রিদওয়ান হাসান
কালরাত তিনটাতেও চকবাজারে ছিলাম। তখন ভবন ভস্ম হয়ে নিস্প্রভ আগুন জ্বলছিল। চারতলা ভবনের ছাদে জ্বলছিল ধিকিধিকি আগুন। সেখানে ফায়ার সার্ভিসের লোকেরা কার্যক্রম চালানো সম্ভব হয়নি। খুবই সরু রাস্তা এবং পানির ব্যবস্থাও ছিল কম। যার কারণে আগুন সম্পূর্ণ কন্ট্রোলে আনতে পারেনি তারা।
আমি আর আমার সঙ্গে থাকা সাদী ভাই সেখানে গিয়ে দেখলাম, কালো ধোঁয়া রাতের আঁধারে মিলিয়ে যাচ্ছে। হতবিহ্বল মানুষ ভবন ছেড়ে রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছে। কিছু কিছু বাইকারদের দেখলাম, বাইকের উপরেই হ্যান্ডেলের ওপর পা দিয়ে একধরনের মৃতভঙ্গিতে শুয়ে আছে। তাদের চোখে প্রাণ ফিরে পাওয়ার দ্যুতি তারার মতো চিকচিক করছে।
একেকজনের আতঙ্কগ্রস্ত চেহারা দেখে কোনো তথ্য নেয়ার ব্যর্থচেষ্টাও করলাম না। এই ধরেন, কিভাবে আগুনের সূত্রপাত, কোনো মানুষ মারা গেছে কিনা, কার বাড়ির আগুন, সে কী করত, তার আয়ের ব্যবস্থা হালাল ছিল কি হারাম, এই অগ্নিকাণ্ড আজাব নাকি প্রকৃতির প্রতিশোধ- এই ধরনের অনুসন্ধান কিংবা প্রেডিকশনে না গিয়ে মানবিকভাবে আমিও হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে ছিলাম।
বাহির থেকে দেখে সব কিছু কন্ট্রোলে মনে হলো। কেউ হতাহত হয়নি, এমনটাই ধারণা ছিল সবার। একজন মিডিয়াকর্মীকে লাইভ বলতে শুনলাম। তিনি বলছেন, এখানকার নাগরিক খুব সচেতন। তারা আগুন দেখেই নিচে নেমে গেছে। তাই আপাতত কোনো মৃত্যুর আশঙ্কা নেই বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
অথচ সেই নিভন্ত অগ্নিকাণ্ড যেন ছাইয়ের ভেতর থেকে ফুঁসে ওঠা আগুনের মতো দাউদাউ করে উঠল। রাত তিনটায় যেখানে পরিস্থিতি সব নিয়ন্ত্রণে সেটা সকাল দশটা পর্যন্ত গড়ায়, আগুন কমে না। যেখানে কারোর হতাহত নিয়ে আশঙ্কা নেই বলে আশ্বস্ত করল মিডিয়া। সেই মিডিয়ারই এখন বক্তব্য মৃতদের সংখ্যা অর্ধশতাধিক।
আল্লাহ সকল নিহত লোকদেরকে শাহাদতের মর্তবা দিক। তাদের পরিবার ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহ্যক্ষমতা দিক।
-এটি