আবদুল্লাহ তামিম
চাদের অসহায় মুসলিমদের মাঝে ইফতার ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছে সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ।
সৌদির সরকারী গণমাধ্যম সৌদি প্রেস এজেন্সির বরাতে জানা যায়, মধ্য আফ্রিকার দেশ চাদে সৌদি বাদশাহর নির্দেশে দেশটির মুসলিমদের মাঝে এ সহায়ত প্রদান করা হয়। সূত্র আরো জানা যায়, রমজানের শেষ দশকে মক্কার মসজিদুল হারামে ইতিকাফে বসেছেন বাদশাহ সালমান। সেখান থেকেই বিভিন্ন দেশের অসহায় মুসলিমদের মাঝে এ সহায়তার নির্দেশ দেন তিনি।
বাদশাহ সালমানের মানবিক সাহায্য ও ত্রাণ কেন্দ্র (কেএসরিলিফ) প্রতিষ্ঠান এ দায়িত্ব পালন করছে। এসপিআরের বরাতে আরো জানা যায়, এ প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে প্রতিদিন সৌদিসহ নানান দেশে ইফতার ও খাদ্রসামগ্রী বিতরণ করে আসছে।
উল্লেখ্য, চাদ মধ্য আফ্রিকার একটি স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র। এর উত্তরে লিবিয়া, পূর্বে সুদান, দক্ষিণে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, দক্ষিণ-পশ্চিমে ক্যামেরুন ও নাইজেরিয়া, এবং পশ্চিমে নাইজার। সমূদ্র থেকে দূরে অবস্থিত বলে এবং মরু জলবায়ুর কারণে চাদকে ‘আফ্রিকার মৃত হৃদয়’ বলেও মাঝে মাঝে অভিহিত করা হয়।
চাদকে তিনটি ভৌগোলিক অঞ্চলে ভাগ করা যায়, উত্তরের সাহারা মরুভূমি অঞ্চল, মধ্যভাগের ঊষর সহিলীয় বেষ্টনী, এবং দক্ষিণের অপেক্ষাকৃত উর্বর সুদানীয় সাভানা তৃণভূমি অঞ্চল। চাদ হ্রদ দেশটির বৃহত্তম এবং আফ্রিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম জলাশয়। এই হ্রদের নামের দেশটির চাদ নামকরণ করা হয়েছে। সাহারা অঞ্চলে অবস্থিত তিবেস্তি পর্বতমালার এমি কৌসি চাদের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ।
রাজধানী এনজামেনা দেশটির বৃহত্তম শহর। চাদে ২০০ বেশি ধরনের জাতিগত ও ভাষাভিত্তিক গোষ্ঠীর বাস। ফরাসি ও আরবি এখানকার সরকারি ভাষা। ইসলাম ধর্ম সবচেয়ে বেশি প্রচলিত।
খ্রিস্টপূর্ব ৭ম সহস্রাব্দের শুরুতে চাদ উপত্যকাতে বড় আকারের মনুষ্য বসতি স্থাপিত হয়। খ্রিস্টপূর্ব ১ম সহস্রাব্দ নাগাদ চাদের সহিলীয় অঞ্চলটিতে বহু রাজ্য ও সাম্রাজ্যের উত্থান-পতন ঘটে; চাদের মধ্য দিয়ে চলে যাওয়া আন্তঃসাহারান বাণিজ্যপথটি নিয়ন্ত্রণ করাই ছিল এগুলির লক্ষ্য। ১৯২০ সাল নাগাদ ফ্রান্স দেশটি দখল করে এবং এটিকে ফরাসি বিষুবীয় আফ্রিকার অংশীভূত করে।
১৯৬০ সালে ফ্রঁসোয়া তোম্বালবাইয়ের নেতৃত্বে চাদ স্বাধীনতা অর্জন করে। কিন্তু মুসলিম-অধ্যুষিত উত্তরাঞ্চল তোম্বালবাইয়ের নীতির বিরোধিতা করে এবং ১৯৬৫ সালে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়।
১৯৭৯ সালে বিপ্লবীরা রাজধানী দখল করে এবং দক্ষিণের আধিপত্যের অবসান ঘটায়। কিন্তু বিপ্লবী নেতারা অন্তর্কোন্দলে জড়িয়ে পড়ে; শেষ পর্যন্ত ইসেনে আব্রে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীদের পরাজিত করেন। ১৯৯০ সালে তাঁরই সামরিক জেনারেল ইদ্রিস দেবি তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। সাম্প্রতিক সময়ে সুদানের দারফুর সংকট সীমানা পেরিয়ে চাদেও সংক্রমিত হয়েছে এবং যুদ্ধ শুরু হয়ে দেশটিতে একটি অস্থিতিশীল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
চাদে অনেকগুলি রাজনৈতিক দল থাকলেও রাষ্ট্রপতি দেবি ও তার রাজনৈতিক দল পেট্রিয়টিক স্যালভেশন মুভমেন্ট ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছেন। রাজনৈতিক সহিংসতা ও অভ্যুত্থান বা কু-এর ঘটনা চাদের রাজনীতিকে জর্জরিত করে রেখেছে। এটি বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র ও দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলির একটি। বেশির চাদীয় নাগরিক দিনমজুরি ও কৃষিকাজ করেন। ঐতিহ্যবাহী তুলা শিল্প একদা দেশের প্রধান রপ্তানিকারী শিল্প হলেও ২০০৩ থেকে খনিজ তেল দেশটির রপ্তানি আয়ের প্রধান উৎস।
সূত্র: সৌদি প্রেস এজেন্সি, উইকিপিডিয়া
-এটি