মুহাম্মাদ উবায়দুল্লাহ আসআদ কাসেমি
শিক্ষক ও লেখক
গতবছর আজহারে হিন্দ দারুল উলুম দেওবন্দে থাকাকালীন ধবধবে সাদা দাড়িওয়ালা একজন মাওলানা নজরে আসতো। কোন সময় খানা ওঠানোর লাইনে, আবার কোথাও বই হাতে তাকে দেখা যেত। আমি প্রায় দিন আসরের সালাত আদায় করতাম দারুল উলুম দেওবন্দের মসজিদে কাদিমে। মসজিদের পাশের একটি কামরা থেকে তাকে বের হতে দেখতাম। তাকে ফরজ নামাজ দাঁড়িয়ে, সুন্নত-নফল বসে আদায়ে অভ্যস্থ দৃষ্টিগোচর হতো। বয়সের ভারে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়াও দুঃসাধ্য অনুভূত হতো।
প্রথমদিকে আমার ধারণা ছিল, তিনি হয়ত মাদরাসার কোন কর্মচারী। তার পিঠে সবসময় একটি ব্যাগ ঝুলানো থাকে। তিনি অনেক বেশি পরিমাণে পান খান, যা ছবি থেকে অনুমেয়।
একদিন আমার বন্ধু মুহাম্মাদ আহমাদ বিজনুরি বললেন, তিনি নাকি দারুল উলুম দেওবন্দে আরবি ষষ্ঠ শ্রেণী তথা জালালাইন জামাতে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তির্ণ হয়েছেন। আমি তো পুরোটাই ভ্যাবাচেকা! আমার দাদা জীবিত থাকলেও তো তার চেয়ে ছোট হতেন। যাক লোকটির সাথে কথা বলার কৌতুহল জাগল।
একদিন আসর নামাজে সেই মসজিদে কাদিমের অজুখানায় দেখা হল, সালাম-মুসাফাহা করে প্রাথমিক কথাবার্তা হল। কথা বলে এও অনুধাবন করলাম, তিনি এ বয়সে দারুল উলুম দেওবন্দের ছাত্র হতে পেরে নিজেকে ধন্য ও গর্বিত মনে করছেন। নাতির বয়সী ছাত্রদের সাথে পড়াশোনা করতে তার নেই কোন সংকোচবোধ।
তিনি ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের আওরঙ্গবাদের অধিবাসী। তার নাম সায়্যিদ মাওলানা মুহাম্মাদ মাজহার। বর্তমানে তার বয়স ৭৭ এর কোঠায়। আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, ঐ জামাতে হাজারের কাছাকাছি ছাত্ররা ভর্তিপরীক্ষা দিয়ে থাকে। এর মধ্যে কমবেশি এ ‘শ জন বাছাইপর্বে নির্বাচিত হন। আজব কারিশমা! তাকেও আল্লাহ কবুল করেছেন। কথায় আছে “হিম্মাতে মরদাঁ মুদাদে খোদা”।
বিদায়কালে একদিন বাদ আসর চা পান করতে দোকানে গেলাম, যদিও আমরা বাঙালিরা চা পান করিনা। কাকতালীয়ভাবে দাদাও সেখানে চা পানের উদ্দেশ্যে এসেছেন। আমার পাশেই বসলেন। তার জন্য চা-বিস্কুটের অর্ডার দিলাম এবং কথা বলা শুরু করলাম। সেদিন বেশ ভালই লাগছিল।
এ বছর (২০১৮-২০১৯) তিনি আরবি সপ্তম তথা মিশকাতে পড়ছেন। "জ্ঞান অর্জনের জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট বয়স কিংবা নেই কোনো সময়ের পরিসীমা" তিনি বৃদ্ধ বয়সে এ কথা বাস্তবায়ন করে বিশ্ববাসীকে দেখিয়েছেন।
সহিহ বুখারিতে আছে, হজরত ওমর ফারুক রা. বলেন, তোমরা নেতৃত্বে আসার আগে আগে দীনি জ্ঞান অর্জন করো। ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইসমাইল বুখারি রহ. এ বাক্য নকল করে বলেন, আমি বলি, নেতৃত্ব পাওয়ার পরেও ইলম অর্জন করো। অর্থাৎ ইলম শিখার নেই কোন বয়সসীমা।
লেখক: খাদিমুত তাদরিস, জামিয়া কাসিমিয়া দারুল উলুম, নারায়ণগঞ্জ।
আরএম/