মুহাম্মদ ছফিউল্লাহ হাশেমী
গত বুধবার রাতে রাজধানীর চকবাজারে রাজ্জাক ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ৮১ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এদিকে অগ্নিদগ্ধে আহত অনেকেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে।
অগ্নিদগ্ধ মানুষের চিকিৎসা দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই। যাদের শরীরের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পুড়ে গেছে তাদের জীবন সংকটাপন্ন। এই মুহূর্তে প্রয়োজন তাদের পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও আশপাশে যারা থাকে তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা।
তাই দেশের বিত্তবান ব্যক্তিদেরও দগ্ধ রোগীদের সাহায্যে এগিয়ে আসা একান্ত কর্তব্য। তারা যেন সমাজে সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে পারে সে জন্য সবার সমন্বিত প্রচেষ্টা ও সহযোগিতা প্রয়োজন।
ইসলাম মানবতার ধর্ম। মানবতার মুক্তির দূত হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানবতার মুক্তির জন্য সারাটি জীবন ব্যয় করেছেন। পৃথিবীর যেখানেই মানবতা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে, অসহায় মানবতার আর্তচিৎকারে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হয়েছে, সেখানেই সেবার ব্রত নিয়ে এগিয়ে গেছে ইসলামপ্রিয় মুসলিম ভাইয়েরা। অসহায়, ক্ষুধার্তদের হক আদায়ের ব্যাপারে ইসলাম স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- ‘যে ব্যক্তি পেট পুরে খায়, আর পাশেই প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত অবস্থায় দিন কাটায় সে প্রকৃত মুমিন নয়।’ অপর হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- ‘তোমরা পৃথিবীবাসীর প্রতি অনুগ্রহ প্রদর্শন কর, তাহলে আসমানের অধিবাসীও তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করবেন।’ অন্য হাদিসে এসেছে- 'সমগ্র সৃষ্টিজীবই আল্লাহর পরিবারের মতো, আর সর্বোত্তম হলো ওই ব্যক্তি যে তার পরিবারের প্রতি সদাচরণ করে।’
ইসলাম বা মুসলমানরা শুধু থিওরি বা দৃষ্টিভঙ্গি পেশ করে না। বরং তারা নিজেরাই আর্তমানবতার সেবায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। ইসলামের ইতিহাস তার প্রমাণ বহন করে যুগে যুগে ইসলাম ও মুসলমানরা প্রমাণ করেছে, ইসলাম মানবতার ধর্ম।
আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনীর দিকে যদি তাকাই তাহলে দেখতে পাবো তিনি কীভাবে আর্তমানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছেন এবং সাহাবায়ে কেরামদের শিক্ষা দিয়েছেন। তাই তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সব সাহাবায়ে কেরাম নিজেদের আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত রেখেছেন।
হিজরতের পরবর্তী সময়ে মক্কার আনসাররা কীভাবে মুহাজির ভাইদের প্রতি সহানুভূতি, সহমর্মিতা প্রদর্শন করেছেন। শুধু এতটুকুই নয়, নিজেরা ক্ষুধার্ত, অসহায়, দরিদ্র হওয়া সত্ত্বেও খাবার ও থাকার মূল অংশ অপর ভাইয়ের জন্য দিয়ে দিয়েছেন। নিজেরা মুমূর্ষু, প্রচণ্ড পিপাসার্ত হওয়ার পরও নিজের খাদ্য ও পানীয় অপর ভাইয়ের জন্য বিলিয়ে দেওয়ার যে নজির স্থাপন করেছেন, তার নমুনা ইতিহাসের পাতায় বিরল।
আমরাও রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামদের অনুসরণ করে অগ্নিদগ্ধ ভাই-বোনদের সেবায় আত্মনিয়োগ করি। সাধ্যানুযায়ী তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করি। যারা অর্থ দিয়ে সহায়তা করতে পারি, তারা যেন এগিয়ে আসি।
আর পাশাপাশি রোগীরা যেন কোনোভাবেই মানসিকভাবে অসহায়বোধ না করে সে জন্য অন্য সবাই তাদের মানসিকভাবে সহায়তা করি। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে অগ্নিদগ্ধ ভাই-বোনদের সেবায় এগিয়ে আসার তাওফিক দান করুন। আমিন!
লেখক: প্রাবন্ধিক ও কলেজ শিক্ষক
আরআর