তারেক সাঈদ
জাকাত ইসলামের অন্যতম মৌলিক স্তম্ভ। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে কারিমে ইরশাদ করেন ‘যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে, সৎ কাজ করেছে, নামাজ প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং জাকাত প্রদান করেছে, তাদের জন্য পুরস্কার তাদের পালনকর্তার কাছে রয়েছে। তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না।’ সুরা বাকারা-২৭৭
কুরআনে কারিমে আল্লাহ তায়ালা যখনই নামাজ প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিয়েছেন, পাশাপাশি অধিকাংশ ক্ষেত্রে জাকাত আদায়েরও নির্দেশ দিয়েছেন। তাছাড়া, জাকাতের গুরুত্ব কেবল ধর্মীয় গণ্ডির ভিতরেই সীমাবদ্ধ নয়। আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রেও জাকাতের অত্যন্ত গুরুত্ব রয়েছে। কয়েকটি ক্ষেত্র নিচে আলোচনা করা হলো-
১. জাকাত সম্পদকে পবিত্র করে- মাল-সম্পদ উপার্জন কালে মানুষ হিসেবে কিছু না কিছু ভুল-ক্রুটি করে ফেলে। আর উপার্জিত মাল থেকে জাকাত আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর বিধান মানা সহ ভুল-ক্রুটিগুলা মাফ হয়ে যায়। এভাবে জাকাত সম্পদকে পবিত্র করে। হজরত আনাস রা.থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, বনি তামিমের এক ব্যক্তি রাসূল সা. এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, হে রাসূল সা. আমি অনেক সম্পদের মালিক এবং পরিবারে সন্তান ও অনেক, সুতরাং আপনি বলে দিন, আমি আমার সম্পদ কিভাবে দান করব এবং তাদের সাথে কি ব্যবহার করবো?
তখন রাসূল সা. বললেন, তোমার সম্পদের যাকাত দাও। কেননা তা তোমাকে (তোমার সম্পদ) পবিত্র করে দিবে। আর নিকট আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখ, ভিক্ষুক প্রতিবেশী এবং মিসকীনদের অধিকার পূরণ কর। (মুসনাদে আহমদ-১২৩৯৪)
২. জাকাত বিত্তবানদের পবিত্র করে-
অর্থের মোহে পড়ে মানুষের মাঝে স্বার্থপরতা, লোভ-লালসা, বিদ্বেষ ইত্যাদির সৃষ্টি হয়। জাকাত মানুষকে এ সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত দিয়ে সকল শ্রেণীর মানুষের মাঝে একতা ও সহনশীলতা সৃষ্টি করে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে নবি আপনি তাদের ধন সম্পদ থেকে সাদাকা (জাকাত) গ্রহণ করুন, এবং এর দ্বারা আপনি তাদেরকে পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন করবেন’ । সূরা আত-তাওবা-১০৩
৩. জাকাত দারিদ্র মোচন করে: দারিদ্র বিমোচনে জাকাতের অবদান অসীম। যে আট প্রকার ব্যক্তির উপর যাকাত গ্রহন জায়েয তারা প্রকৃত পক্ষেই হতদরিদ্র ও মিসকিন। দাতাগণ যদি পরিকল্পিত ও সঠিক ভাবে তাদের মাঝে যাকাত বন্টন করে দেয় তাহলে সকলেই একদিন দারিদ্র মুক্ত হবে। এবং সামনে থেকে নিজেই যাকাত দেয়ার উপযোক্ত হবে। হযরত আলী রাযি, থেকে বর্নিত, রাসূল সা. বলেন, আল্লাহ তায়ালা ধনী মুসলমানদের সম্পদে এ পরিমাণ যাকাত ফরয করেছেন যা তাদের দরিদ্রদের প্রয়োজন মেটাতে যথেষ্ট। দরিদ্র মুসলিমগন অভুক্ত ও বিবস্ত্র থাকার যে কষ্ট করে যাচ্ছে। এটি তাদের ধনীদের সৃষ্ট। শুনে রাখ
আল্লাহ তাআলা তাদের হিসাব কঠিন করে নিবেন এবং যন্ত্রনাদায়ক কঠিন শাস্তি দিবেন। তাবরানি
৪. জাকাত উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: সমাজে গরীব-অসহায় লোকেদের ক্রয় সামর্থ নাই বললেই চলে। যদি জাকাতদাতারা সমাজের এই সমস্ত অসহায় লোকেদের যাকাতের অংশ দেয় তাহলে এর দ্বারা তাদের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
পূর্বের চেয়ে বেশি পন্য সামগ্রী ক্রয় করবে। ফলে সমাজে পন্য সামগ্রীর চাহিদাও বাড়বে। বর্ধিত চাহিদা পূরনের জন্য বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। ফলে উৎপাদন ও বৃদ্ধি হবে। এবং উৎপাদন কারীদের লাভ বাড়বে। এভাবে সমাজে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তোমরা যে যাকাত দাও, প্রকৃতপক্ষে এর দ্বারা যাকাতদানকারী তার সম্পদ বর্ধিত করে’। সূরা আর রূম-৩৯
৫. জাকাত অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস করে: ইসলামের অন্যতম মূল লক্ষ্য হলো সম্পদ যেন কোনো ক্ষেত্রে একত্রীভুত ও শক্তিভূত না হয়ে যায়। সামজে এমন লোক আছে যারা তাদের উপার্জন দ্বারা নিজেদের বরণ-পোষণই আদায় করতে পারেনা।
তাছাড়া সমাজে এমন লোক আছে ইয়াতিম, বিধবা, পঙ্গু যারা কিছুই করতে পারে না।আল্লাহ তায়ালা এই সমস্ত লোকোদের মৌলিক চাহিদা পূরনের জন্যই যাকাতের বিধান দিয়েছেন। সমাজের যারা ধনী, বিত্তশালী তাদের সম্পদের একাংশ এ সমস্ত অসহায় ইয়াতিম মিসকিনদের মাঝে বন্টন করে দেয়ার বিধান দিয়েছেন।
এভাবে যাকাতোর মাধ্যমে সমাজের ধনী-গরিবের বিরাজমান বৈষম্য দূর করে দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরা সালাত কায়েম করো, যাকাত আদায় করো আর বিনয়কারীদের সাথে মিলিত হয়ে বিনয় প্রকাশ করো।সূরা বাকারা :১৪৩'
৬. জাকাত সমাজে আনে শান্তি: সমাজে শান্তি ও সৌহার্দ রক্ষার ক্ষেত্রে যাকাতের ভূমিকা বিষেশ গুরুত্বপূর্ন। যাকাত একদিকে যেমন ধনীদেরকে অর্থের মোহ, হানাহানি, স্বার্থপরতা থেকে মুক্ত করে তেমনি যাকাতের অর্থ গরীব অসহায়দের মাঝে বন্টন হলে এসমস্ত অভাবগ্রস্তদের মৌলিক চাহিদা পূরন হয়। এর দ্বারা সমাজে হিংসা বিদ্বেষ - হানাহানির অবসান ঘটে।ও সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা বিরাজ করে।
মোটকথা: ইসলামি সমাজ ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় যাকাত একদিকে যেমন গরিব অসহায়তা অবসানের গ্যারান্টি রাখে তেমনি অর্থনৈতিক চাকাকে গতিশীলও রাখে। অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকেও উন্নিত করে। এ সব কারনে যাকাতের আর্থ-সামাজিক গুরুত্ব অপরিসীম।
-এটি