রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
ইসরায়েলি হামলায় আরও ১২০ ফিলিস্তিনি নিহত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দ্রুত নির্বাচনের বিকল্প নেই: তারেক রহমান জমিয়তের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হলেন শায়খ মাওলানা আবদুর রহীম ইসলামাবাদী কুমিল্লায় আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসম্মেলন আগামীকাল মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরীর ইন্তেকালে চরমোনাই পীরের শোক প্রকাশ জমিয়ত সভাপতি মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরী রহ.-এর বর্ণাঢ্য জীবন কওমি সনদকে কার্যকরী করতে ছাত্রদল ভূমিকা রাখবে: নাছির বড় ব্যবধানে জিতে প্রথমবারের মতো পার্লামেন্টে যাচ্ছেন প্রিয়াঙ্কা আইফোনে ‘টাইপ টু সিরি’ ফিচার যেভাবে ব্যবহার করবেন  স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক: ধর্ম উপদেষ্টা

যেসব কারণে রোজার কাজা-কাফফারা ওয়াজিব হয়

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি সুহাইল আবদুল কাইয়ূম । । 

আমাদের দুয়ারে কড়া নেড়েছে মহিমান্বিত মাস রমজান। রমজান রহমতের মাস। বরকতের মাস। নাজাতের মাস। রাশি রাশি পুণ্যের মাস। কল্যাণ লাভের অনুপম উপলক্ষের মাস। জীবনের অতীত গোনাহ মোচনের মাস। মহান রবের নৈকট্য অর্জনের মাস। এ মাসে মুমিন-মুসলমানরা রোজা রাখেন। আসুন, রোজার ভাঙ্গার কারণ সংক্রান্ত কয়েকটি মাসায়ালা জেনে রাখি।

১. রোজা রেখে দিনের বেলা শরিয়তের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য কোনো ওজর ছাড়া ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার বা সহবাস করলে কিংবা ওষুধ সেবন করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে এবং কাজা- কাফফারা উভয়টিই ওয়াজিব হবে। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া: ১/২০৫।

২. রোজা রেখে বিড়ি, সিগারেট বা হুক্কা পান করলেও রোজা ভেঙ্গে যাবে এবং কাজা-কাফফারা উভয়টিই ওয়াজিব হবে। -রদ্দুল মুখতার: ৩/৩৬৬।

৩. মহিলাদের সমকামিতা দ্বারা শুক্রক্ষরণ ঘটলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। এক্ষেত্রে শুধু কাজা ওয়াজিব হবে। আর দুই পুরুষের সমকামিতা দ্বারা কাজা ও কাফফারা উভয়টি ওয়াজিব হবে। -দারুল উলূম: ৬/৪৩২।

৪. বিনা ওজরে একই রমজানে এক বা একাধিক রোজা রাখার পর ভেঙ্গে ফেললে একটি কাফফারা ওয়াজিব হবে। আর রোজাগুলো একাধিক রমজানের হলে প্রত্যেক রমজানের জন্য এক একটি করে কাফফারা ওয়াজিব হবে। -রদ্দুল মুখতার : ৩/৩৯১।

যেসব কারণে শুধু কাজা ওয়াজিব হয়, কাফফারা ওয়াজিব হয় না:

১. কেউ ভুলে পানাহার করার পর রোজা ভেঙ্গে গেছে মনে করে পুনরায় ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করলে তার রোজা ভেঙ্গে যাবে। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া: ১/২০৬।

২. রোজা অবস্থায় যদি কারো হাই আসে আর সে সময় মুখ দিয়ে বৃষ্টির পানি চলে যায় বা অযু-গোসলের সময় অনিচ্ছাকৃতভাবে গলা বা নাক দিয়ে ভিতরে পানি প্রবেশ করে তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া: ১/২০৩।

৩. কুলি ও নাকে পানি দেয়ার সময় রোজার কথা স্মরণ থাকা অবস্থায় অনিচ্ছাকৃতভাবে গলা বা নাক দিয়ে ভেতরে পানি প্রবেশ করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। -রদ্দুল মুখতার : ৩/৩৭৪, উাতাওয়া হিন্দিয়া: ১/২০২।

৪. দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাবার যদি ছোলাবুটের সমপরিাণ বা তার চেয়ে বেশি হয় এবং তা গিলে ফেলে, তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। আর যদি তা ছোলাবুটের চেয়ে কম হয় তাহলে রোজা ভাঙ্গবে না, কিন্তু মাকরূহ হবে। তবে মুখ থেকে একবার বের করে পুনরায় গিলে ফেললে তা যতই ছোট হোক না কেন রোজা ভেঙ্গে যাবে। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া: ১/২০২, রদ্দুল মুখতার : ৩/৩৯৪।

৫. খাদ্যদ্রব্য নয় এমন কোনো বস্তু গিলে ফেললেও রোজা ভেঙ্গে যাবে। যেমন লোহা, মাটি, পাথর ইত্যাদি।
-রদ্দুল মুখতার : ৩/৩৭৬, ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/২০২

৬. সিগারেট ও আগরবাতি ইত্যাদি জ্বালিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে এগুলোর ধোঁয়া গ্রহণ করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে।
তবে আতর, সেন্ট ইত্যাদির খোশবুতে রোজা ভাঙ্গে না। -রদ্দুল মুখতার: ৩/৩৬৬,৩৬৭।

৭. স্ত্রী বা কোনো নারীকে স্পর্শ করার দ্বারা বা চুম্বন করার দ্বারা বীর্যপাত হয়ে গেলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া: ১/২০৪।

৮. হস্তমৈথুনের ফলে বীর্যপাত হলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। -রদ্দুল মুখতার: ৩/৩৭১, ফাতাওয়া হিন্দিয়া: ১/২০৫।

৯. ইচ্ছাকৃতভাবে মুখ ভরে বমি করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। মুখ ভরে বমি না করলে রোজা ভাঙ্গবে না। কিন্তু বমি মুখে চলে আসার পর যদি পুনরায় তা ইচ্ছাকৃতভাবে গিলে ফেলে তাহলে বমি কম হোক বা বেশি সর্বাবস্থায় রোজা ভেঙ্গে যাবে। -রদ্দুল মুখতার : ৩/৩৯২, উাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/২০৪।

১০. নাকে ওষুধ বা পানি দিলে যদি তা খাদ্যনালীতে চলে যায় তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। -রদ্দুল মুখতার : ৩/৩৭৬, ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/২০৪।

১১. দাঁত দিয়ে রক্ত বের হওয়ার পর যদি তা থুথুর সাথে গিলে ফেলে তাহলে রক্তের পরিমাণ থুথুর সমান বা বেশি হলে রোজা ভেঙ্গে যাবে, কম হলে ভাঙ্গবে না। -রদ্দুল মুখতার: ৩/৩৬৮, ফাতাওয়া হিন্দিয়া: ১/২০৩।

১২. মুখে পান চিবাতে চিবাতে ঘুমিয়ে পড়লে এবং এ অবস্থায় সুবহে সাদিক হয়ে গেলে রোজা ভেঙ্গে যাবে।
-রদ্দুল মুখতার: ৩/৩৬৮, ইমদাদুল ফাতাওয়া: ২/১৩০।

১৩. নিজের মুখের থুথু বের করে আবার গিলে ফেললে রোজা ভেঙ্গে যাবে। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/২০৩।

১৪. রাত বাকি আছে মনে করে সুবহে সাদিকের পর খানা খেলে রোজা হবে না। তেমনি দিন শেষ হয়ে গিয়েছে মনে করে সূর্যাস্তের পূর্বে ইফতার করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। -রদ্দুল মুখতার: ৩/৩৮০, ফাতাওয়া হিন্দিয়া: ১/১৯৪।

১৫. রোজা অবস্থায় ঋতুস্রাব শুরু হলে সে দিনের রোজা ভেঙ্গে যাবে। উল্লেখ্য, মহিলাদের জন্য ঋতুস্রাব শুরুর দিন ও ঋতুস্রাব চলাকালীন দিনগুলোতে পানাহার করা জায়েজ। তবে অন্যদের সামনে পানাহার করা উচিত নয়। -কাযীখান: ১/২১৭, ফাতাওয়া হিন্দিয়া: ১/২১৪,২১৫।

লেখক: নায়েবে মুফতি, ইসলামিক ফিক্হ একাডেমী, মজুমদার কমপ্লেক্স, কাজলা ব্রীজ, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা।

আরএম/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ