রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


রোজাদারকে ইফতার করানোর ফজিলত

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুহাম্মদ ছফিউল্লাহ হাশেমী

বছর ঘুরে আবারও শুরু হয়েছে সিয়াম সাধনার মাস রমজান। জান্নাতের পথ সুগম করার মাস রমজান। ইবাদতের প্রতিযোগিতা করার অপূর্ব সুযোগ এই রমজান। এ মাসে রোজা রাখা যেমন ফজিলতের, তেমনি ইফতার করাও ফজিলতের, ইফতার করানোও ফজিলতের। সালাতুত তারাবি আদায় করা, সাহরি খাওয়া, কিয়ামুল লাইল, এতেকাফ করা সবই ইবাদত। এসব মিলিয়েই ইবাদতের মৌসুম এ মাহে রমজান।

রমজানের গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল ইফতার। মুসলমানদের দিনব্যাপী সিয়াম সাধনার সমাপ্তি হয় ইফতারের মাধ্যমে। নিজে ইফতার করার পাশাপাশি অন্য রোজাদারকে ইফতার করানোও অনেক সওয়াবের কাজ। এ বিষয়ে মহানবি হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বেশ কয়েকটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে।

যেমন হজরত যায়িদ ইবনে খালিদ আল-জুহানি রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে রোজাদারের সম পরিমাণ সাওয়াব লাভ করবে; তবে এতে রোজাদারের সাওয়াব থেকে একটুও কমানো হবে না।’ (জামে তিরমিজি, সুনানে ইবনে মাজাহ)। অন্য বর্ণনায় এসেছে- ‘যে রোজাদারকে ইফতার করালো, তাকে পানাহার করালো, তাকেও রোজাদারের সমান সাওয়াব দেয়া হবে; তবে তার (রোজাদারের) সাওয়াব বিন্দুমাত্র কমানো হবে না।’ (তাবারানি, মুসান্নাফে ইবনে আব্দুর রাজ্জাক)।

এছাড়াও এ প্রসঙ্গে ইবনে হিব্বান রহ. তার সহিহতে বর্ণনা করেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে তার উপার্জিত হালাল রিজিক হতে কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, ফিরিশতাগণ রমজান মাসের প্রত্যেক রাতে তার জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবেন। আর কদরের রাতে হজরত জিবরাইল আ. তার সাথে মোসাফাহা করবেন। আর যার সাথে হজরত জিবরাইল আ. মোসাফাহা করবেন তার অন্তর কাঠিন্যমুক্ত হবে এবং আল্লাহর ভয়ে কান্নার সময় তার অশ্রু বৃদ্ধি পাবে।’

রোজাদারকে ইফতার খাওয়ানোর ইবাদতের মাধ্যমে আরও অনেকগুলো ইবাদত পালিত হয়। যেমন, নিমন্ত্রিত ভাইদের সাথে হৃদ্যতা ও ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। যে হৃদ্যতা ও ভালোবাসা জান্নাতে প্রবেশের কারণ। যেমনটি রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- ‘তোমরা মুমিন হওয়া ব্যতিত জান্নাতে যেতে পারবে না। আর পারস্পারিক ভালোবাসা ছাড়া মুমিন হতে পারবে না।’ (সহিহ মুসলিম)।

ইফতারের জন্য কেউ কাউকে দাওয়াত করলে করণীয় কী এ প্রসঙ্গে হজরত আবু হুরায়রা রা.-এর একটি বর্ণনা থেকে জানা যায়, তাকে এক মহিলা ইফতারের জন্য দাওয়াত করলো, তিনি তাতে সাড়া দিলেন এবং বললেন- ‘আমি তোমাকে (মহিলাকে) বলছি, যে গৃহবাসী কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তাদের জন্য তার অনুরূপ সাওয়াব হবে।' মহিলা বলল- ‘আমি চাই আপনি ইফতারের জন্য আমার কাছে কিছুক্ষণ অবস্থান করুন, বা এ জাতীয় কিছু বলেছে। তিনি বললেন, ‘আমি চাই এ নেকি আমার পরিবার অর্জন করুক।' (মুসান্নাফে ইবনে আব্দুর রাজ্জাক)।

রোজাদারকে ইফতার করালে তার প্রতিদান আল্লাহ তাআলা নিজের পক্ষ থেকে প্রদান করবেন, রোজাদারের পক্ষ থেকে নয়। এ কারণেই রোজাদারের সাওয়াব কমানো হবে না। এটা বান্দার প্রতি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের একান্ত অনুগ্রহ।

ইফতারের দাওয়াত গ্রহণ করা বৈধ ও কল্যাণের কাজ। কোনো অজুহাতে বা নেকি কমে যাওয়ার আশংকায় ইফতারের দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করা অনুচিত। আবার কেউ যদি কোনো গরিব রোজাদারকে ইফতারের জন্য আর্থিক সাহায্য সহযোগিতা করে; তাতে সে ওই টাকায় ইফতারও করল; আবার কিছু বাঁচিয়ে আর্থিকভাবে সাবলম্বী হলো; এটাও ইফতার করানোর অন্তর্ভূক্ত হবে। আর গরিব ব্যক্তিও আর্থিকভাবে উপকৃত হবে।

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে পারস্পরিক দাওয়াত ও সদাচরণ বিনিময়ের তাওফিক দান করুন। অস্বচ্ছল, গরিব-দুঃখীদের মাঝে ইফতার ও ইফতার করার জন্য অর্থ দান করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

মুহাম্মদ ছফিউল্লাহ হাশেমী
প্রাবন্ধিক ও কলেজ শিক্ষক

-এটি


সম্পর্কিত খবর