সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
চিকিৎসকরা বছরে দুইবারের বেশি বিদেশ যেতে পারবেন না ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের

কওমি শিক্ষার মূল্যায়ন বাড়ানোর জন্যই সিলেবাস উন্নয়নের চিন্তা: মাওলানা মুহাম্মদ সালমান

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

বর্তমান কওমি শিক্ষা সিলেবাস ব্রিটিশ আমলে প্রণয়ন করা হয়। সে সিলেবাসকে যুগোপযোগী করতে উদ্যোগী হয়েছে বেফাকুল মারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (বেফাক)। এ নিয়ে একটি কমিটিও করা হয়েছে। এ কমিটির নাম ‘কওমি শিক্ষা সিলেবাসের উন্নয়ন’। এ বিষয়ে মাদরাসা দারুর রাশাদ, মিরপুর এর প্রিন্সিপাল মাওলানা মুহাম্মদ সালমান এর সাক্ষাৎকার থাকছে আজ আওয়ার ইসলামে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আওয়ার ইসলামের নিউজরুম এডিটর সাংবাদিক মোস্তফা ওয়াদুদ।

আওয়ার ইসলাম: কওমি শিক্ষা সিলেবাসের উন্নয়ন বলতে কী ধরনের উন্নয়ন বুঝাচ্ছেন?

মাওলানা মুহাম্মদ সালমান: বর্তমানে কওমি নেসাবে যা পড়ানো হচ্ছে সেটা পূর্ণাঙ্গ নেসাব নয়। বরং এটি একটি আংশিক নেসাব। এ নেসাব ব্রিটিশ আমলে প্রণীত হয়। নিজেদের স্বার্থরক্ষা ও ঈমান আমলের হেফাজতের লক্ষ্যে নেসাবটি রচনা করা হয়। এটি ছিল একটি আত্মরক্ষামূলক প্রচেষ্টা; প্রতিরক্ষামূলক প্রচেষ্টা নয়। হুজুর সা. থেকে ব্রিটিশ পর্যন্ত একধারার শিক্ষাব্যবস্থা ছিল। পরবর্তীতে এটার মাঝে পরিবর্তন আসে।

বর্তমানে যে উন্নয়নের কথা বলা হচ্ছে, এটার মাঝে শুধু সিলেবাসের উন্নয়নই নয়। বরং এ উন্নয়নের দ্বারা কওমি শিক্ষার আরও বেশি মূল্যায়নকেই বুঝানো হচ্ছে; যাতে সমাজে সর্বস্তরে কওমি সিলেবাস থেকে যাওয়া ছেলেটি অবদান রাখতে পারে।

আওয়ার ইসলাম: উন্নয়নের ধারাটি কী পাঠদান পদ্ধতিতে হবে নাকি সিলেবাসেও থাকবে?

মাওলানা মুহাম্মদ সালমান: পাঠদান পদ্ধতিতে পরিবর্তন আসবে। কারণ পাঠদান পদ্ধতিতে পরিবর্তন করা সবচেয়ে বেশি জরুরি। পাঠদানের পদ্ধতি যতক্ষণ পর্যন্ত উন্নয়ন না করা হবে ততক্ষণ পর্যন্ত পড়ালেখায় উন্নতি আসবে না। আর সিলেবাসে তো পরিবর্তন হবেই। এটা আগেও বলেছি।

আওয়ার ইসলাম: কোন কোন বিষয়গুলোকে সময়ের তাকাদা বা প্রয়োজন অনুযায়ী প্রাধান্য দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন?

মাওলানা মুহাম্মদ সালমান: অর্থনীতিকে প্রাধান্য দেয়া যেতে পারে। আমাদের সিলেবাসে অর্থনীতির উপর তেমন কোনো পড়াশুনা করানো হয় না। তবে আরবি হেদায়া গ্রন্থে কিতাবুল বুয়ু'য় বা ক্রয়-বিক্রয় সম্পর্কে একটি অধ্যায় পড়ানো হয়। তবে সেটা যথাযথ না। ফতোয়া যেভাবে আলাদা করে পড়ানো হয়, ঠিক একইভাবে অর্থনীতির উপরও আলাদা করে পড়ানো যায়। একইভাবে সমাজনীতি, স্বাস্থ্যনীতি, পৌরনীতি প্রাধান্য পাওয়ার দৃষ্টিকোণ থেকে পড়ানো যেতে পারে।

এসব বিষয় আমাদের উলামায়ে কেরামরা সুন্দর করে শিখতে পারলে সাধারণ মানুষের সামনে সুন্দর করে উপস্থাপন করতে পারবেন।

আওয়ার ইসলাম: মানতেক, ফালসাফা ও কদীম আরবি বিষয়গুলো বর্তমান সিলেবাসে যেভাবে পড়ানো হয়, আগামীতে কীভাবে হবে?

মাওলানা মুহাম্মদ সালমান: তাখাসসুতের মাঝে রাখা যেতে পারে। সাধারণ সিলেবাসে থাকবে না। থাকলে সেটা ততটা গ্রহণ করতে পারবে না আমাদের ছাত্ররা।

আওয়ার ইসলাম: বর্তমান সিলেবাস থেকে বাতিল করার মতো কোনো বিষয় আছে কিনা?

মাওলানা মুহাম্মদ সালমান: বাদ দেয়ার মতো বিষয় কিছু নেই। তবে হেরফের করা যেতে পারে, পরিবর্তন করা যেতে পারে, কিছু বিষয়কে আগ-পিছ করা যেতে পারে।

আওয়ার ইসলাম: বর্তমান সিলেবাসের সঙ্গে সংযোজনের কোনো বিষয় আছে কিনা?

মাওলানা মুহাম্মদ সালমান: অনেক সংযোজনের বিষয় রয়েছে। দাওরাকে দুই বছর করা যেতে পারে। শিক্ষা ব্যবস্থায় বছর বাড়ানো যেতে পারে।

বর্তমান সিলেবাসে দাওরা একবছর। কারণ যেহেতু সরফ একবছর। নাহু একবছর। ঠিক একইভাবে হাদিস একবছর।

তবে নতুন সিলেবাসে দাওরাকে দুইবছর করা হবে। আমি সংযোজনের সঙ্গে আরেকটি বিষয়ের ইঙ্গিত দিতে চাই। সেটা হলো– মাঝে মাঝে বিভিন্ন বিষয়ের উপর সেমিনার করা। কিংবা সপ্তাহব্যাপী কোর্স করানো। সেটা হতে পারে ব্যাংকিংয়ের উপরে, বাতিল ফেরকার উপরে। ছাত্রদের ছুটির সময় বিভিন্ন কোর্স করানো যেতে পারে।

পূর্ণ নেসাবে তা'লিমকে পরিবর্তন করা সম্ভব না। তাই বিভিন্ন বিষয়ের উপর মুহাযেরা পেশ করা যেতে পারে।

আপনাকে আমি এ বিষয়ে একটি উদাহরণ দিচ্ছি। জামিয়াতুর রশীদ, করাচি, পাকিস্তানের। তাদের প্রসপেক্টাসের মাঝে এই অতিরিক্ত বিষয়গুলোর জন্য কোর্স করানো হয়। সেসব কোর্সে তারা দুনিয়াবী সাইটের অসেক বিষয়ের শিক্ষা দিয়ে থাকেন। যেমন– বিবিএ, এমবিএ, আরো অনেক কিছু পড়িয়ে দেন তারা।

আমার কাছে মনে হয়, বর্তমানে সবচেয়ে বড় কওমি মাদরাসার মিছাল হলো জামিয়াতুর রশিদ, পাকিস্তান। তারা বলেন, আমরা সব ক্লাসে ইংরেজিকে লাযিম করেছি। এজন্য যে ইংরেজির মাধ্যমে দুনিয়ার সব ভাষার মানুষের কাছে আমার বাণী বা রাসূলের শ্লোগানকে পৌঁছনো সম্ভব। তাই আমাদের নতুন সিলেবাসে ইংরেজিকে মেট্রিক পর্যন্ত রাখা যেতে পারে।

আওয়ার ইসলাম: উন্নত বিশ্বের ভার্সিটির সিলেবাসের সঙ্গে নতুন সিলেবাসের সামঞ্জস্য কতটুকু?

মাওলানা মুহাম্মদ সালমান: সিলেবাসের সামঞ্জস্য নেই বা রাখা হবে না। তবে নতুন করে ভার্সিটি করে তারপর সেটাতে যোগ করা যেতে পারে। সামঞ্জস্যবিধান করা মুশকিল হয়ে যাবে।

আওয়ার ইসলাম: ইংরেজি, কম্পিউটার, বিজ্ঞান, বাংলাদেশ পরিচিতি, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, সাধারণ জ্ঞান ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কী ভাবছেন?

মাওলানা মুহাম্মদ সালমান: আমার খেয়াল হলো– দাওরা হাদিসের পরে দুইবছর মেয়াদি কোর্স করা। কারণ দাওরা সিলেবাসে এসব ঢুকানোর কোনো সুযোগ নেই। এ ছাড়া, ভারতের ইদারাতুল মাআরিফ মাওলানা বদরুদ্দীন আজমল সাহেবের প্রতিষ্ঠানে দেখলাম, সেখানে দাওনা ফারেগের পর আলাদা বিষয়ে ডিপ্লোমা করার সুযোগ থাকে। আমাদের ছেলেরাও সেটা করতে পারবে।

আমাদের দেশে যেভাবে ইফতা পড়ে, একইভাবে অর্থনীতি, পৌরনীতি, সমাজনীতি, সাহিত্য-সাংবাদিকতাসহ বিভিন্ন ধরনের সাইট নিয়ে পড়াশুনা করতে পারে। তাহলে বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজ গঠনে অনেক লোকের জন্ম হবে।

আওয়ার ইসলাম: বর্তমান সিলেবাসে সিরাত অনেকটা গুরুত্বহীন। সিরাত সাহিত্যের উন্নয়ন নিয়ে কি ভাবছেন?

মাওলানা মুহাম্মদ সালমান: অনেক আগে থেকেই ইতিহাস নেই, সিরাত নেই, গুগুল নেই। সমাজের মানুষ বলে হুজুর গুগুল জানে না, সিরাত জানে না। এসবে আমাদের দুর্বলতা রয়েছে –এটা সত্য। তবে এগুলো দূর করত হবে।

আওয়ার ইসলাম: মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থায় রাজনীতি একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে পড়েছে। অথচ সিলেবাসে সিয়াসত বা রাজনীতির কোনো বই নেই। এটি কি যোগ করা হবে?

মাওলানা মুহাম্মদ সালমান: যোগ করা যেতে পারে। রাজনীতি করতে হবে। রাজনীতি করা রাসূলের সুন্নাত।

আর রাজনীতির জন্য রাজনৈতিক বই অবশ্যই জরুরি। বই না হলে সে রাজনীতি করবে কীভাবে?

আওয়ার ইসলাম: তাকমিলের বছর হাদিস বিজ্ঞান (হাদিস নিয়ে গবেষণা) তাকমিল পড়ুয়া ছাত্রদের দ্বারা কতটুকু হয়ে উঠছে?

মাওলানা মুহাম্মদ সালমান: না মোটেও হয়ে উঠছে না। দাওরার পরে যারা উলুমুল হাদিস বা তাখাসসুসাতের ক্লাসগুলো পড়ছে তাদের দ্বারা হয়তো কিছুটা হয়ে উঠছে।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ