আলী আবদুল মুনতাকিম
প্রকৌশলী ও কুরআন গবেষক
১৪ ফেব্রুয়ারির দিনটি ভ্যালেন্টাইন ডে হিসাবে পালন করা হয়ে থাকে প্রতি বছর। ১৮৫০ বছর আগে রোমান রাজা ক্লোরিয়াস/গ্রেডিয়াস ১৪ ফেব্রুয়ারি ২৬৯ সালে কয়েদি সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে ফাঁসি দিয়ে দেন। এর পর থেকেই ১৪ ফেব্রুয়ারির দিনটি, সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের স্বরণে ভ্যালেন্টাইন ডে বা ভালোবাসা দিবস হিসাবে পালন করা হয়।
বিশ্বব্যাপী আজকের জেনারেশনের কাছে এই দিনটি ভালোবাসার দিন হিসেবে এমন খ্যাতি পেয়েছে যে এটির কোন অর্থ খোঁজার কোন প্রয়োজন আছে বলে কেউ মনে ও করে না।
আমরা অনেকেই জানি না, কি ঘটনা আছে দিনটির পেছনে। হালকা টাচ দেই এই দিনটির ইতিহাস সম্পর্কে।
ঘটনাটি ২৬৯ খ্রিষ্টাব্দের গোরার দিকের, সেই সময় ইউরোপের রোম, জ্ঞান-গরিমায় পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ ছিল। সভ্য দেশ রোমের অত্যাচারী রাজা ছিল দ্বিতীয় ক্লোরিয়াস। যিনি স্বৈরাচারী ও নিষ্ঠুর শাসক ছিলেন। দ্রুতগতিতে সারা পৃথিবীতে তার সাম্রাজ্য বিস্তার করছিলেন।
একবার ক্লোরিয়াস তার সাম্রাজ্যে একটি সমীক্ষা চালান এবং সমীক্ষার ফল স্বরূপ তিনি জানতে পারেন, তার সাম্রাজ্যে অবিবাহিত যুবকগণ, বিবাহিত পুরুষের থেকে বেশি শক্তিশালী। তিনি নির্দেশ দেন তার সাম্রাজ্যে কোনো যুবক আর বিবাহ করতে পারবে না, এই নিষ্ঠুর ঘোষণায় সমস্ত রাজ্যবাসী নিরাশ হয়ে পরে।
রোমে তখন একজন বড়মাপের খৃষ্টান ধর্মযাজক বাস করতেন তার নাম ছিল সেন্ট ভ্যালেন্টাইন, তিনি ক্লোরিয়াস এর ঘোষণা পছন্দ করেন নি, তিনি রাজার আদেশের বিরুদ্ধে দেশের যুবকদের বিয়ে করার জন্য উৎসাহিত করা শুরু করেন ।
এ কথা শুনতে পেয়ে রাজা ক্লোরি সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে গ্রেফতার করে কারাগারে বন্দি করেন ।
সেন্ট ভ্যালেন্টাইন যে কারাগারে বন্দি ছিলেন সেই জেলের চিফ অফিসারের একটি অন্ধ মেয়ে ছিল। অফিসার তার অন্ধ মেয়ের ব্যাপারে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে দৃষ্টিশক্তি ফেরানোর জন্য গডের কাছে পার্থনার অনুরোধ করেন।
ভ্যালেন্টাইন গডের কাছে পার্থনা করায় জেলারের মেয়েটি তার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পায়। মেয়েটি কৃতজ্ঞতা জানাতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের সাথে কারাগারে দেখা করতে আসলে সেন্ট তাকে দেখা মাত্রই বিয়ের প্রস্তাব দেন। বাবাও রাজি হন।
ক্লোরিয়াসের কানে এ খবর পৌঁছানো মাত্র তিনি সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে বিবাহের বারণ করেন। সেন্ট রাজার কথা অমান্য করেন। রাজা ক্লোরিয়াস সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের ফাঁসির আদেশ দেন, ফাঁসির আদেশ শোনা মাত্র সেন্ট ভ্যালেন্টাইন মেয়েটিকে একটি প্রেম পত্র লেখেন। শুরুটা ছিল- From your valentin...।
রাজা ক্লোরিয়াস ১৪ ফেব্রুয়ারি ২৬৯ সালে ভ্যালেন্টাইন এর ফাঁসি কার্যকর করেন।
খৃষ্টান বিশ্ব একজন ধর্মযাজকের ফাঁসি মেনে নিতে পারেনি। সেন্ট সাধারণ মানুষ হলে এ দিনের কথা কেউ জানতই না।
তারপর ৪৯৬ সালে পোপ সেন্ট জেলাসিউও ১ম ভ্যালেইটাইন'স স্মরণে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন' দিবস ঘোষণা করেন।
খৃষ্টানজগতে পাদ্রী-সাধু সন্তানদের স্মরণ ও কর্মের জন্য এ ধরণের অনেক দিবস রয়েছে। যেমন: ২৩ এপ্রিল - সেন্ট জজ ডে, ১১ নভেম্বর - সেন্ট মার্টিন ডে, ২৪ আগস্ট - সেন্ট বার্থোলোমিজম ডে, ১ নভেম্বর - আল সেইন্টম ডে, ৩০ নভেম্বর - সেন্ট এন্ড্রু ডে, ১৭ মার্চ - সেন্ট প্যাট্রিক ডে।
সেন্ট যাজকের মৃত্যুকে তারা বিশ্বরুপ দিতে পেরেছে এটা তাদের বিরাট সাফল্য। যদিও অপরপিঠের কথাও আছে।
১৭৭৬ সালে ফ্রান্স সরকার কর্তৃক ভ্যালেইটাইন উৎসব নিষিদ্ধ করা হয়। ইংল্যান্ডে ক্ষমতাসীন পিউরিটানরাও একসময় প্রশাসনিকভাবে এ দিবস উদযাপন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এছাড়া অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি ও জার্মানিতে এ দিবসটি প্রত্যাখ্যাত হয়।
সম্প্রতি, মালয়শিয়া ও পাকিস্তানেও ইসলামবিরোধী হওয়ায় ভ্যালেন্টাইন উৎসব নিষিদ্ধ করে ।
মুসলমানরা খলিফাদের হত্যা বা ইমাম আবু হানিফা হত্যা বা বহু মুসলিম স্কলার বা ঈমামদের হত্যাকে বিশ্বায়ন করতে পারেনি। মুসলমানদের এটাই বড় ব্যর্থতা।
এই যে আমিও কি সুন্দর করে তার হত্যাঘটনা বর্ণনা করলাম (যদিও জানাতে, কি হয়েছিল, যদি অনেকে ঘটনাটি নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেন)।
কই আমি তো মানবতার মুক্তির কাজ করতে গিয়ে খলিফাগণ বা ইমামগণ যে হত্যার স্বীকার হয়েছিলেন তা লিখতে বসতে পারিনি। সারা বিশ্বের মানুষদের সত্যের পথে ডাকতে গিয়ে কত মুসলিম মনিষী জীবন দান করেছেন তাদের খোঁজ কেউ রাখি না।
আচ্ছা আমরা মুসলিমরা কি কিছুটা কৃপন বা হিংসুটে? অপর ভাইয়ের যোগ্যতা আমরা পছন্দ করি না, তার খ্যাতি তো একদম অপছন্দ। তাই মুসলিম বিদুষী, স্কলার, খ্যাতিমানগণ হারিয়ে যান।
১৪ ফেব্রুয়ারি দিবসটি নিঃসন্দেহে নিন্দনীয়, ইসলাম বিরোধী, অবাধ মেলমেশা তথা যৌনাচারের সহজলভ্যতার মাধ্যম, তাই এটি বর্জনীয়।
বাংলাদেশে এই নোংরা দিবসটি প্রচলনের জন্য আমি সাংবাদিক শফিক রেহমান সাহেবের প্রতি নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়ে আমার প্রিয় ছাত্র-যুবক ভাইদের দিবসটি বর্জনের বিনীত আহবান জানিয়ে লেখাটি শেষ করছি ।
আরআর