শিব্বির আহমদ। রাজধানীর একটি মাদরাসা থেকে দাওরায়ে হাদীস শেষ করেছেন।এ বছর ইফতা পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু কোথায় ভর্তি হবেন তা নিয়ে চিন্তিত। সেরাদের কাতারে কে না থাকতে চায়। সেরা ইফতাগুলোর খোঁজ নিচ্ছেন শিব্বির। কিন্তু খোঁজে পাচ্ছেন না। শিব্বিরের মতো আরো যারা ইফতা ভর্তি নিয়ে চিন্তিত ও সেরা ইফতাগুলোর ভর্তি কার্যক্রম জানতে চাচ্ছেন তাদের জন্য এবারের আয়োজন ‘রাজধানীর সেরা ১০ ইফতা বিভাগে ভর্তির হালচাল’। মারকাযুদ দাওয়া আল ইসলামিয়া কেরাণীগঞ্জ, ফকীহুল মিল্লাত মুফতি আব্দুর রহমান রহ. এর বসুন্ধরা মাদরাসা, জামিয়া শায়খ জাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারসহ আরও একাধিক সেরা ইফতা বিভাগের খোঁজ আমরা নিচ্ছি। আমাদের হাতে এলে আমরা পর্যায়ক্রমে সেগুলোও প্রকাশ করবো। নিচের এ ধারাবাহিকতা বিশেষ কোনো জরিপের ভিত্তিতে নয়। একজন প্রতিবেদকের প্রাথমিক বিবেচনামাত্র।
রাজধানীর এ ১০ টি ইফতা বিভাগের খোঁজ নিয়ে প্রতিবেদন করেছেন মোস্তফা ওয়াদুদ।
১. আকবর কমপ্লেক্স মাদরাসা, মিরপুর। এখানে ইফতা বিভাগের জন্য নির্দিষ্ট কোনো কোটা নেই। তবে বিগত বছরগুলোতে ২৪ জন ছাত্র ভর্তি হয়েছে এ ইফতা বিভাগে। ইফতা বিভাগের ভর্তি শুরু হবে ৫ শাওয়াল। ভর্তি পরীক্ষায় নুরুল আনওয়ার কিতাবুল্লাহ ও হেদায়া তৃতীয় খণ্ড কিতাবের পরীক্ষা হবে। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেয়া যাবে। পরের দিন ৬ শাওয়াল ফলাফল ঘোষণার পর মৌখিক পরীক্ষা হবে।এ পরীক্ষায় টিকলে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করা যাবে। ভর্তি ৬ থেকে ৮ শাওয়াল প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে আসর পর্যন্ত চলবে। ভর্তি ফি ৩০০০ টাকা মাত্র। এখানে ইফতার প্রধান মুশরিফ মুফতি দেলোয়ার হোসাইন। আর প্রথম বর্ষের মুশরিফ মুফতি হানিফ কাসেমী ও দ্বিতীয় বর্ষের মুশরিফ মুফতি আব্দুস সবুর।
২. জামিয়া মাদানিয়া যাত্রাবাড়ী। এখানে ইফতা বিভাগের কোটা ৫০ জন মাত্র। এখানে মোট চার দিন ব্যাপী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ৯ শাওয়াল প্রথম লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এ পরীক্ষায় নুরুল আনওয়ার কিতাবুল্লাহ ও হেদায়া তৃতীয় খণ্ড পরীক্ষা হবে। এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মৌখিক পরীক্ষা হবে ১১ শাওয়াল । এরপর আবার উত্তীর্ণদের ১২ শাওয়াল লিখিত পরীক্ষা হবে। এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের চূড়ান্ত পরীক্ষা হবে ১৩ শাওয়াল । এ পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হবে তাদের ভর্তি নেয়া হবে। এখানে দু’বছরে ইফতার কোর্স। ইফতায় ভর্তির জন্য জায়্যিদ জিদ্দান ও মুমতায ছাত্ররা আবেদন করতে পারবেন। ইফতার মুশরিফ মুফতি মাহমুদুল হাসান জামশেদ ও মুফতি সাদিকুল ইসলাম। ভর্তি ফি ২০০০ টাকা মাত্র । ভর্তির জন্য সনদ বা রেজাল্টের মার্কসীট আনতে হবে। ফরম তোলার সময় ভোটার আইডি কার্ড বা জন্মসনদের ফটোকপি দেখাতে হবে।
৩. জামিয়া শারইয়্যা মালিবাগ। সকল জামাতের ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের জন্যই ৮ ও ৯ই শাওয়াল পর্যন্ত ভর্তি ফরম বিতরণ করা হবে। এখানে ইফতা বিভাগে ভর্তির জন্য লিখিত ও মৌখিক উভয় পরীক্ষা দিতে হয়। লিখিত পরীক্ষা হবে (ক) হেদায়া কিতাবুল বুয়ু ও তালাক (খ) নুরুল আনোয়ার কিতাবুল্লাহ ও (গ) বাংলা-আরবি প্রবন্ধ। আর মৌখিক পরীক্ষার জন্য হেদায়া ফাতহুল কাদীরসহ যে কোনো কিতাব থেকে জিজ্ঞাসা করা হয়। লিখিত পরীক্ষা ১০জুন সোমবার বিকাল ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত হবে। মৌখিক পরীক্ষা ১১জুন সকাল ৮.৩০ মিনিট থেকে শুরু হবে।
৪. বাইতুল উলুম ঢালকানগর। এখানের ইফতা বিভাগের কোটা মাত্র ২০ জন।৮ শাওয়াল ফজরের পর থেকে ১০ টা পর্যন্ত ফরম বিতরণ করা হয়। এখানে ভর্তি ফি ৩০০০। আবাসিক চার্জ ১০০০। খানা বাবদ ২০০০ টাকা মাত্র। ইফতার জন্য বুখারী, নুরুল আনওয়ার ও হেদায়া ৩য় খণ্ডের ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হয়। পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের সেদিনই ভর্তি সম্পন্ন করতে হয়।
৫. জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা। এখানে ইফতার কোটা মাত্র ২০ জন। ইফতার মুশরিফ মুফতি ইকবাল হুসাইন ও মুফতি হোসাইন আহমদ। এ মাদরাসায় ভর্তি শুরু হয় ৮ শাওয়াল থেকে । চলে ১১ শাওয়াল পর্যন্ত। সকাল ৯টা থেকে আসর পর্যন্ত ভর্তি কার্যক্রম চলে।
ইফতা ও আদব বিভাগে লিখিত পরীক্ষা হয। বাকিসব মৌখিক। ইফতার জন্য তিরমিজি ১ম ও হেদায়া ৩য়। আদব বিভাগে উপস্থিত যে কোনো বিষয়ে আরবি মাকালা লিখতে দেয়া হয়। পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ওই দিনই ভর্তির কাজ সম্পন্ন করার সুযোগ রয়েছে।
৬. জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলূম, ফরিদাবাদ। এখানে আমাদের প্রতিনিধি লোকমান হুসাইনের মাধ্যমে ইফতা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আব্দুল্লাহ উমায়ের জানিয়েছেন ইফতা বিভাগে মাত্র ২৫ থেকে ৩০ জন ছাত্র নেয়া হয়। আর মাদরাসার মুদারররিস ও সহকারী দারুল ইকামা মাওলানা আব্দুল্লাহ উবায়েদ জানিয়েছেন, মাদরাসার ইফতাসহ সব জামাতের ভর্তি পরীক্ষা ৭ শাওয়াল শুরু হয়ে ১০ শাওয়াল শেষ হবে। যারা মুমতায মার্ক পেয়ে ভর্তি হবে তাদের সারাবছরের কোনো খরচ নেই। শুধু ভর্তি ফি বাবদ ৩৮০০ টাকা নেয়া হয়। এখানে সুপারিশের মাধ্যমে জায়্যিদ জিদ্দান ছাত্রও ভর্তি নেয়া হয়। তবে তাদের ভর্তি খরচ ছাড়াও মাসিক ২০০০ টাকা বোর্ডিং বাবদ প্রদান করতে হয়। এখানে ইফতার মুশরিফ হলেন মুফতি আবদুস সালাম।
ইফতার ভর্তি পরীক্ষায় নুরুল আনওয়ার ও হোদায়া কিতাবুল বুয়ু ও তালাক থেকে হবে। এখানে ভর্তির জন্য ফজরের আগেই ফরম তোলার প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। ফজরের পরপর বা সকাল ৭ টা থেকে ৮ টার মধ্যে ফরম পাওয়া যাবে।
৭. জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মাদপুর। এখানের ইফতা বিভাগের নতুন ছাত্রদের ভর্তি পরীক্ষা ৬ শাওয়াল শুরু হয়। ৭ ও ৮ শাওয়ালের মধ্যে ভর্তি সম্পন্ন করতে হয়। ভর্তির জন্য মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। এ ইফতার মুশরিফ মুফতি জিয়াউর রহমান। ভর্তি ফি ২০০০ টাকা মাত্র। এখানে ইফতার কোটা সংখ্যা মাত্র ১০ জন।
এছাড়া কিতাব বিভাগের অন্যান্য জামাতের নতুন ছাত্রদের ভর্তি কার্যক্রম কোটা পূরণ সাপেক্ষে ৮ শাওয়াল থেকে ১১ শাওয়াল পর্যন্ত চলে। নতুন ছাত্রদের ভর্তি পরীক্ষা প্রতিদিন সকাল ৭.৩০ থেকে দুপুর ১.০০ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বিকেল ৩.৩০ মিনিটে উত্তীর্ণদের তালিকা প্রকাশ করা হলে ভর্তি কাজ সম্পন্ন করা যায়। বিস্তারিত জানতে মোবাইল: ০১৯৪৪৭১৭৬৭৬
৮. জামিয়া হুসাইনিয়া ইসলামিয়া, আরজাবাদ। এখানে ৮ শাওয়াল থেকে শুরু হয় ভর্তি কার্যক্রম। চলে কোটা পূরণ হওয়া পর্যন্ত। ইফতার ভর্তি পরীক্ষা ভর্তি ১০ শাওয়াল। ভর্তি পরীক্ষায় নুরুল আনওয়ার কিতাবুল্লাহ ও হেদায়া তৃতীয় খণ্ড কিতাবের পরীক্ষা হবে। ভর্তি ফরমের মূল্য ৩০০ টাকা। ভর্তি ফি ১০০০ টাকা। এককালীন প্রদেয় ২০০০ টাকা। এখানে ইফতার মুশরিফ মুফতি তাজুল ইসলাম।
৯. জামিয়া কোরআনিয়া আরাবিয়া, লালবাগ। এ ইফতায় ভর্তির জন্য লিখিত পরীক্ষা দিতে হবে। বুখারি আওয়াল ও হেদায়া থেকে প্রশ্ন করা হয়। ইফতার কোটা মোট ৩৫ থেকে ৪০ এর ভিতরে। ভর্তি শুরু ৮ শাওয়াল। কোটা পূরণ সাপেক্ষে চলে ১ সপ্তাহ। সকাল ১০ টা থেকে আসর পর্যন্ত ভর্তি কার্যক্রম চলে। ভর্তি ফি ১০০০ টাকা মাত্র। এ ইফতার মুশরিফ হলেন মুফতি ইয়াহইয়া।
১০. জামিউল উলুম মিরপুর ১৪। এখানে ইফতা বিভাগসহ নতুন ছাত্রদের ভর্তি ৮ শাওয়াল থেকে শুরু হবে। ওই দিন সকাল ৭টা থেকে মাগরিব পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সেদিনই এশার পর পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ফলাফল ঘোষণা করা হলে তারা ভর্তি হতে পারবেন। এখানে এককালীন বোর্ডিং চার্জ (যারা ফুল ফ্রি খাবে) ১০০০ টাকা মাত্র। সাধারণ খানা ২ বেলা সকালে নাশতাসহ ১৫০০ টাকা মাত্র। আর বিশেষ খানা ২ বেলা সকালের নাশতাসহ ২০০০ টাকা মাত্র।
এমডব্লিউ/