তারেক সাঈদ: শরতের পূর্ণিমায় পৃথিবীতে যেভাবে জ্যোৎস্নার প্লাবন নামে, তেমনি শবে কদরেও শান্তি-প্রশান্তির অপার্থিব বন্যায় প্লাবিত হয় বিশ্বজাহান।
আসমানের ফেরেশতারা নেমে আসেন পৃথিবীতে আর চারদিকে আলোর উৎসবে শামিল হন এই রাতে। ফেরেশতাদের নেতৃত্বে থাকেন হযরত জিব্রাঈল আ., যিনি নবি-রাসুলগণের কাছে আল্লাহর সংবাদ ও ওহি আনার মহান দায়িত্ব পালন করেছেন সৃষ্টির শুরু থেকে।
কুরআনে করিমে আল্লাহ তায়ালা বলেন, নিঃসন্দেহে আমি লাইলাতুল কদরে কুরআন নাজিল করেছি। আপনি জানেন লাইলাতুল কদর কী? লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। এই রাতে ফেরেশতাগন ও জিবরাইল প্রভুর অনুমতিক্রমে মঙ্গলময় বস্তু নিয়ে পৃথিবীতে আসেন। এই রাত জুড়ে কল্যাণ বয়ে যায় সূর্যোদ্বয় পর্যন্ত। (সুরা কদর)
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তফসীরে কুরতুবীতে বলা হয়েছে, শবে কদর অর্থ ভাগ্য নির্ধারণ রজনী। এ রাতে পরবর্তী এক বছরের অবধারিত বিধিলিপি সংশ্লিষ্ট ফেরেশতা ব্যবস্থাপকের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
আগামী বছর মানুষের জীবন, মরন, খাদ্য, বৃষ্টির পরিমাণ ইত্যাদি লিখে দেওয়া হয়। চলতি বছর কে হজ করবেন তাও লেখা হয়ে থাকে। ইবনে আব্বাস বলেন, এ কাজের জন্য জিবরাইল, ইসরাফিল, মিকাইল ও আজরাইল চার ফেরেশতা নিযুক্ত থাকেন।
রাসুল সা. শবে কদরের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেছেন, যে ব্যক্তি মহিমান্বিত রজনী শবে কদরে পূর্ণমনোযোগ ও বিশ্বাসের সঙ্গে ইবাদত করবে আল্লাহ তার গত জীবনের সব অপরাধ ক্ষমা করে দিবেন। (বুখারি, মুসলিম)
অনেকের মনে এই ভুল ধারণা রয়েছে যে, সাতাশের রাতই হচ্ছে শবে কদর। এ ধারণা ঠিক নয়। সহীহ হাদীসে এসেছে যে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লাইলাতুল কদর কোন রাত তা জানানো হয়েছিল। তিনি তা সাহাবীদেরকে জানানোর জন্য আসছিলেন, কিন্তু ঘটনাক্রমে সেখানে দুই ব্যক্তি ঝগড়া করছিল।
তাদের ওই ঝগড়ার কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট থেকে সে রাতের ইলম উঠিয়ে নেওয়া হয়। এ কথাগুলো সাহাবীদেরকে জানানোর পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- হতে পারে, এতেই তোমাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে। এখন তোমরা এ রাত (অর্থাৎ তার বরকত ও ফযীলত) রমযানের শেষ দশকে অন্বেষণ কর। সহীহ বুখারি হাদিস নং ২০২০, সহিহ মুসলিম ১১৬৫/২০৯।
অন্য হাদিসে বিশেষভাবে বেজোড় রাতগুলোতে শবে কদর তালাশ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। -সহিহ মুসলিম, হাদিস ১১৬৫। তাই সাতাশের রাতকেই সুনির্দিষ্টভাবে লাইলাতুল কদর বলা উচিত নয়। খুব বেশি হলে এটুকু বলা যায় যে, এ রাতে লাইলাতুল কদর হওয়ার অধিক সম্ভবনা রয়েছে।
-এটি