সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
চিকিৎসকরা বছরে দুইবারের বেশি বিদেশ যেতে পারবেন না ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের

ঘরের বিতর্ক বন্ধ করুন: শ্বেতাঙ্গ জঙ্গি ট্যারেন্ট থেকে শিক্ষা নিন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

প্রকৌশলী আলী আবদুল মুনতাকিম
লেখক ও কুরআন গবেষক

আমার প্রিয় ও সম্মানিত পাঠকগণ জানেন আমি চলমান বিষয়ে কিছু লেখার চেষ্টা করি।অস্ট্রেলিয়ার ২৯ বছর বয়সী শ্বেতাঙ্গ জঙ্গি চরম বর্ণবাদী সন্ত্রাসী ট্যারেন্ট কর্তৃক নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের ২টি মসজিদে পরিকল্পিত হামলা করে ৫০জন মুসুল্লি হত্যার বিষয়ে লিখতাম।কিন্তু আওয়ার ইসলাম এ বিষয়ে আমার ভিডিও আলোচনা প্রচার করায় আর লিখিনি।

সাক্ষাৎকারটি হয়ত অনেকেই দেখে থাকবেন। না দেখলে, নিচের লিংক থেকে দেখার অনুরোধ রইল।

ট্যারেন্ট, দুনিয়ার ইতিহাসে জঘন্য সন্ত্রাস, খুন বা বিষ ছড়ানো ৭৪ পৃষ্ঠার বই বা ইশতেহার ফেসবুকে পোস্ট করে কিছু সময়ের মধ্যে লক্ষ মানুষকে লাইভে রেখে মসজিদে ঢুকে ব্রাশফায়ারে মুসুল্লিদের হত্যাকান্ড অবাধে চালাতে পারল, ফেসবুক কর্তৃপক্ষ কোন ভূমিকা নিল না, নিউজিল্যান্ডকে কোন বার্তা দিল না, কোন সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ল না, ১৭ মিনিটের বিভৎস খুনলিলায় কোন পুলিশ আসল না, আমাদের গর্বের ধন ক্রিকেট খেলোয়াড়েরা মৃত্যুর মুখে যাচ্ছিল পুলিশ প্রটেকশন ছাড়াই, এসব ভেবে শক্ত ভূমিকা রাখতে মুসলিমবিশ্বকে দেখা যাচ্ছে না।

ট্যারেন্ট নিজেই তার ছবি প্রকাশ করল, তার হামলা করা, মুসলিম নিধন করা, নারী শিশু হত্যায় তার আফসোস নাই একথা বলা, অন্যদের উৎসাহিত করাসহ সব কিছু তার বইতে লিখে দিল।অথচ পুলিশ তার ছবি মিডিয়ায় দেখাচ্ছে না। তাহলে তাকে পুলিশ যে ধরতে পারেনি এটাই কি সত্য? ভয়াবহ ব্যাপার।

বিশ্ববাসী তার ছবি দেখতে চায়, কারণ এটা আস্বস্ত হওয়ার জন্য যে, সে ধরা পড়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের খুশি খুশি বিবৃতিতে কেউ খুশি নয়। ট্যারান্ট পালিয়ে বেঁচে থাকলে তো ট্রাম্প তার হিরোকে পেয়ে যাবে।

তার বইতে সে বলেছে, মরার জন্যই সে এসেছে, যদি বাঁচে তাহলে সে বাকি কাজ করবে। সেটা কী? বইয়ের ৪০ পৃষ্ঠায় বলেছে, তার এই হত্যামিশন তার পূর্বের মুসলিম হত্যাকারীদের গিফট, এটা চলবে।

kill london mayor Sadeque, kill Angela markel, kill Erdogan. এভাবেই শব্দগুলো উল্লেখ আছে। এরকম একটি জঘন্য বই কেন নিষিদ্ধ হচ্ছে না? তাহলে তার মিশন চলবে? কোথায় মুসলিম বিশ্ব? কী ভূমিকা রাখলেন সৌদি আরব, মিশর, আমিরাত, জর্দান, ইরান, কুয়েত এর ঘুমন্ত নেতারা- রাজারা? কয়দিন চলবে ভোগবিলাসিতা!

এখানে মুসলমানরা আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীকে, পোপ পলকে তাদের শোক-বেদনা প্রকাশের জন্য। তারা জানে মুসলমানরা কোন চার্চে হামলা চালায় না, ইসলাম শান্তির ধর্ম।

শেতাঙ্গ জঙ্গি ট্যারান্ট এর ইশতেহার পড়লে বুঝা যায় মুসলমানদের ঐক্য ছাড়া সামনে কোন পথ খোলা নেই। সে একা কাজটি করেনি। কিন্তু মুসলমানদের এক হওয়ার লক্ষণ কই?

দেশের কথাই বলি। খুব সাধারণ বিষয় নিয়ে তারা নিজেরাই বিশেষ করে আলেমগণ একে অপরের প্রতি ফতোয়া শুরু করে দেন। শিরোনামে দেয়া সাম্প্রতিক জ্বলন্ত একটি বিতর্কের কথা বলি। রাসুল সা. এর শারীরিক গঠন ‘Six-pac’ নিয়ে।

মুফাস্সির মিজানুর রহমান আল আযহারী তার একটি মাহফিলে হজরত মুহাম্মদ সা. এর অপূর্ব, অতুলনীয় সুন্দর শারীরিক গঠন বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, রাসুল সা. এর পেট বুকের চেয়ে উঁচু ছিল না, সুঠাম সুন্দর ছিল, যাকে বলে সিক্স-প্যাক। বাস শুরু হয়ে গেল বিতর্ক। যদিও মিজানুর রহমানের এ তুলনাটাও করা ঠিক হয় নি। বেশি পন্ডিতি দেখাতে গিয়েছেন। সে কথা পরে বলছি।

আরেক বক্তা এনায়তুল্লাহ আব্বাসী পরের এক মাহফিলের প্রশ্নোত্তরে ফতোয়া দিলেন, এ কথা বলে, ‘মৌলভী মিজানুর রহমান কুফর করেছে, কাফের হয়ে গেছে, তাকে তওবা করে মুসলমান হতে হবে, আল্লাহর কাছেও মাফ চাইতে হবে জাতির কাছেও মাফ চাইতে হবে।

কোথা থেকে এসব বক্তা জন্ম নিছে বাংলাদেশে। তিনি সিক্স-প্যাক এর ব্যাখ্যা দিলেন ‘ব্যায়ামবীরের পেশীবহুল শরীর’ নাকি সিক্স-প্যাক। আব্বাসীও জানেন না এ শব্দ দুটোর অর্থ কী? অথচ তারই অপর আলেম ভাইকে কাফের বানিয়ে ফেললেন। সারা দেশে এটাই এখন ওয়াজের খোরাক। হায় আফসোস!! হায় আফসোস!!!

(আব্বাসী যদিও মূল ধারার আলেম নয় কিন্তু এ ধরনের ছোটখাট বিষয় নিয়ে মূল ধারার আলেমদের মধ্যে বিরোধ হয়ে থাকে, অতি জজবার কারণে অনেকেই হুট করে এটা সেটা বলে ফেলেন বা করে ফেলেন যা পরে বিদপ ডেকে আনে, সম্প্রতি ধর্মপ্রতিমন্ত্রীর ব্যাপারে হুজুগে এক শ্রেণি মিলাদ নিয়ে না জেনে কোনো পত্রিকায় না দেখে প্রচার শুরু করে দিল। যার ফলাফল কী হলো আমরা তো চাক্ষুস দেখলাম)

এবার আসুন আমি বুঝিয়ে বলি সিক্স-প্যাক কী! কথাটি এসেছে পানীয় এর ৬ টি বোতল এর (ওয়াটার বা জুস এর প্লাস্টিকের বোতল) টাইট-ফিট যে প্যাকেট তা থেকে। এই প্যাকেট টি জিরো ফিগার, একদম টান টান করে প্যাকেট বানানো। প্যাকটিতে ৬ টি বোতল থাকে। দোকানেই দেখবেন।

শরীর এ রকম টাইট-ফিট বা ইউনি ফরমাল বা জিরো ফিগার বুঝানোর জন্য Six- Pac body বলে। আরও অর্থ আছে, দেহ টান করলে পেটে ছয়টি ভাঁজ পরে, বা হাত পায়ের ছয়টি মাংসপেশিকে টাইট করে ফুলাতে পারা বডি বিল্ডার গন সিক্স প্যাক দেহধারী।

তবে একে সুঠাম দেহ বললেও, চলমান সুস্থ দেহ বলে না। কারণ এ রকম শরীর সবসময় ধরে রাখা যায় না। প্লেয়ার, কুস্তিগীর, জিমনাস্টিক, দৌড়বিদগণ কিছুকাল এরকম শরীর করে রাখেন। ডাক্তারগণ এ রকম শরীরের পক্ষে নন।

যেমন ঐ প্যাকেটে আংগুলের বা কাঠির গুঁতো দিলে পটাশ করে ফেটে যাবে একটু লোজ হলে ফাটে না। তাই শরীরের কিছুটা ফ্লেক্জিবিলিটি লাগে, না হয় দ্রুত অসুস্থতায় পড়তে হয়।

ডাক্তারের কথা দেখুন: Six-pack abs are tempting but not necessarily healthy. Unfortunately, those aspiring to get that perfect body do not realise that it is very difficult to achieve and then maintain, that kind of an impossibly sculpted look, all the time. ... She elaborates, “Maintaining a six-pack isn't healthy for your body.

তাই Six- pac body সার্বজনীন নয়। যেটি সার্বজনীন নয় সেটি রাসুল সা. এর শারীরিক গঠন ছিল, তা বলতে হলে মিজানুর রহমানকে সঠিক রেফারেন্স দিতে বলব। যাক, হয়ত মিজান সাহেব সেভাবে কথাটি বলেন নি। তাই বলে তাকে কাফের বলতে হবে কেন।

কিছুদিন আগে চরমোনাই এর ফয়জুল করিম সাহেবও ওসমান রা. সম্পর্কে কিছু কথা বলেছিলেন। তার উদ্দেশ্যও খারাপ ছিল না। তাকেও যাচ্ছেতাই গালাগাল শুনতে হল। তিনি ক্ষমা চাওয়ার পরেও কেন ক্ষমা পাবেন না? আসলে একশ্রেণির আলেমদের কোন কাজ নেই? নেই কাজ তো খই ভাঁজ। তারা খই ভাঁজে।

প্রতিনিয়ত নাস্তিকরা আল্লাহপাক ও রাসুল সা. কে গালি দিচ্ছেন, লক্ষ ভিউয়ার যুবক বিভ্রান্ত হচ্ছে। এসব নিয়ে তো আপনাদের তো কোনো ভূমিকা দেখছি না।

আমি নিজে মাহফিলে ৩৫/৪০ বছর আগে শুনেছি হুজুর বলছেন, জিহাদের ময়দানে আমার নবী ছিলেন ‘Commender -in-Chief’ হুজুরের বলা এই পদবী তো হাদীসে নাই। তাহলে তিনি কাফের হয়ে গেলেন। ‘নবীর Dynamism ছিল অতুলনীয়’, ‘তিনি ছিলেন সবার চাইতে Telented. ‘সিরিয়ায় তিনি মেসেজ পাঠালেন’ এই ধরনের শব্দ বা কথাগুলোর ব্যবহারে কোন আলেম ওয়ায়েজ একমত নাও হতে পারেন। তাই বলে কাফের ফতোয়া?

আসলে তখন হাফেজ্জী হুজুররা ছিলেন, শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক ছিলেন, মাওলানা ফজলুল হক, মুফতি আমিনী, মুফতি আব্দুর রহমানগণ ছিলেন। পীর আজিমউদ্দিন, পীর নেসারুদ্দীন, পীর জৈনপুরী ছিলেন। মতপার্থক্য থাকলেও তারা একটা ধারায় চলতেন। কথায় কথায় কঠোর সিদ্ধান্ত একটু কঠিন ছিল। এখন কি সেই ধারা লুপ্ত হবার পথে?

দয়া করে ফিরকাগুলো বাদ দিন, আপনারা নায়েবে রাসুল সা. হিসেবে, দ্বীনের ঝান্ডাবাহী হিসেবে এক হোন। আপনারা এক হলে বিশ্বও দেখবে।

ফ্রান্সের শার্লী আব্দু তে হামলার পর (যেটি মুসলিমরা সমর্থন করে না) গোটা বিশ্ব এক সাথে মার্চ করেছে। নিউজিলেন্ডের হত্যাকান্ডের পর এখনও ৬৫ টি মুসলিম দেশকে এক কাতারে মার্চ করতে দেখা যাচ্ছে না। এখানেও নানারকম রাজনৈতিক ফিরকা।

সাদা জঙ্গি বর্ণবাদী খুনি ট্যারেন্টদের শুরু হওয়া হত্যালীলার মোকাবেলায় মুসলিমদের এক হওয়ার আর কোন বিকল্প আছে কি?


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ