মুহাম্মদ ছফিউল্লাহ হাশেমী
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দু’টি মসজিদে গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজ চলাকালে এক খ্রিস্টান সন্ত্রাসীর নির্বিচারে গুলিতে তিন বাংলাদেশীসহ ৪৯ জন নিহত ও অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
স্থানীয় সময় বেলা দেড়টার দিকে ক্রাইস্টচার্চের আল নূর মসজিদে মুসল্লিদের ওপর হামলা চালায় এই বন্দুকধারী সন্ত্রাসী। পরে কাছাকাছি শহরতলি লিনউডের মসজিদেও হামলা চালানো হয়।
হামলা শুরুর পাঁচ মিনিট পর মসজিদের পথে রওনা হওয়ায় বেঁচে গেছেন নিউজিল্যান্ড সফররত বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সদস্যরা। হামলায় জড়িত সন্দেহে চারজনকে গ্রেফতার করেছে দেশটির পুলিশ। এদের মধ্যে আল নূর মসজিদে হামলাকারী ব্যক্তি ২৮ বছর বয়সী ব্রেন্টন ট্যারান্ট অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক।
বিশ্ব নেতৃবৃন্দ এ সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানালেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হামলার ঘটনায় নীরব রয়েছেন।
ক্রাইস্টচার্চে ডিনস এভিনিউয়ের আল নূর মসজিদে যখন জুমার নামাজের জামাত শুরু হয়, তখন সেমি অটোমেটিক রাইফেল নিয়ে মুসল্লিদের ওপর হামলে পড়ে সন্ত্রাসী ব্রেন্টন ট্যারান্ট। ‘মুসলমান, আজ তোমাদের খুন করতে যাচ্ছি’ বলে সে চিৎকার করছিল আর অনবরত গুলির পর গুলি করে যাচ্ছিল।
এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ার সময় মসজিদের ভেতর থেকে সামাজিক মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করে এই শ্বেতাঙ্গ সন্ত্রাসী। তারও আগে টুইটারে ৭৩ পাতার ইশতেহার আপলোড করে এই হামলাকারী।
খুনি ব্রেন্টন ট্যারান্টের আপলোড করা সাড়ে ১৬ মিনিটের ভিডিওতে দেখা যায়, সে তার বাসা থেকে গাড়ি ভর্তি অস্ত্র নেয়। তারপর গাড়ি চালিয়ে মসজিদে যেয়ে ঠান্ডা মাথায় প্রতিটা মানুষকে হত্যা করে। সেখান থেকে বের হয়ে রাস্তায় ও পার্কিং এ অন্য যেসব মুসলিম ছিল তাদেরও হত্যা করে। তারপর আবার নতুন ম্যাগজিন ভরে মসজিদের ভেতর ঢুকে মৃত ও আহত মানুষদের উপর নির্বিচারে গুলি চালাতে থাকে। পুরো সময় গান বাজছিল। তারপর সে তার গাড়িতে উঠে চলে যায় এবং যাবার সময় পথে কয়েকবার গাড়ি থামিয়ে মানুষকে গুলি করে।
মুসলমানদের প্রতি এই ভয়াবহ ঘৃণা, সারাবিশ্বে অন্য সকল ঘৃণা ও হত্যাযজ্ঞকে ছাড়িয়ে গেছে।
ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে তিন বাংলাদেশীসহ সকল শহীদগণের পরিবারের প্রতি আমরা গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। অল্পের জন্য রক্ষা পাওয়া বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের সদস্যদের নিরাপত্তার বিষয়টি নতুন করে ভাবতে হবে।
এ ধরনের ঘৃণ্য সন্ত্রাসী হামলার পুনরাবৃত্তি রোধে ইসলাম বিদ্বেষ, সাম্প্রদায়িকতা ও বর্ণবাদী প্রোপাগান্ডা বন্ধে বহুত্ববাদী ও শান্তিকামী বিশ্বসম্প্রদায়কে একটি ঐক্যবদ্ধ ইতিবাচক সিদ্ধান্তে আসতে হবে বলে আমরা মনে করি।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে একটাই ফরিয়াদ, তিনি যেন বিশ্বের সকল জালিমকে ধ্বংস করে এই বিশ্বকে নিরাপদ ও শান্তিময় করে দেন। আমীন!
মুহাম্মদ ছফিউল্লাহ হাশেমী, প্রাবন্ধিক ও কলেজ শিক্ষক
আরআর