সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
চিকিৎসকরা বছরে দুইবারের বেশি বিদেশ যেতে পারবেন না ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের

আলেমদের ঐক্যপ্রক্রিয়া; যেভাবে কার্যকর হতে পারে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

পলাশ রহমান
ইতালি থেকে

একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পরে থেকে দেশের ইসলামপন্থী রাজনীতির পরিমন্ডলে ‘ঐক্য’ শব্দটার ব্যবহার বেড়েছে। অনেকেই ইসলামপন্থীদের মধ্যে নতুন করে ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন।

বিশেষ করে যুব মজলিসের নেতা মামুনুল হকের একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশের পর থেকে ঐক্য বিষয়ক আলোচনা অধিকহারে আলোচিত হয়েছে, হচ্ছে। যদিও দেশের প্রথম সারির ইসলামপন্থী দলগুলোর গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের এখন পর্যন্ত মুখ খুলতে দেখা যায়নি, কিন্তু ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা যে তারা অনুভব করছেন না তা বলা যাবে না।

বিশেষ করে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামীলীগ বিএনপির সাথে ঐক্য করতে গিয়ে যারা প্রতারিত হয়েছেন তাদের মধ্যে সঠিক বোধদয় হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বলতে দ্বিধা নেই, আমাদের দেশের আকাবির আলেমরা বরাবরই ইসলামপন্থীদের ঐক্য সৃষ্টি করতে এবং ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ. সৈয়দ ফজলুল করিম রহ. মুফতি ফজলুল হক আমিনী রহ. সহ ওই জেনারেশনের যে আলেমগণ এখনো বেঁচে আছেন তারা কেউই ইসলামপন্থীদের কার্যকর কোনো ঐক্য তৈরি করতে এবং ধরে রাখতে পারেন নি।

শুধু রাজনৈতিক আলেমগণ নয়, অরাজনৈতিক যে আলেমগণকে দেশের মানুষ ভালোবাসে, শ্রদ্ধা করে, অভিভাবক জ্ঞান করে তারাও ব্যর্থ হয়েছেন রাজনৈতিক ঐক্য বিষয়ে অভিভাবকের ভূমিকা পালন করতে।

অনেক আশা প্রত্যাশার প্লাটফর্ম ছিল ইসলামি ঐক্যজোট। মরহুম এবং জীবিত আকাবির আলেমদের হাত ধরেই তৈরি হয়েছিল ইসলামি ঐক্যজোট, কিন্তু ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। উনারা ধরে রাখতে পারেন নি।

কার দোষ, কার দোষ না সে প্রসঙ্গে আমি যাচ্ছি না, কিন্তু সত্যিকারার্থে যদি দেশের ইসলামপন্থীদের মধ্যে কার্যকর কোনো ঐক্য সৃষ্টি করতে হয় তবে আকাবিরদের দূর্বলতা, অদূর্বলতা নিয়ে নির্মোহ আলোচনা হওয়া দরকার। আলোচনার আগে অবশ্যই ‘উদ্দেশ্য’ ঠিক করে নিতে হবে। আলোচনার উদ্দেশ্য যদি হয় উনাদের অযথা সমালোচনা করা, নিন্দা করা তবে আলোচনা না হওয়াই ভালো।

আর যদি উনাদের দূর্বলতা, অদূর্বলতা থেকে শিক্ষা নেয়ার উদ্দেশ্যে, একটি কার্যকর ঐক্য সৃষ্টি জন্যে আলোচনা হয় তবে কোনো ‘দোষ’ হবে বলে মনে করি না।

দেশের ইসলামপন্থী রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্ব এখন আর বর্ষিয়ান আলেমদের হাতে নেই। জেনারেশন পরিবর্তন হয়েছে। প্রথম কাতারের দলগুলোর নেতৃত্ব দিচ্ছেন তরুণ যুবক আলেমরা। তাদের চিন্তা-চেতনা, জ্ঞান-গরিমার পরিমন্ডল অনেক আধুনিক এবং সময় উপযোগী।

আমি বিশ্বাস করি তারা যদি ঐক্য বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেন, আলোচনা করেন তা বিফল হবে না। আগের মতো তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে কাউকে সরে যেতে হবে না বা সরিয়ে দেয়া হবে না।

সত্যিই যদি ইসলামপন্থীদের ঐক্য গড়ে তুলতে হয় তবে সবার আগে নেতৃত্বে থাকা আলেমগণকে অনুধাবন করতে হবে- আওয়ামীলীগ বিএনপির সাথে রাজনীতি করার থেকে নিজেদের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ রাজনীতি করা অনেক সম্মানের।

এ ক্ষেত্রে ঐক্য প্রক্রিয়ায় কিছুটা পরিবর্তন আনা যেতে পারে। আর তা হলো ঐক্য মাথা থেকে নয়, গোড়া থেকে শুরু হবে। অর্থাৎ বড় নেতাদের মধ্যে ঐক্য হবে এবং তা সংগঠনের শেষ সদস্য পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়বে এই প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে ঐক্য শুরু করতে হবে তৃণমূল থেকে।

তৃণমূলে ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। যা পর্যায়ক্রমে কেন্দ্র পর্যন্ত উঠে আসবে। তৃণমূলের ঐক্য যতো মজবুত হবে কেন্দ্রের ঐক্য তত টেকসই হতে বাধ্য হবে। কারণ তৃণমূল থেকে যদি ঐক্যবদ্ধ চাপ থাকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে থাকা আলেমগণ ঐক্য ধরে রাখতে বাধ্য হবেন। নেতৃত্বের দ্বন্দ বা ছোট বড় ভাবার মাসনিকতায় পরিবর্তন আসতে বাধ্য হবে।

তৃণমূলের ঐক্যের জন্য দেশের তারকা ওয়ায়েজরা ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ভূমিকা পালন করতে পারেন। অযথা কাঁদা ছুড়াছুড়ির ওয়াজ না করে বা ওয়াজ করার পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন কথাবার্তা কমিয়ে ঐক্যের গুরুত্ব নিয়ে বেশি বেশি ওয়াজ করতে পারেন। গ্রামে-গঞ্জে, থানা ইউনিয়নে ঐক্যের পক্ষে যদি সচেতন নেতাকর্মী তৈরি হয় তবে টেকসই ঐক্য গড়ে উঠতে বাধ্য হবে।

অন্যথায় অতীতের মতো একজন ঐক্যের পক্ষে বলবে, অন্যদুজন তার বিরুদ্ধে যুক্তি দেখাবে, এ ভাবেই সব ভেস্তে যাবে।

টেকসই ঐক্যের জন্য অরাজনৈতিক আলেমদেরও ভূমিকা থাকতে হবে। যে আলেমগণ সরাসরি রাজনীতি করেন না, কিন্তু ধর্মীয় নেতা হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ তারা হবেন ঐক্যের অভিভাবক। কেন্দ্রীয় ঐক্যে মতানৈক্য হলে, কেউ ফাটল ধরানোর চেষ্ট করলে তারা অভিভাবকের ভূমিকার অবতীর্ণ হবেন।

তৃণমূলের ঐক্যের জন্য সব থেকে সহজ উপায় হলো থানা ইউনিয়ন পর্যায়ের, অর্থাৎ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইসলামি দলগুলোর একক প্রার্থী ঘোষণা করা। কোনো স্থানীয় নির্বাচনে একাধিক ইসলামপন্থী দলের প্রার্থী থাকতে পারবে না। যেখানে যে দলের প্রার্থীকে যোগ্য মনে করা হবে সেখানে অন্যসব দলের নেতাকর্মীরা ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবে।

ব্যতিক্রম হলে কেন্দ্র হস্তক্ষেপ করবে। কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত সঠিক মনে না করলে অভিভাবক আলেমগণ পরামর্শ দেবেন, যা সবাই মানতে বাধ্য হবে।

তৃণমূল থেকে তৈরি হওয়া ঐক্য মূলত ইস্যু ভিত্তিক ঐক্য হবে। দলগুলো নিজেদের মতো করে রাজনীতি করবে, কিন্তু নির্বাচন এবং গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি পালন করবে। নেতৃত্ব সাধারণ নিয়ম মেনেই হতে পারে।

যেসব ইসলামপন্থী দল বা নেতা আওয়ামী লীগ বিএনপির সাথে ঐক্য করেছেন, নির্বাচন করেছেন তারা যে মেথডে আওয়ামী লীগ বিএনপির নেতাদের নেতৃত্ব মেনে রাজনীতি করেছেন নিজেদের মধ্যেও অভিন্ন পদ্ধতি মানার মানসিকতা থাকলে বিশেষ কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। বরং অধিক সম্মানের হবে।

লেখক: ইসলামি রাজনীতি গবেষক

আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ