শওগাত আলী সাগর
সাংবাদিক
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলে এক মানব শিশুর জন্ম এবং অসহায় মায়ের শিশুটিকে ট্রাংক এর ভেতর লুকিয়ে রাখার ঘটনায় আমাদের মানবিকতাবোধের ঘাটতিটাকেই কি প্রবল করে তুলেনি? বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি কী তদন্ত করবে, তাদের তদন্তের পরিধিটাই বা কি তা আমার জানা নেই। জানার প্রয়োজনও বোধ করছি না।
আমার শুধু মনে হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি মেয়ে তার মা হওয়ার সময়টায় তার দিকে বাড়িয়ে দেয়ার মতো একটি সহানুভূতির হাতও পেলো না কেন?
মেয়েটি তো পেটে সন্তান ধারণ করেই সঙ্গে সঙ্গে সন্তান জন্ম দিয়ে ফেলেনি যে আর কেউ টের পেলো না। মেয়েটি অন্তসত্ত্বা হয়েছে, এই অবস্থায় শারিরীক - মানসিক অসম্ভব রকমের চাপ নিয়ে দিনের পর দিন ক্লাশ করেছে, হলে থেকেছে, হলের করিডোরে হেঁটেছে।
পুরো সময়টায় নিজের ভেতরকার দুঃসহ যন্ত্রণাগুলো বলার মতো, শারিরীক পরিবর্তনের কষ্টগুলো বলার মতো একটি মানুষ, একটি মেয়েকেও কি সে পাশে পায়নি?
সদ্য জন্ম দেয়া সন্তানকে ট্রাংক এর ভেতর রেখে একজন মাকে হাসপাতালে ছুটতে হয়- অথচ তার দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার মতো একটি মানুষও পাওয়া যায় না? এ কেমন মনুষ্য সমাজ তা হলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে? কেমন মেয়েরা থাকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলে? কেমন মেয়েরা পড়ে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে?
মেয়েটি কেন অন্তসত্ত্বা হলো- দয়া করে সেই প্যাঁচাল এর ভেতর টেনে আনবেন না, সেটা অন্য আলোচনা। সেই আলোচনায় যেই পুরুষটি মেয়েটিকে সন্তান দিয়ে সটকে পড়েছে- তাকেও টানতে হবে, সেই পুরুষের মুখ এবং মুখোশটাও উন্মোচন করতে হবে।
তার আগে আমি শুধু বুঝতে চাচ্ছি- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যেই হলে মেয়েটি থাকতো, ওই হলে, তার বিভাগে, বিশ্ববিদ্যালয়ে একজনও কি মানবিক মানুষ ছিলো না? একজনও মানবিক পুরুষ ছিলো না? একজনও মানবিক নারী ছিলো না? ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে তা হলে কারা ছিলো? কারা আছে?
লেখক: টরন্টোর বাংলা পত্রিকা 'নতুনদেশ'- এর প্রধান সম্পাদক
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)