মাওলানা শহীদুল ইসলাম ফারুকী
আলেম, লেখক ও গবেষক
অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে ইসলামী ঐক্য গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা জোরালো হয়েছে। অতীতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঐক্য হয়েছে বিভিন্ন ইস্যুকেন্দ্রিক। কিন্তু বর্তমানে ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা জোরালো হয়েছে দেশের স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্ব রক্ষা ও দেশে শান্তি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে, যা এই মুহূর্তে দেশবাসীর একমাত্র চাওয়া।
কারণ দেশ এক মহাসংকটে নিমজ্জমান। চারিদিকে মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত। স্বাধীনতার ৪৭টি বছর পার হয়ে গেলেও দেশে এখনও কাঙ্খিত শান্তি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা হয়নি। আশা ছিলো একটি অর্থবহ নির্বাচনের মাধ্যমের দেশে শান্তি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হবে।
কিন্তু গণতন্ত্রের স্লোগান দিতে দিতে মুখে ফেনা তুলে ফেলা দলগুলোর গণতন্ত্রের মুখোশ উন্মোচন হয়েছে নির্বাচনের মাধ্যমে। তাদের ক্ষমতা ও ভোগবাদের রাজনীতি জাতিকে হতাশ করেছে।
দেশের এই সংকটময় সময়ে জাতি এখন ইসলামী শক্তিকে চাচ্ছে ত্রাতা হিসেবে। একরাশ হতাশায় নিমজ্জমান দেশবাসী আজ ইসলামী দলগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে একমুঠো শান্তি নিরাপত্তার জন্য।
দেশবাসীর এই চাওয়া পূরণের জন্যই ইসলামী দলগুলোকে এক কাতারে আসতে হবে। ইসলামী ঐক্য গড়ে তোলার এখনি সময়। অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়ে আছে। ইসলামী শক্তি ঐক্যবদ্ধ হতে পারলেই জাতি তাদের পতাকাতলে সমবেত হবে। স্বাগত জানাবে আপামর জনতা।
দেশের এই সঙ্কটময় সময়ে ইসলামী জনতাকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। বিভিন্ন লেবেল দিয়ে বর্জনের যে প্রবণতা তা পরিহার করতে হবে। এতে উম্মাহর কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না।
ঐক্য ইসলামী শক্তিকে কার্যকর ও স্বাতন্ত্র্যমণ্ডিত করে তুলতে পারে। তবে এই ঐক্য-সংহতি যৌথ উদ্যোগ ও কর্মকান্ডের মাধ্যমেই সম্ভব হবে। আমাদের মতপার্থক্যের যে সব বিষয় রয়েছে সেগুলিকে সংলাপের মধ্য দিয়ে নিষ্পত্তি ও সংশোধন করতে হবে।
একে অন্যের প্রতি বিভিন্ন লেবেল এঁটে দেয়ার প্রবণতা সবাইকে পরিহার করতে হবে। একই সাথে হিংসা-বিদ্বেষ ও বর্জন করার প্রবণতাকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে।
নিজেদের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ, ভুল-বুঝাবুঝি ও দ্বন্দ্ব সংঘাত সৃষ্টির প্রকল্প মোকাবেলার জন্য দলগুলোকে একটি ব্যাপকভিত্তিক কৌশলগত পরিকল্পনা নিতে হবে। বিভিন্ন ইসলামী চিন্তাধারার অনুসারীদের মধ্যে যোগাযোগের চ্যানেল গড়ে তুলতে হবে।
যার লক্ষ্য হবে সকল দলের মধ্যে বুদ্ধিবৃত্তিক ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রসারিত করা।
একটি সাধারণ ঐক্য গড়ার জন্য দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে দূরত্ব ভেঙ্গে ফেলতে হবে এবং একক অবস্থানের অধীনে ইসলামী দলগুলোর ঐক্যের ধারা ও রীতিনীতিগুলিকে জোরদার করতে হবে। সংযমের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও সাদৃশ্যের বন্ধনকে জোরদার করতে হবে এবং পরিত্যাগ করতে হবে শত্রুতা ও বিভাজনের অহংকার।
একটি কার্যকর টেকসই ঐক্য গড়ে তোলার জন্য কার্যকর নীতিমালা প্রণয়ন করা এবং এ ক্ষেত্রে উম্মাহর দরদী মুসলিম পণ্ডিত, দাঈ ও চিন্তাবিদদের মতামতকে একত্রিত করা।
আজকের পরিস্থিতিতে সব ইসলামী দলকে একত্রিত করার দায়বদ্ধতাকে বিশেষভাবে উপলব্ধি করতে হবে। আর অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের সাথেও মুসলমানদের সর্বোত্তম পদ্ধতিতে সহযোগিতা করতে হবে।
একই সাথে চরমপন্থা, সহিংসতা ও সন্ত্রাসবাদের সকল রূপ প্রত্যাখ্যান করতে হবে এবং ইসলামের সত্যিকারের সহনশীল রূপ প্রদর্শন করতে হবে।
লেখক : মহাপরিচালক, শায়খ আবুল হাসান আলী নদভী ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বিরুলিয়া, ঢাকা