আওয়ার ইসলাম: গত সোমবার বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের ময়লার স্তূস্পে ৩১ অপরিণত শিশুর (ফিটাস) মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিয়ে সর্বত্রই তোলপাড় চলছে।
সাধারণ মানুষ এ ঘটনার পর বলছেন, মানবতা ধীরে ধীরে যেভাবে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছছে শিগগির সমাজে পঁচন শুরু হবে। যা থেকে কেউ রক্ষা পাবেন না।
বিষয়টি নিয়ে জামিয়াতুস সুন্নাহ শিবচরমাদরাসার মুহতামিম এবং বেফাকের নির্বাহী সদস্য মাওলানা নেয়ামুতুল্লাহ ফরিদী ও আরজাবাদ মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা বাহাউদ্দিন যাকারিয়ার সঙ্গে কথা বলেন আওয়ার ইসলামের সম্পাদক হুমায়ুন আইয়ুব।
মাওলানা নেয়ামুতুল্লাহ ফরিদী বলেন, নবীর মাধ্যমে যে শিক্ষা আমাদের কাছে এসেছে তা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আমাদের কাছে এসেছে। এ শিক্ষা মানুষকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলে। জাহেলি যুগকে এজন্য জাহেলি যুগ বলে, কারণ তখন আল্লাহর সাথে মানুষের সম্পর্ক ছিল না, নবীর শিক্ষার সাথে সম্পর্ক ছিল না। ফলে জাহেলি যুগে যা যা হত, আমাদের আধুনিক সমাজে তা তা হয়। যারা নবীর শিক্ষা থেকে বঞ্চিত তারা জাহেলি যুগে বাস করছে।
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা বৃটিশ কারিকুলামের আদলে বানানো ফলে আমেরিকা, ইউরোপে যা যা হবে আমাদের দেশেও তা তা হবে। এর থেকে মুক্তির উপায়, কুরআনের শিক্ষা, নবীর শিক্ষার দিকে ফিরতে হবে।
বৃটিশ প্রবর্তিত শিক্ষা, এটা বিষ বৃক্ষ। এ বৃক্ষ যতদিন আমাদের মাঝে থাকবে ততদিন বিভিন্ন জায়গায় এ ধরণের ঘটনা ঘটতে থাকবে। মানুষ তার নৈতিক মূল্যবোধ ধ্বংসের অতল গহ্বরে তলিয়ে যাবে। সমাজবিদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এবং সরকারের শিক্ষানীতির সাথে যারা জড়িত তাদের এ বাস্তবতা বুঝতে হবে। এটা তারা নিজেরা কখন ঠিক করতে পারবে না যতদিন আলেমদের নিয়ে নতুন করে শিক্ষাকমিশন সাজাতে হবে।
এ ব্যবস্থাকে এদিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য যত আয়োজন আছে তার মধ্যে সহশিক্ষা, নারী-পুরুষের অবাধ মেলা-মেশা, নাচ-গানসহ আরো অনেক কিছু রয়েছে। এগুলো আমাদের সমাজে ব্যাপক করে দেয়া হয়েছে। সিনেমা, পর্ণগ্রাফির মাধ্যমে এসব ছড়িয়ে পড়ছে।
আমাদের সমাজিক এ অবক্ষয়ের মূলে রয়েছে শিক্ষা বাকিগুলো তার অনুষদ। সরকার বর্তমানে কয়েকশ পর্ণ সাইট বন্ধ করেছে, তবে এধরনের সাইট রয়েছে লক্ষ লক্ষ। তাই এসব সাইট যত দ্রুত সম্ভব বন্ধ করতে হবে। তা না হলে যে সাইটগুলো এখনো রয়েছে সেগুলো যুব সমাজকে ধ্বংস করে দিবে।
সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ধর্মের কোন প্রভাব নেই, ধর্মমুক্ত আবহ সেখানে বিরাজ করছে। সেটা থেকে আমাদের বের হতে হবে। কুরআন শিক্ষা, নামাজ প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের জন্য বাধ্যতামূলক করতে হবে। নারীদের শালীন পোশাক পড়াতে হবে, সহশিক্ষা বন্ধ করতে হবে। এগুলো যদি বন্ধ করা না হয় তাহলে এসব ঘটনা ঘটতে থাকবে। অপরাধ দূর করা জন্য আলেমদের নিয়ে একটি কমিটি করতে হবে, যারা এসব সমস্যার সমাধানে পরামর্শ দিবে।
মাওলানা বাহাউদ্দিন যাকারিয়া বলেন, এ ঘটনা বলে দেয় আমাদের সামাজিক ও নৈতিক বিষয়টি ধ্বংসপ্রায় অবস্থা। একটি জাতি হিসেবে এটি একটি কলংকজনক অধ্যায়। এটা আমাদেশের ভাব মূর্তি নষ্ট করেছে। সমাজ ব্যবস্থার যে রক্ষনশীলতা ছিল তা ধ্বংসের পথে।
আমাদের মাঝে ধর্মীয় অনুশাসন নেই। আগে যে সামাজিক রক্ষণশীলতা ছিল, তা ভেঙ্গে গেছে। যার কারণে মানুষ বেহায়াপনার দিকে এগুচ্ছে। বর্তমানে মোবাইল যুবসমাজকে এসব নোংরা কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ করছে।
এ থেকে রক্ষা পেতে হলে, ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি আরো যত্নবান হতে হবে। সামাজিকভাবে, রাষ্ট্রীয়ভাবে যেসব মাধ্যমে বেহায়াপনা আমাদের সমাজে ছড়াচ্ছে সেগুলো বন্ধ করতে হবে।
আলেম ওলামারা নিজেদের দায়িত্ব পালন করে আসছে। আমাদের সমাজের নেতারা যদি আলেমদের পাশে থাকে তাহলে এর ফল মানুষ পাবে। আলেমরা জুমায় বয়ানে এসব বিষয়ে যুক্তি নির্ভর কথা বলতে পারেন। এর ভয়াবহ পরিনতির মথা মানুষের কাছে তুলে ধরতে পারেন।
শ্রুতিলিখন আবদুল্লাহ আফফান।
আরআর