সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


চা বিক্রির টাকায় বেড়িয়েছেন ২৩ দেশে, ঘুরতে চান গোটা বিশ্ব

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

কৌশিক পানাহি: টাকা জমিয়ে মানুষ সম্পদ গড়ে। বিজয়ন-মোহনা দম্পতি জমানো টাকায় ছুটে যান নতুন কোনো দেশে। ভ্রমণই তাদের শখ। এ শখ তাদের নিয়ে গেছে ২৩টি দেশে। পা ফেলেছেন সুইজারল্যান্ড, মিশর, দক্ষিণ আফ্রিকা, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, ডেনমার্কের মতো নানা দেশে।

সাধ্য আর সাধের ফারাকের মধ্যে পড়ে বেশিরভাগ মানুষই কবর দেন তাদের স্বপ্ন। জীবিকার তাড়নায় জীবন শেষ হয়ে যাওয়া গল্পগুলো রোজই দগদগে হয়ে ওঠে সোশ্যাল মিডিয়ার পাতায় পাতায়। কিন্তু তার মধ্যেই যে কোনও কোনও জীবন কোথায় কীভাবে পাড়ি দেয় স্বপ্নের পথ ধরে, তা জানলে নতুন করে জীবন সাজাতে ইচ্ছে করে। মনে হয়, সাধেদের বিসর্জন দেওয়ার জন্য সাধ্য না থাকার কথা বলাটা নিছক অজুহাত ছাড়া কিছু নয়। অন্তত বিজয়ন-মোহনার জীবনের গল্প সেটাই বলে।

বিজনেস টুডে ও দ্য ওয়াল ডটইন-এর প্রতিবেদনে প্রকাশ, ছোটবেলা থেকেই বিজয়ন স্বপ্ন দেখতেন, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াবেন। সংসার ও পেশার জাঁতাকলে প্রথম জীবনে তা আর সম্ভব হয়নি। কিন্তু পরে হয়েছে, জীবনসঙ্গীর হাত ধরে। তাই ৪৫ বছরের দাম্পত্য জীবনে পৃথিবীর নানা প্রান্তের ২৩টি দেশ ভ্রমণ করে ফেলেছেন তারা।

কিন্তু এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই, তারা এই দুর্দান্ত বিষয়টি সম্ভব করেছেন অনেক বড় কোনো চাকরির বিনিময়ে। এমনটা ভাবারও কোনো কারণ নেই, তাদের রোজগার আকাশছোঁয়া। বরং তাদের পেশা শুনলে চমকে যাবেন যে কেউ।

ভারতের কেরেলা রাজ্যের কোচি শহরে একটি চা-কফির দোকান চালান বিজয়ন-মোহনা, যার নাম শ্রী বালাজি কফি হাউজ! সেই দোকানেই রাখা রয়েছে একটি বিশালাকার গ্লোব। এক এক কাপ চায়ে হিসেব হয় এক একটা গন্তব্যের।

হ্যাঁ, এই চা বিক্রির টাকাতেই তাদের সংসার চলে। আর সেই সঙ্গে এগিয়ে চলে দেশে-বিদেশে ঘুরে বেড়ানোর স্বপ্নেরাও। সংসারের জাঁতাকলে, হাজার অভাব-অভিযোগেও তারা পিষে যান না কখনো। ৭০ ছুঁই ছুঁই বিজয়ন ও মোহনা জানালেন, জীবনের হিসেব তাদের কাছে খুব স্পষ্ট নয়। বরং তার চেয়ে বেশি স্পষ্ট, জীবনের লক্ষ্যগুলো। সে দিকে চোখ রেখেই এগিয়ে চলেছেন তারা। আর সেই পথেই ছুয়ে ফেলেছেন সুইজারল্যান্ড, মিশর, দক্ষিণ আফ্রিকা, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, ডেনমার্কের মতো নানা দেশ। তাই এখন তারা বলেন, ‘আমাদের মাত্র দুই নেশা আছে– টি অ্যান্ড ট্যুর।’

প্রতিদিন যা চা বিক্রি হয়, তা থেকে ৩০০ রুপি করে জমান এই দম্পতি। বছর শেষে সেই অঙ্কটা দাঁড়ায় এক লাখের কিছু বেশি। বেড়াতে যাওয়ার বাকি টাকা ধার করেন পরিচিতদের থেকে। ঘুরে এসে, শুরু করেন ধার মেটাতে। ধার মিটলেই ফের শুরু সঞ্চয়, বছর শেষের সঞ্চয়ের ওপরে ফের যোগ হয় ধারের অঙ্ক, ফের বেরিয়ে পড়া। মসৃণ এই আবর্তে সুন্দর চলছে এই বৃদ্ধ দম্পতির জীবন।

ঘুরতে যতটা ভালবাসেন বিজয়ন, ততটাই ভালবাসেন স্ত্রী মোহনাকে। তাই জীবনসঙ্গীর চেয়ে তারা পরস্পরের ভ্রমণসঙ্গী বেশি। পৃথিবীর বহু অজানা পথ হাত ধরে হাঁটার পরে, ভালবাসার সঙ্গেই জমতে থাকে সুন্দর স্মৃতিরা। বাড়তে থাকে স্বপ্নপূরণের তৃপ্তি।

তাই রোজই নতুন কোনও দেশে ঘুরতে যাওয়ার স্বপ্ন চোখে নিয়ে রাতে ঘুমোতে যান তারা, আর সকালে উঠে চায়ের কাপ হাতে হিসাব করেন স্বপ্নপূরণের। আর স্বপ্নের ক্যানভাস যখন আস্ত গ্লোবটাই, তখন তাতে আপনিই ফিকে হয়ে যায় বাধার প্রাচীরগুলো।

কেপি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ