শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


দুই ছেলের প্রতি খলিফা সুলাইমান ইবনে আবদুল মালিক রহ. এর উপদেশ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মনজুরুল হক

খলিফা সুলাইমান ইবনে আব্দুল মালিক কাবা তাওয়াফ করছেন। পিছনে তার দুই ছেলে। তাওয়াফ শেষে এক খাস কর্মচারীকে জিজ্ঞেসা করলেন তিনি কোথায়? মসজিদুল হারামের পশ্চিম দিকে ইঙ্গিত করে সে বলল ঐখানে নামাজ পড়ছেন।

খলিফা সেদিকে এগিয়ে গেলেন। দুই ছেলেও পিছে চলল। খলিফার দেহরক্ষীরা চাইলেন পথের ভিড় সরিয়ে দিতে। কিন্তু খলিফাই তাদের নিবৃত্ত করলেন। বললেন এখানে রাজা-প্ৰজা সবাই সমান। তাকওয়ার মর্যাদা ছাড়া এখানে কেউ শ্রেষ্ঠত্ব পেতে পারে না। হতে পারে এখানে অনেক এলোকেশ ও মলিন বেশধারী আছেন, আল্লাহর কাছে তার মর্যাদার সমান কোনো বাদশা নেই।

খলিফা সেই নামাজরত লোকটির দিকে এগিয়ে গেলেন; যিনি তখনও পর্যন্ত নামাজে মশগুল। কখনও রুকু, কখনও সিজদার গভীরে নিমগ্ন। অথচ পিছনে-ডানে-বামে বহু মানুষ তার জন্য বসে আছেন।

খলিফা বসলেন সবার পিছনে, যেখানে মজলিস শেষ হয়েছে। ছেলে দুজনকেও সঙ্গে বসালেন। দুই কিশোর ভাবতে শুরু করল কে ইনি? খোদ আমিরুল মুমিনিন যার জন্য জনসাধারণের সঙ্গে বসে অপেক্ষা করছেন? তারা দেখল একজন কৃষ্ণাঙ্গ বৃদ্ধ, যার চামড়া কালো, চুলগুলো জড়ানো, সংকুচিত নাক, বসলে যাকে কালো কাকের মতো মনে হয়।

এক সময় নামাজ শেষ হলো। খলিফা যেদিকে বসা সেদিকে ঘুরে তাকালেন। খলিফা তাকে সালাম দিলেন। তিনি সালামের জবাব দিলেন। খলিফা নিজেই তার দিকে এগিয়ে গেলেন। তাকে এক একটি করে হজের মাসায়ালা জিজ্ঞেস করলেন। তিনিও এক এক করে সকল প্রশ্নের জবাব দিলেন। প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা জুড়ে দিয়ে সম্ভাব্য প্রশ্নের পথ বন্ধ করে দিলেন।

খলিফা তাকে ‘জাযাকাল্লাহ’ বলে কৃতজ্ঞতা জানালেন। তারপর ছেলেদের বললেন ওঠো। তারা উঠে দাঁড়াল। তিনজন পুনরায় ‘সাঈ’র উদ্দেশ্যে চলতে শুরু করলেন। সাফা-মারওয়ার পথে বালকদ্বয় শুনতে পেলো, লোকজন হাঁক দিয়ে বলছ মুসলিম ভাই সকল, এ অঞ্চলের একমাত্র ফতোয়া দেবেন আতা বিন আবি রাবাহ। তার অনুপস্থিতিতে আবদুল্লাহ ইবনে আবি নাজিহ।

এবার একপুত্র খলিফাকে বলল আমিরুল মুমিনিন, ঘোষণা হচ্ছে, আতা বিন আবি রাবাহ এবং তার সহযোগী ছাড়া কাউকে ফতওয়া জিজ্ঞাসা করা যাবে না। অথচ আমরা এ লোকটির কাছে গেলাম, খলিফাকে যে গুরুত্ব দেয় নি এবং তার প্রতি যথার্থ সম্মান দেখায়নি?

খলিফা বললেন এই যে মানুষটিকে তোমরা দেখলে এবং যার সামনে আমার তুচ্ছতা প্রত্যক্ষ করলে, তিনিই মসজিদুল হারামের মুফতি আতা বিন আবি রাবাহ। তিনি এ মহান মসনদে ‘আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. এর যোগ্য উত্তরসূরি। এরপর তিনি আবেগ জড়ানো কণ্ঠে বললেন ইলম শিক্ষা কর। ইলমের কারণেই তুচ্ছ ব্যক্তি মহান হয়। অখ্যাত ব্যক্তি আরোহণ করে খ্যাতির চূড়ায়। ক্রীতদাসও হয় বাদশার মতো মর্যাদাবান।

বাল্যকালে আতা ছিলেন মক্কার এক মহিলার ক্রীতদাস। তখনই তিনি সময়কে তিন ভাগ করে নিয়েছিলেন মনিবের জন্য, আল্লাহর জন্য ও ইলম অর্জনের জন্য। মনিব যখন দেখলেন, তার গোলাম আল্লাহর জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছে, তখন আজাদ করে দিলেন। সেদিন থেকে আতা মসজিদে হারামকে নিজের ঠিকানা বানালেন। ঐতিহাসিকগণ বলেন প্রায় কুড়ি বছর মসজিদের মেঝেই ছিল তার বিছানা।

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. একবার ওমরা করতে মক্কায় এলেন। বহুলোক তার কাছে ফতোয়ার জন্য ভিড় করল। তিনি বললেন মক্কার লোকেরা, আমি অবাক হচ্ছি যে, আতা ইবনে আবি রাবাহ থাকতে তোমরা ফতওয়ার জন্য এসেছো আমার কাছে?

আতা ইবনে আবি রাবাহ’র ছিল দুটি নিয়ন্ত্রিত বৈশিষ্ট্য এক. নিজের প্রবৃত্তির ওপর ছিল তার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ। ফলে প্রবৃত্তিকে ক্ষতিকর উপভোগের সুযোগ তিনি কখনও দেননি। দুই. সময়ের ব্যবহারেও পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল তার, অপ্রয়োজনীয় কাজে সামান্য সময় নষ্ট হতে দেননি।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ