সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
চিকিৎসকরা বছরে দুইবারের বেশি বিদেশ যেতে পারবেন না ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের

'দেওবন্দ পড়তে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা ভিসার জন্য এখন থেকেই আবেদন করুন'

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ভারতের দেওবন্দে অবস্থিত দারুল উলুম দেওবন্দ। বিশ্ববিখ্যাত এই ইসলামি বিদ্যাপিঠ সারা বিশ্বের শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের ক্যাম্পাস। ভারত লাগোয়া এই ৫৬ হাজার বর্গমাইল বাংলাদেশের কওমি শিক্ষার্থীদেরও স্বপ্ন জুড়ে আছে দারুল উলুম দেওবন্দ।

কিন্তু ছাত্র হিসেবে বৈধভাবে দেওবন্দে যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় আগ্রহী শিক্ষার্থীদের।

তারা অনেক সময় টুরিস্ট ভিসা বা অন্য কোনো পন্থায় দেওবন্দ পৌঁছার চেষ্টা করেন। কেউ কেউ তাতে সফল হলেও অনেকেই ধরা পড়ে যান সে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর হাতে। অনেককে মাসের পর মাস জেলেও থাকতে হয়েছে।

গত বছর এমনই একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে সমস্যা সমাধানের দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছিল কওমি মাদরাসাকেন্দ্রিক বেশ কিছু সংগঠন। তখন কিছুটা অগ্রগতি হলেও পরে থেমে যায় কার্যক্রম। দীর্ঘদিন পর আবারো এ সমস্যার সমাধানে কাজ শুরু হয়েছে।

গত বুধবার দেশের সর্ববৃহৎ কওমি শিক্ষা বোর্ড বেফাকের সহকারী মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক ও তেজগাঁও রেলওয়ে জামিয়া ইসলামিয়ার শাইখুল হাদিস ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক আল্লামা ড. মাওলানা মুশতাক আহমদসহ ৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সচিব মো: আলমগীরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিষয়টি সমাধানের জন্য লিখিত আবেদন জানান।

আবেদনের ফলাফল কী হবে, তার প্রক্রিয়া কী, দেওবন্দের স্টুডেন্ট ভিসা আসলেই মিলবে কী না ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলেন 'দেওবন্দের স্টুডেন্ট ভিসা' লাভের চেষ্টা চালিয়ে  যাওয়া প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য তেজগাঁও রেলওয়ে জামিয়া ইসলামিয়ার শাইখুল হাদিস ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক ড. মাওলানা মুশতাক আহমদ।

গত (বৃহস্পতিবার)  দুপুরে আগারগাঁও ইসলামিক ফাউন্ডেশন তাঁর কর্মস্থল অফিসে সাক্ষাৎকার নেন তরুণ আলেম ও সাংবাদিক আমিন ইকবাল ও আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকমের যুগ্ম বার্তা সম্পাদক হাসান আল মাহমুদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দেওবন্দের স্টুডেন্ট ভিসার জন্য কাজ করে যাওয়া তরুণ আলেম  মাওলানা ওমর ফারুক।

দেওবন্দ পড়তে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন পূরণে সম্প্রতি আপনাদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল দেওবন্দের স্টুডেন্ট ভিসা পেতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন। এ বিষয়টা কতোটুক কার্যকর হবে বলে মনে করছেন?

ড. মুশতাক আহমদ: আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের সাথে সাক্ষাৎ করে লিখিতভাবে বিষয়টি উপস্থাপন করেছি। শিক্ষা সচিব সাহেব বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ইন্ডিয়ান হাই কমিশন, দিল্লিতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাই কমিশন ও কলকাতায় অবস্থিত ডেপুটি হাই কমিশনে দেওবন্দ যেতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের স্টুডেন্ট ভিসা প্রদানের জন্য লিখিতভাবে নির্দেশনা দেন।

এ বিষয়ে আমাদেরও দুর্বলতা ছিল, আমরা যখন সরকারের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গকে দেওবন্দ পড়তে আগ্রহী  বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের   অবস্থা বর্ণনা করলাম, তখন তাঁরা খুব অবাক হবার সুরে বলে ওঠলেন- 'বলেন কি! এমন অবস্থা হয় তা তো   আমাদের জানা ছিল না'!

মন্ত্রণালয়ের সচিব  সাহেবসহ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ বিষয়টা গুরুত্বের সাথে আমলে নিয়েছেন।  তাই আমরা দৃঢ়ভাবে  আশা করি ইনশাআল্লাহ তা  কার্যকর হবেই।

বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদেরকে দেওবন্দের স্টুডেন্ট ভিসা ভারত সরকার দিবে বলে মনে করছেন কি?

ড. মুশতাক আহমদ: আমাদের সরকার বাংলাদেশের কওমি মাদরাসাগুলোকে স্বীকৃতি দিয়েছে কিন্তু ভারতের দারুল দেওবন্দ আদলের উপর ভিত্তি করে। তাছাড়া ভারত সরকারের সাথে বর্তমান সরকারের সম্পর্ক আগের তুলনায় বেশ ভালো। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা তাদের দেশে গিয়ে পড়বে এটা তো ভারতেরও গৌরবের। এ বিষয়ে আশা করি, আমাদের সরকার ভারত সরকারকে বুঝাতে সক্ষম হবেন।

আমাদের কাজ ছিল আবেদন করা, আমরা তা করেছি। আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ভেবে নিয়েই নির্দেশনা জারি করেছে। ভারতীয় হাইকমিশনে কওমি সনদের স্বীকৃতি আইনের অনুলিপিও পাঠিয়েছে। এখন ভারত সরকারের বন্ধুত্ব সম্পর্ক আচরণের আশাবাদি বাংলাদেশ সরকার।

শিক্ষার্থীরা তাহলে এখন থেকে আবেদন করলে ভিসা পাবে?

ড. মুশতাক আহমদ: শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব এক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ম মেনে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে বলেছেন। তাই, দেওবন্দ পড়তে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা অবশ্যই যেন এখন থেকেই আবেদন করা শুরু করে।

দেওবন্দের ভিসা পেতে সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোয় কিন্তু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ফাইল চলে গেছে। আর ফাইল তখন থেকেই কার্যকর হওয়া শুরু হয়, যখন এর চাহিদার লোকেরা সে ফাইলের ফলাফল পেতে সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোতে যায়।

 

আমাদের শিক্ষার্থীদের এখন অবশ্য কাজ হলো, ভিসার জন্য আবেদন করা। ভিসা নিয়ে কেউ কিছু বললে সরাসরিই যেন বলে দেয়, এ বিষয়ে আপানাদের অফিসে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমরা সেরকম তথ্য পেয়েই স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার জন্য আবেদন করতে এসেছি। তারপর দেখা যাবে, ভারতীয় দূতাবাসের পক্ষ থেকে কী জবাব আসে।

আবেদন করার প্রক্রিয়া কী?

ড. মুশতাক আহমদ: আবেদন করবে ইন্ডানিয়ান এম্বাসিতে। স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করার নিয়ম সব দেশে একইরকম। তবে, পরামর্শ হলো, দেওবন্দের ওয়েবসাইট দেখে নেয়া।

Admission Darul Ulum Dewband এ ওয়েবসাইটে ভর্তির জন্য বিদেশি ছাত্রের কী কী কাগজপত্র লাগবে তার বিবরণ দেয়া আছে।

স্টুডেন্ট ভিসার জন্য প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ি অন্যান্য দেশে ভর্তি-ইচ্ছুক ছাত্ররা যেভাবে আবেদন করে সেভাবেই করবে।
আর জরুরি কী কী কাগজ লাগবে তা ওই ওয়েবসাইট থেকে যে কেউ জানতে পারে।

আমাদের দেশ থেকে (জেনারেল বিষয়ে) যারা বাইরের দেশে পড়তে যায়, সাধারণত তাদের মেট্টিক, ইন্টারমিডিয়েট সার্টিফিকেট ইত্যাদি ক্লাস স্তর অনুযায়ি সার্টিফিকেট এবং ভাষাজ্ঞানের সার্টিফিকেট ইত্যাদি কাগজপত্র সহ এম্বাসিতে আবেদন করতে হয়। কিন্তু দেওবন্দে ভর্তির জন্য তো এ সিস্টেম না। দেওবন্দে ভর্তি হতে হলে আগে নেটের মাধ্যমে দেওবন্দে এ্যপ্লিকেশন করতে হয়। এই এ্যপ্লিকেশনের রিপ্লাইয়ে দেওবন্দ কর্তৃপক্ষ একটা ছাড়পত্র দেয় যে, ঠিক আছে তুমি আসো। ভর্তি পরীক্ষা দেও। তারপর তুমি রেজাল্টে যে ক্লাসের উপযুক্ত, সে ক্লাসেই পড়বে।

এরপরও যদি কোনো শিক্ষার্থীর কনফিউশান হয়, তাহলে এই কয়েক দিনের মধ্যে দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে বড় বড় আলেমগণ বাংলাদেশে আসতেছেন। তাঁদের কাছে আমাদের ছাত্ররা দলবেঁধে যাক। গিয়ে বলুক, আমরা তো দেওবন্দ পড়তে চাই, আমাদের সরকার স্টুডেন্ট ভিসা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। এখন আপনারা বলুন, আমরা কীভবে আবেদন করলে আমাদের জন্য ভিসা মিলবে। অথবা, এ ব্যাপারে সরাসরি দেওবন্দের সাথেই আলাপ করা।

এছাড়া হাজারও রাস্তা খোলা আছে, যদিও কেউ দেওবন্দ যেতে চায়। আমাদের শিক্ষার্থীরা তো নিজেদের অধিকার আদায়ের ব্যাপারে অলস। এদের এক্টিভ হতে হবে। নিজেদের হক কেউ এসে দিয়ে যাবে না। আদায় করে নিতে হয়। প্রয়োজনে রাস্তায়ও নামতে হয়। ওরা তো নিজেদের অধিকার আদায়ে রাস্তায় নামে না।

ভারতীয় দূতাবাস যদি ভিসা না দেয়?

ড. মুশতাক আহমদ: দেওবন্দ পড়তে ইচ্ছুক আমাদের শিক্ষার্থীরা যেন দেওবন্দের স্টুডেন্ট ভিসা পেতে যথানিয়মে চেষ্টা অব্যাহত রাখে। এ কথাটা সচিব মহোদয় মৌখিকভাবে বলে দিয়েছেন।

তিনি আরো বলেছেন, বিষয়টি যেহেতু একান্তই নতুন, তাই আপনারা এ ব্যাপারে শিক্ষার্থীরা  কোথাও আইনগত সমস্যায় পড়লে আমাদের অবহিত করবেন। আমরা দ্রুত সমাধান করে দেওয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

আরএম/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ