মোল্লা মুহাম্মদ
লেখক ও সাংবাদিক
গত বছর সেপ্টেম্বর মাসের দিকে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে দেশটির সেনাবাহিনী দমনাভিযানের মুখে থেকে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন কয়েকলক্ষ নিপীড়িত রোহিঙ্গা মুসলিম। নারী-পুরুষ এবং শিশু মিলিয়ে তাদের সংখ্যা প্রায় সাত লাখ। এর আগেও তিন লাখের বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশে আসে।
বাংলাদেশের উপকুলীয় জেলা কক্সবাজারে টেকনাফ, উখিয়ায় তারা আশ্রয় নিয়েছেন।রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে মিয়ানমারের বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে।
সেখানে বলা হয়েছে যে রোহিঙ্গাদের পরিচয় যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে মিয়ানমারে ফেরত নেয়া হবে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন ৩০০ জন রোহিঙ্গাকে ফেরত নেবে। তবে এই প্রক্রিয়া শুরু হলেও দীর্ঘদিনে কয়েক হাজার রোহিঙ্গাও ফিরিয়ে নেয়নি মিয়ানমার।
সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এ শরণার্থী সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশের আলেম সমাজ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। সারাদেশের মানুষ সে চিত্র প্রত্যক্ষ্য করেছে।
সঙ্গে সঙ্গে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা ও দেশ সাড়া দিয়েছে। রোহিঙ্গাদের সহায়তায় বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি ইউএনএইচসিআরসহ বিদেশি বিভিন্ন এনজিও কাজ করছে।
তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সাহায্যের নামে কয়েকটি এনজিও সংস্থা তাদের ধর্মান্তরিত করার কাজ করে চলছে। এছাড়াও রোহিঙ্গাদের অসহায়ত্ব ও দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন সংগঠন তাদের অপরাধমূলক কাজের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
এ নিয়ে আলেম সমাজের একটি বড় অংশ খুবই চিন্তিত। এবং তারা দফায় দফায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে এনজিও তৎপরতা বন্ধের উদ্দেশ্যে মিছিল-মিটিং করে যাচ্ছে। কয়েকটি দৈনিকে ইসলামভিত্তিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বিবৃতিও প্রকাশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের এক বক্তব্যে মিডিয়ায় নতুন করে বিষয়টি উঠে এসেছে।
বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রিসভা কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের কাছে আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অনেক এনজিও ইল মোটিভ (অসৎ উদ্দেশ্য) নিয়ে কাজ করছে।
তিনি বলেন, “রোহিঙ্গাদের ওখানে (কক্সবাজার) কিছু এনজিও আছে। ধারণা করা হচ্ছে, আমাদের গোয়েন্দা রিপোর্টেও সেগুলো লক্ষ্য করছি, অনেক এনজিও-ই ইল মোটিভ (অসৎ উদ্দেশ্য) নিয়ে কাজ করছে। আপনারা শুনলে অবাক হবেন যে, গত সেপ্টেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত (রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা এনজিওগুলো) হোটেল বিল দিয়েছে ১৫০ কোটি টাকার উপর।”
তিনি আরো বলেন, “তারা ফ্ল্যাট বাড়ি ভাড়া দিয়েছে আট কোটি টাকারও বেশি। বিদেশ থেকে যে টাকা আনে সেটা ভুক্তভোগী অর্থাৎ রোহিঙ্গাদের জন্য ২৫ শতাংশও খরচ হয় না। ৭৫ ভাগই খরচ হয় এগুলো দেখাশোনা করার জন্য, ওনাদের (এনজিওকর্মী) জন্য। এটা খুবই দুঃখজনক ।”
আমি মনে করি মাননীয় মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নতুন করে এ বিষয়ে ভাববার প্রয়োজন রয়েছে আমাদের। বিদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের নাম ভাঙিয়ে তারা যে টাকা এনে তা আত্মসাৎ করে চলেছে তার ফিরিস্তি ধরে টান দেওয়া উচিৎ সরকারের।
কোটি টাকা খরচ করে তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অলিগলিতে যে অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে ঘুরছে, সেটা ইতিপূর্বেও কয়েকবার প্রমাণিত হয়েছে। এর আগেও বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় এনজিও তৎপরতায় হাজার হাজার মুসলিমরা ধর্মান্তরিত হয়ে গেছে।
এ কারণে রোহিঙ্গা শিবিরে এনজিও তৎপরতা বন্ধ ও তাদের অসৎ উদ্দেশ্য নস্যাৎ করা সময়ের দাবি। অন্যথায় এটা আলেম সমাজ ও বাংলাদেশের সামনে একটি বড় সংকট হয়ে দেখা দিতে পারে।
লেখক : সাংবাদিক