (সাঃ) মানুষের ব্যক্তিগত দোষ-ক্রটি গোপন রাখতে উৎসাহ দিয়েছেন।
তিনি ইরশাদ করেছেন مَنْ سَتَرَ أَخَاهُ الْمُسْلِمَ فِي الدُّنْيَا سَتَرَهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ فِي الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ যে ব্যক্তি কোন মুসলমান ভাইয়ের দোষ-ক্রটি গোপন রাখে, আল্লাহ তায়ালা দুনিয়া ও আখেরাতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন। (বুখারি ও মুসলিম)
মনে রাখা দরকার, কোন ব্যক্তির দোষ তার অগোচরে বর্ণনা করার নাম হল গীবত। গীবত বা পরনিন্দা মহাপাপ। কুরআনে একে মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সাথে তুলনা করা হয়েছে।
হাদিস শরীফে গীবতকে ব্যাভিচারের চেয়েও মারাত্মক বলা হয়েছে । আর অপবাদের গুনাহ এর চাইতেও ভয়াবহ । অতএব প্রত্যেক সাংবাদিককে কারো ব্যাপারে নেতিবাচক সংবাদ প্রচার করার আগে অনেকবার চিন্তা করা উচিত ।
তবে ব্যক্তির দোষ-ত্রুটি যদি এমন পর্যায়ের হয় যে, তার দ্বারা অন্য ব্যক্তি, সমাজ কিংবা রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে তার অত্যাচার, দুর্নীতি ও প্রতারণা থেকে জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে তার আসল চেহারা তুলে ধরতে অসুবিধা নেই। এ বিষয়ে ইসলাম বিশেষ ছাড় দিয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, لاَّ يُحِبُّ اللّهُ الْجَهْرَ بِالسُّوَءِ مِنَ الْقَوْلِ إِلاَّ مَن ظُلِمَ ‘আল্লাহ মন্দ কথার প্রচার-প্রসার পছন্দ করেন না, কিন্তু যার ওপর জুলুম করা হয়েছে (তার কথা ভিন্ন)- (সুরা নিসা-১৪৮)।
তাফসিরবিদ আল্লামা মুজাহিদ (রহ.) বলেন, এ আয়াতের উদ্দেশ্য হলো, নিপীড়িত জনতার সপক্ষে গিয়ে জালিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা এবং বিষয়টি জনসম্মুখে প্রকাশ করা বৈধ।
সত্য প্রকাশে আপোস নয়: অপশক্তির কাছে মাথা নত না করে নির্ভিকচিত্তে সংবাদ পরিবেশন করাই ইসলামের দাবি। রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, إن من أعظم الجهاد كلمة عدل عند سلطان جائر অত্যাচারী শাসকের সামনে ন্যায়বিচারের বাণী তুলে ধরা বড় জিহাদ। (তিরমিজি)
মহানবি সা. তার সাথীদের এই আদর্শেই গড়ে তুলেছিলেন। হযরত মুয়াজ রা. বলেন, রাসুল সা. আমাকে বলেছেন, قل الحق ولو كان مراً، لا تأخذك في الله لومة لائم হে মুয়াজ, তুমি সত্যই বলবে, যদিও তা তিক্ত হয়। আল্লাহর ব্যাপারে কোন নিন্দুকের নিন্দাকের নিন্দা যেন তোমাকে প্রভাবিত না করে ।
সত্য প্রকাশে আপসহীনতাই একজন আদর্শ সাংবাদিকের মৌলিক বৈশিষ্ট। নতজানু সাংবাদিক দেশ, জাতি ও গণমাধ্যমের বড়শত্রু। ইসলাম সাংবাদিকের সত্য বলার অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে । তাই সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে জাতির বিবেক সাংবাদিকদের ভূমিকা হবে আপোসহীন।উচ্চারিত হবে তাদের কন্ঠে তাদেরই অগ্রজ সাংবাদিক বিদ্রোহী কবির শ্লোগান ‘অসত্যের কাছে কভূ নত নাহি হবে শীর, ভয়ে কাঁপে কাপুরুষ লড়ে যায় বীর’ স্বৈরাচার বান্ধব মিডিয়া নয়, পশ্চিমা বিশ্বে গণমাধ্যম মিডিয়া মোগল ও পুঁজিপতিদের আজ্ঞাবহ এবং সমাজতান্ত্রিক দেশে মিডিয়া রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত।
বর্তমানে তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশে বিশেষ রাজনৈতিক দল ও স্বৈরশাসকের তল্পিবাহক সংবাদ মাধ্যমের ছড়াছড়ি। মিডিয়ার নৈতিকতা ধ্বসের বড় প্রমান এটি। আল কুরআন এ ব্যাপারে কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছে। মহান আল্লাহ বলেন, وَلاَ تَرْكَنُواْ إِلَى الَّذِينَ ظَلَمُواْ فَتَمَسَّكُمُ النَّارُ 'যারা অত্যাচার করেছে, তোমরা তাদের প্রতি ঝুঁকে পড়ো না; অন্যথায় জাহান্নামের আগুন তোমাদের স্পর্শ করবে’- (সুরা হুদ- ১১৩)।
তাই পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদ বর্জন এবং নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন সাংবাদিক সমাজের কর্তব্য। অনুমান নির্ভর সংবাদ নয়: কোনো বিষয়ে সংবাদ পরিবেশনের আগে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সঠিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা ইসলামী শরীয়ার অন্যতম বিধান।
সুস্পষ্ট প্রমাণ ছাড়া শুধু অনুমান ও জনশ্রুতি নির্ভর সংবাদ পরিবেশন করা প্রচলিত ও ইসলামী সাংবাদিকতার নীতিমালার পরিপন্থী। এ বিষয়ে আল্লাহর নির্দেশ- وَلاَ تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولـئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْؤُولاً ‘যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তার অনুসরণ করো না; নিশ্চয়ই কান, চোখ, অন্তর- এগুলোর প্রতিটি সম্পর্কে কৈফিয়ৎ তলব করা হবে’- (সুরা বনি ইসরাঈল-৩৬) ।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيرًا مِّنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ মুমিনগণ, তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ। (সূরা আল হুজরাত-১২) গুজব ও মিডিয়া সন্ত্রাস কাম্য নয় সংবাদ কখনো গুজবের জন্য হতে পারেনা, এবং তা হতে পারেনা কাউকে বিভ্রান্ত বা প্রতারণা করার জন্য।
গুজব ও মিডিয়া সন্ত্রাসের কারণে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে , সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয় এবং দেশ জুড়ে দেখা দেয় বিশৃংখলা। তাই এটা সম্পূর্ণ বর্জনীয়। আল্লাহ বলেন, وَلَا تَبْغِ الْفَسَادَ فِي الْأَرْضِ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْمُفْسِدِينَ এবং পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করতে প্রয়াসী হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ অনর্থ সৃষ্টিকারীদেরকে পছন্দ করেন না। (সুরা কাসাস ৭৭)
মিডিয়া অশ্লীলতার বাহন নয় বিনোদন সাংবাদিকতার নামে চলছে বেহায়য়াপনা ও অশ্লীলতার প্রসার। গণমাধ্যমকে অপবব্যহার করে সমাজকে কলুষিত করার হীন প্রয়াসে যারা লিপ্ত তাদের বিরুদ্ধে আল কুরআন হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলছে- إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَن تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ যারা পছন্দ করে যে, ঈমানদারদের মধ্যে ব্যভিচার প্রসার লাভ করুক, তাদের জন্যে ইহাকাল ও পরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না।
একজন মুসলিম সাংবাদিক ইসলামী বিধিবিধানের আলোকে সংবাদ কার্যক্রম পরিচালনা করলে তা হবে ইবাদত এবং ইহপরকালীন জীবনের মুক্তির কারণ।
এর ব্যতিক্রম হলেই একজন সংবাদ কর্মী হয়ে যাবেন দুনিয়া ও আখেরাতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ। আল্লাহ আমাদের সকলকে বুঝার ও মানার তাওফিক দান করুন।
লেখক: ইমাম ও খতিব, কাতার ধর্মমন্ত্রণালয়
নির্বাহী পরিচালক, আলনূর কালচারাল সেন্টার, কাতার
-এটি