মুফতি শামসুদ্দোহা আশরাফী : বর্তমানে দীন প্রচারের অন্যতম মাধ্যম ওয়াজ বা মাহফিল। মাহফিলের মাধ্যমে জনসাধারণ সারাবছর দীনের আলো পেয়ে থাকেন; ইসলামের সঠিক দিক-নির্দেশনা জানেন। বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীর বক্তারা মহান রাব্বুল আলামিনের বিশেষ নেয়ামত ও দায়িত্বপ্রাপ্ত উলামা শ্রেণি। উম্মাহ গঠনে যাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেক বেশি।
গতকাল সোমবার (২৬ মে) আলোচিত ও নন্দিত ওয়ায়েজ মাওলানা হাফিজুর রহমান সিদ্দিকির নিজ বাসায় বাংলাদেশের প্রথম সারির বেশ কিছু ওয়ায়েজদের একটি চমৎকার মিলনমেলা আয়োজিত হয়েছে।
সারাবছর প্রোগ্রাম নিয়ে ব্যস্ত থাকায় ও বক্তাদের পারস্পরিক দেখা সাক্ষাৎ না হওয়ায় একটি মিলনমেলার প্রয়োজন অনুভব হচ্ছিল। এরই প্রেক্ষিতে মাওলানা হেদায়েতুল্লাহ আজাদীর আহ্বানে মাওলানা হাফিজুর রহমান সিদ্দিকির বাসায় এ ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। কওমি ঘরানার ওয়ায়েজদের পারস্পারিক মিলনমেলা ছিলো যার অন্যতম উদ্দেশ্য।
শুরুতে এটি একটি ইফতার মাহফিল হলেও সকল বক্তাদের মিলনমেলার ফলে পরিণত হয় ইলমী আলোচনায়। কথা হয় পারস্পারিক আত্মসমালোচনা ও আত্মউন্নয়ন নিয়েও। কথা শুরু করেন মাওলানা হাফিজুর রহমান সিদ্দিকি নিজেই। ওয়াজের ময়দানে করণীয়-বর্জণীয় সম্পর্কে মতামত তুলে ধরেন। তাদের পারস্পারিক আলোচনার মাধ্যমে এক সময় এটি একটি ‘ইসলাহী মজলিস’ বা আত্মসংশোধনী বৈঠকে রূপ নেয়। তুলে ধরা হয় আত্মউন্নয়নে ১০ টি প্রস্তাব।
নিচে মজলিসে আলোচিত আত্মউন্নয়নের প্রস্তাব ১০টি তুলে ধরা হলো -
১) প্রত্যেকেই একথা মনে করা যে, আমি নিজের কোন যোগ্যতা বা অভিজ্ঞতার বলে ‘ওয়ায়েজ’ হতে পারিনি। আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহেই আমাকে এ কাজে নিয়ে এসেছে। এজন্য সবসময় আল্লাহর কাছে দোয়া করা। আর ব্যক্তিজীবনে আমল আরও বাড়িয়ে দেয়া।
২) ওয়াজ দীন প্রচারের অন্যতম মাধ্যম। নবিদের আ. ও রাসুল সা. এর কাজের অংশ। তাই ওয়াজের ক্ষেত্রে নববি গুণের প্রতি খেয়াল রেখে বয়ান করা।
৩) আত্মসংশোধনের লক্ষ্যে কোন আধ্যাত্মিক রাহবার ও বুুযুর্গের হাতে নিজেকে ন্যাস্ত করে দেওয়া।
৪) এলোমেলো বয়ান না করে সুনির্দিষ্ট বিষয়ের উপর বয়ান করা। শ্রোতাদের অধিক উপকারী বিষয়গুলো প্রাধান্য দেয়া। বয়ানে কুরআন, হাদিস ও গ্রহণযোগ্য কিতাব থেকে দলীল দেয়া৷ বানোয়াট কিসসা কাহিনী বলা থেকে বিরত থাকা। আর মিডিয়া বা ইউটিউবে বয়ান আপলোডের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা। যে কোন বয়ান মিডিয়ায় না দেয়া।
৫) ব্যক্তিগত জীবনাচার ও বয়ানের ভাবগাম্ভীর্যের প্রতি খেয়াল রাখা। মাহফিলের চাহিদা পূরণের স্বার্থে খোশগল্প করা লাগলেও মাত্রাতিরিক্ত হাস্যরসও হাসি তামাশা না করা।
৬) হক ও হক্কানিয়্যত প্রতিষ্ঠার সূদুর প্রসারি লক্ষ্য নিয়ে সর্বোচ্চ হিকমাহ'র সাথে ময়দানে কাজ করা। বিতর্ক সৃষ্টি না করে ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা। এমন কোন কাজ বা আচরণ না করা যাতে আমাদের মাসলাক ও মাশরাব ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
৭) ওয়ায়েজদের পারস্পরিক সুসম্পর্ক বৃদ্ধি করা। একজন আরেকজনের আয়নার মত হয়ে যাওয়া। কারো মধ্যে সমস্যা দেখা দিলে মিডিয়ায় বা লোক সম্মুখে সমালোচনা না করে ব্যক্তিগতভাবে সংশোধনের চেষ্টা করা।
৮) নিজেদের মাঝে সৃষ্ট বিভিন্ন মতকে কিভাবে এক করা যায়।তা নিয়ে ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে চেষ্টা করা।
৯) হাদিয়ার টাকা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করা।
১০) ওয়াদা দিয়ে খেলাপ না করা। প্রোগ্রাম মিস না করা।
ইফতার মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা আব্দুল বাতেন কাসেমী, মুফতী লুৎফুর রহমান ফারায়েজি, মাওলানা হেদায়াতুল্লাহ আজাদী, মাওলানা ইলিয়াসুর রহমান জিহাদি, মাওলানা আব্দুল খালেক শরীয়তপুরী, মাওলানা শোয়াইব আহমেদ আশ্রাফী, মাওলানা কামরুল ইসলাম আরেফী, মুফতি শামিম আল আরকাম, মুফতি নাসীরুদ্দীন আনসারি, মাওলানা রাশেদুল ইসলাম রহমতপুরী,
মাওলানা ইব্রাহীম কোব্বাদি, মাওলানা সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।
আগামীতে এ জাতীয় বৈঠক ব্যাপক করার প্রস্তাবনা পেশ করা হয়। সর্বশেষ মুনাজাতের মাধ্যমে প্রোগ্রাম সমাপ্ত হয়।
এমডব্লিউ/