জুবায়ের রশীদ
শিক্ষার্থী ও লেখক
জুলুমের ইতিহাস অনেক পুরনো। আদম পুত্র কাবিল কর্তৃক হাবিলকে হত্যার মাধ্যমে যার সূচনা। পবিত্র কুরআনে যে ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। এছাড়াও ফেরাউন হামানসহ অতীতের জবরদস্ত জালেম ব্যক্তিদের কাহিনী কুরআন বর্ণনা করেছে। বিশ্ববাসীর উপদেশ গ্রহণের জন্যই।
জুলুমের ধারাবাহিকতা ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে বারবার এবং বহুবার। আশ্বাসবাণী হলো প্রতিটি জুলুম দমনের জন্যই এসেছে সাহসের ঘোষণা। ব্যক্তির জুলুম থেকে ব্যক্তি, গোত্রের জুলুম থেকে গোত্র যেমন মুক্তি পেয়েছে, তেমনি রাষ্ট্রের মস্ত জুলুম থেকে স্বাধীন হয়েছে আরেকটি রাষ্ট্র। যার নিকট উদাহরণ আমাদের জন্মভূমি প্রিয় দেশ বাংলাদেশ।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের লড়াই ছিল, জালেমের বিরুদ্ধে মাজলুমের লড়াই। দীর্ঘ লড়াই সংগ্রাম আর রক্তনদী পেরিয়ে জালেমের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পেয়েছে এই দেশ।
আমাদের রাষ্ট্রের এই স্বাধীনতার দিনে আজ স্বাধীনতার মহার্ঘ ও মাহাত্ম নিয়েই কথা বলব।
স্বাধীনতা। একটি শব্দ। চেতনার উৎস। কোটি প্রেরণার বাতিঘর। অনিঃশেষ আলোর গোলক। সভ্যতার সূতিকাগার। স্বাধীনতা প্রতিটি ব্যক্তির প্রাণের আকুতি। আত্মার ঘোষণা। চিরকালীন মুক্তির ঠিকানা। শান্তির ফল্গুধারা। সুখের বার্তা বহে আনা কোকিলের কুহু ডাক।
স্বাধীনতা একটি গনগন সূর্য। যে সূর্য থেকে সদা ঠিকরে বের হয় বিজয়ের রোদ। যে রোদ আলো হয়ে ছড়িয়ে পড়ে জনপদের পথে গাঁয়ে, নগর শহর ও বিস্তৃত মানচিত্রে। স্বাধীনতা প্রতিটি নাগরিকের মনন ও চিন্তার উঠোনে ছড়িয়ে দেয় অফুরন্ত সুবাস।
প্রতিটি জাতি প্রতিটি রাষ্ট্র মাথা উঁচিয়ে দাঁড়ানোর পূর্বশর্ত হলো তাদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। পরাধীনতারর শিকল ভেঙে বেরিয়ে আসা। তবেই উন্নতি ও উৎকর্ষের সিঁড়ি বেয়ে সফলতার শিখরে পৌঁছে। স্বপ্নের রঙে রাঙিয়ে তোলে নিজেদের দেশ। পৃথিবীর ইতিহাসের দিকে দিকে তাকালে এই তো দেখি আমরা।
অপরদিকে যারা আজও গোলামির জিঞ্জির থেকে মুক্ত করতে পারেনি নিজেদের, তাদের দুর্দশা দুর্গতি চোখের সামনে জ্বলজ্বল করছে বৈ কি। জাগতিক দৃষ্টি থেকে শুধুই নয় ইসলামের উদার ও প্রসারিত আঙিনায়ও স্বাধীনতার স্বতন্ত্র গুরুত্ব রয়েছে। রয়েছে অনন্য বৈশিষ্ট্য। ইসলাম দিয়েছে স্বাধীনতার অনুপম শ্রেষ্ঠত্ব।
ইসলামের সোনালি ইতিহাসের পাতায় চোখ ফিরালে আমরা এমন অনেক যুৎসই উপমা খুঁজে পাই। জ্বলন্ত ও জাজ্জ্বল্য একটি উদাহরণ, মক্কা বিজয়ের কথা।
হিজরী অষ্টম বর্ষ। রমযান মাস। নবীজি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপন মাতৃভূমি মক্কাকে শত্রুদের হাত থেকে মুক্ত করবেন। অভিপ্রায় করেছেন আবার ফিরে যাবেন সুদূরে ফেলে আসা আপন জন্মভূমিতে।
আট বছর আগে মক্কার কাফির মুশরিকদের অকথ্য নিপীড়নের শিকার হয়ে হিজরত করেছেন মদিনায়। দশ হাজার সাহাবার একটি কাফেলা নিয়ে মদিনা থেকে বের হলেন নবীজি। যুদ্ধ করবেন তিনি ও তারা। শত্রুরা ভয় পেল। ভীত হলো। অবশেষে বিনা রক্তপাতে স্বাধীন হলো মক্কা।
বিজয় বেশে রাসুল প্রবেশ করলেন নিজ শহরে। আনন্দের সঙ্গীত গেয়ে ফিরছেন সবাই। হৃদয়ে হৃদয়ে, ঘরে ঘরে সে কী আনন্দ! সে কী উৎফুল্লতা। সে কী ধ্বনি প্রতিধ্বনি! পৃথিবীর ইতিহাসে অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে আছে মুসলমানদের মক্ক বিজয়ের কাহিনী।
একটি সফল মুক্তিযুদ্ধের অদ্বিতীয় উপমা হয়ে জেগে আছে। রাসুল সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হয়েছেন একজন সংগ্রামী বিজেতা। সাহসী বীর। যিনি জন্মভূমিকে শত্রুদের কালো হাত থেকে মুক্ত করে হয়েছেন স্বাধীনতার স্থপতি। তিনি আমাদের নবী। আমাদের ধ্যান ও জ্ঞান। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব। মানবতার আশিষ।
১৯৭১ আমাদের জাতীয় ইতিহাসের স্মারক অধ্যায়। হাজার বছরের বাঙালির শ্রেষ্ঠতম বছর। আনন্দের। বিয়োগের। সুখের। কষ্টের। বিজয়ের। আত্মত্যাগের। আমাদের বিগত ও অনাগত সমস্ত সফলতার শিকড় এই ৭১।
দীর্ঘ নয়টি মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর অত্যাচারী পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী হাত থেকে মুক্ত হয় সুজলা সুফলা শষ্যের আকর এই কাংলাদেশ। বাংলাদেশের সাতচল্লিশ হাজার গ্রাম। ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের মানচিত্র। বিনিময়ে রক্তের গঙা বহেয়ে। লাশের পাহাড় জমেছে। আগুনে পুড়েছে মাটি ও মানুষ আমদের সম্পত্তি।
মহান এই মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গীত সকল শহীদের মাগফিরাত কামনা করছি। স্বদেশ ও মাতৃভূমির তরে জীবন দানকারী শহীদানের কবরে বর্ষিত হোক প্রভুর অনন্ত রহম করম। আমাদের একনিষ্ঠ প্রার্থনায় সুবাসিত হোক জাতীয় বীরদের আত্মা।
মিনার সংস্কৃতি এবং অধুনা গানবাদ্যের বিপুল অশ্লীল মহরা থেকে মুক্তি পাক তারা। যারা আমাদের কল্যাণে রক্ত খুইয়েছেন বুক থেকে। জীবন বিলিয়েছেন অকাতরে।
হযরত রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তার প্রিয় সাহাবায়ে কেরাম জন্মভূমি মক্কাকে জালিম শাসক আর অত্যাচারীদের হাত থেকে মুক্ত করেছেন। ৭১ সালে লাখো বাঙালি তাদের জীবন ও রক্তের বিনিময়ে মুক্ত করেছেন স্বদেশ। অর্জন করেছেন স্বাধীনতা।
এ দুটো ইতিহাস ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে শুধু সময়ের ব্যবধানই পরিলক্ষিত হয়। মক্কা থেকে বাংলা মুলুক, স্বাধীনতা সর্বকালে সর্বযুগে একই আবেদন নিয়ে উপস্থিত হয়েছে। স্বাধীনতার জয় হোক। স্বাধীনতা জিন্দাবাদ।
লেখক : শিক্ষার্থী, ইফতা বিভাগ, আকবর কমপ্লেক্স মাদরাসা, মিরপুর, ঢাকা।
আরএম/