আওয়ার ইসলাম: ঘরে-বাইরে কোথাও নিরাপদ নয় নারী। এমনিক শিক্ষাঙ্গনের মত পবিত্র জায়গায় এবং শিক্ষকের মত পবিত্র আশ্রয়েও নিরাপদ নয় নারী শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক ও সহপাঠীদের হাতে ধর্ষণ-গণধর্ষণ, শারীরীক মিলনের দৃশ্য ভিডিও করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়া এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
খোদ শিক্ষাঙ্গনও যখন নারী নির্যাতনের কালি মেখে কলুষিত হয়েছে তখন আওয়ার ইসলাম টুয়েন্টিফোর ডটকম মুখোমুখি হয়েছে সমাজসচেতন মানুষ, শিক্ষার্থী-শিক্ষাবিদদের। জানতে চেয়েছে সমস্যার কারণ এবং সমস্যা উত্তরণের পথ কী? সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আল ফাতাহ মামুন
মুহাম্মাদ কামাল হোসেন
সাহিত্যিক
আমাদের দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নারীরা যে এখনো নিরাপদ নয়, প্রতিদিনের সংবাদপত্র এবং সংবাদমাধ্যমে চোখ বুলালেই একথা পরিষ্কার হয়ে ওঠে। শিক্ষক ও সহপাঠীদের হাতে যৌন নিপীড়ন থেকে শুরু করে ধর্ষণের মত ভয়াবহ চিত্রগুলোও প্রায়শই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায়তে দেখতে পাই।
এসব বিষয়ে সরকারকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ সুন্দর ও নিষ্কণ্টক করতে হবে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সার্বক্ষণিক মনিটরিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
এছাড়া আইনের যথাযথ প্রয়োগ, বাস্তবায়ন ও প্রকৃত দোষীর সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই আশা করা যায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নারীদের জন্য নিরাপদ এবং শান্তিময় হয়ে ওঠবে।
মাওলানা আবদুল্লাহ মুহাম্মাদ কাউসার আলম
খতিব, বাইতুর রহমান জামে মসজিদ, ঢাকা
অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য! নারী নির্যাতনের মত ভয়াবহ ঘটনায় শিক্ষকরা অনেক বেশি জড়িত। সব খবর মিডিয়ায় আসে না। সব নির্যাতিত বোন মুখও খুলে না। ভিকারুন্নিসা নূনের পরিমল থেকে শুরু করে অনেকগুলো ঘটনাই আমাদের বিবেকে স্তদ্ধ করে দিয়েছে, ভাবতে বাধ্য করেছে নতুন করে।
কোনো ঘটনা ঘটার পর সে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত না হলে, ওই ঘটনা আরো বেশি করে চর্চা হয়। তেমনটাই হচ্ছে এখন। গেলো কয়েক বছরে শিক্ষককতৃক ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনাগুলো প্রমাণ করে, এ দেশের শিক্ষাঙ্গন নারীর জন্য নিরাপদ নয়।
আমি মনে করি, এ জন্য দায়ী আমরা সবাই। সামাজিকভাবে আমরা সচেতন নই। আবার আমাদের আইনব্যবস্থাও অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে পারেনি। এজন্য এ ধরণের ঘৃণ্যতা মাথাচারা দিচ্ছে বারবার।
ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাব সবার মনে ধর্মীয় অনুভ‚তি জাগাতে পারলে, সবাই ধর্মভিরু-আল্লাহভিরু হলে এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে আশা করি। আর এক্ষেত্রে দেশের আলেম-ওলামা, ইমাম-খতিবরা বলিষ্ঠ ভ‚মিকা রাখতে পারেন।
তমা সাহা
সাংবাদিক, দৈনিক যুগান্তর
আমরা যখন স্কুল-কলেজে পড়েছি, তখন শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ যথেষ্ট ভালো ছিলো। এখন শিক্ষাঙ্গন ভয়াবহ হয়ে ওঠেছে নারীদের জন্য। শিক্ষাঙ্গনের মত পবিত্র জায়গায়ও যদি আমি নিরাপদ না থাকি, তাহলে পৃথিবীর আর কোথায় আমি নিরাপদ?
শিক্ষকদের হাতে আমরা লাঞ্চিত হচ্ছি, সম্ভ্রম হারাচ্ছি সহাপাঠীর কাছে, এর চেয়ে দুঃখজনক, এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কিছু নেই। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য আমি মনে করি, সৎ-চরিত্রবান শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে।
শিক্ষকের মাঝে নৈতিকতাবোধ এবং ধর্মীয় জ্ঞান না থাকলে তার দ্বারা যেকোনো কিছুই সম্ভব। অভিভাবকদের আরো বেশি সচেতন-সতর্ক হতে হবে। স্কুলগুলোতে দাড়োয়ান এবং আয়ারা টাকার বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বাইরে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়- এই বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে।
এম এম মুন
শিক্ষাথী, এম. এ ইন একাউন্টিং, বিএম কলেজ, বরিশাল
আমার মতে, এ দেশের ৭০% নারী শিক্ষার্থী শিক্ষাঙ্গন এবং শিক্ষকদের কাছে নিরাপদ নয়। কারণ শিক্ষাঙ্গন যেমন রাজনীতির কালিতে কলংকিত, তেমনি মানুষরূপি অমুষদের পদচারনায় অপবিত্র হয়ে পড়েছে প্রতিটি বিদ্যালয়ের সবুজ ভূমি।
বলতে দ্বিধা নেই আমরা নীতি-নৈতিকতা ভুলে, ধর্ম ভুলে অধর্মের পথে, অনৈতিকতার পথে ছুটে চলছি। তাহলে আমাদের থেকে নৈতিক কিছু, ধর্মীয় কিছু আশা করাটা বড় ধরনের ভুল।
অবশ্যই আইনের শাসন আরো জোরদার করতে পারলে এবং মানুষের মনে ধর্মের আলো জ্বালাতে পারলে শিক্ষাঙ্গনসহ পুরো দেশ নারীর জন্য পবিত্র হবে ইনশাল্লাহ।
আরআর