সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


এক পায়ে মাউন্ট ভিনসনের চূড়ায়!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: পাহাড়-পর্বতে ওঠা চাট্টিখানি কথা নয়। এর জন্য প্রয়োজন কঠোর অনুশীলন আর শারীরিক সক্ষমতা। পাহাড়ের পদে পদে জড়ানো রয়েছে বিপদ আর মৃত্যুর হাতছানি। মৃত্যু এখানে খুব সহজ ও স্বাভাবিক একটি বিষয়। তার পরও জেদি আর একরোখা মানুষ হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকে না। নেশা কিংবা শখের বশে জয় করতে চায় পাহাড়। হোক না মৃত্যু। পাহাড়ে উঠতে গিয়ে বীরের মতো মরণকে বেছে নেওয়াই যেন ভালো। পাহাড় জয় করার জন্য এ ত্যাগটুকু স্বীকার করতে ওদের বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই। এমন সব ভাবনা আর নেশার বশে ফি-বছর কিছু লোক যাত্রা করে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গের দিকে।

ভারতের পর্বতারোহী অরুণিমা সিনহার জন্য পাহাড় জয় আরও বিপদজনক। তার নেই এক পা। তবে সেটা কোনো বাধাই নয়। আর তাই যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন এই পর্বতারোহী নারী।

২০১৩ সালে প্রথম প্রতিবন্ধী নারী হিসেবে মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেন অরুণিমা সিনহা। এবার পৃথিবীর প্রথম এক পা না থাকা নারী হিসেবে দক্ষিণ মেরুর সর্বোচ্চ শিখর জয় করে এককথায় ইতিহাস সৃষ্টি করলেন তিনি।

গত বুধবার অ্যান্টার্কটিকার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট ভিনসন জয় করলেন ৩০ বছরের অরুণিমা সিনহা। তিনিই প্রথম প্রতিবন্ধী নারী, যিনি মাউন্ট ভিনসন শৃঙ্গের চূড়ায় পৌঁছতে সফল হলেন।

অরুণিমার জয়ে গর্বিত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। খবর শোনামাত্রই টুইট করে অভিনন্দন জানালেন পর্বতকন্যাকে।

টুইটে মোদি লিখেছেন, ‘অরুণিমা দেশের গর্ব, লক্ষ্য স্থির রেখে এগিয়ে চলুন।’

অরুণিমা গত ৩ জানুয়ারি অর্থাৎ বৃহস্পতিবার অ্যান্টার্কটিকার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট ভিনসন জয়ের ঘোষণাও টুইটারে করেন।  অরুণিমা বলেন, ‘আমি আবার পেরেছি।’ তারপর  থেকেই লাখ লাখ শুভেচ্ছাবার্তায় ভরে উঠে সোশ্যাল মিডিয়া। হেরে না যাওয়া একজন মানুষকে মন খুলে স্যালুট জানান বিশ্ববাসী।

জীবন সংগ্রামেও জয়ী অরুণিমা। জেদি, প্রতিবাদী, স্পষ্টবক্তা মেয়েটি কোনোদিন অন্যায়ের সামনে নত হননি। তার খেসারতও দিয়েছেন ২০১১ সালে। লাখনাউয়ে পদ্মাবতী এক্সপ্রেস থেকে অরুণিমাকে ছুঁড়ে দিয়েছিল কয়েকজন দুষ্কৃতী। চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়ায় একটি পা হারান অরুণিমা। ট্রেনের ভেতর ডাকাতি আটকাতে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। বাঁচাতে চেয়েছিলেন অন্যান্য যাত্রীদের। তখনই অরুণিমাকে টানতে টানতে ট্রেনের দরজার সামনে নিয়ে গিয়ে ঠেলে ফেলে দেওয়া হয়। সেইসময় উল্টোদিক থেকে আসছিল আরও একটি ট্রেন। প্রাণে বাঁচলেও, ট্রেনে কাটা পড়ে অরুণিমার একটি পা।

এরপরের নতুন লড়াই শুরু হয় লড়াকু অরুণিমার। যিনি প্রতিবন্ধকতাকে জীবনের সবচেয়ে বড় শক্তিতে পরিণত করেন। সিদ্ধান্ত নেন, পাহাড়ে চড়ার, শৃঙ্গ জয়ের। প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন সেইভাবেই। দেখতে দেখতে ২০১৩ সালে প্রথম  প্রতিবন্ধী (সিঙ্গল অ্যাম্পুটি) নারী হিসেবে মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেন। সেদিনই জানিয়েছিলেন, বিশ্বের সবক’টি মহাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জয় করাই তার লক্ষ্য। ২০১৩ সালে এশিয়া মহাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্ট জয় করেছেন। ২০১৯-এর শুরুতেই দ্বিতীয় শৃঙ্গ, অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট ভিনসন জয় করেলেন তিনি। এর মাঝে, ২০১৫ সালে পেয়েছেন পদ্মশ্রী, ওই বছরেই তেনজিং নোরগে ন্যাশনাল অ্যাডভেঞ্চার অ্যাওয়ার্ডও জিতে যান অরুণিমা।

ট্রেনে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনার পর চার মাস হাসপাতালের বেডে শয্যাশায়ী ছিলেন। তখনই স্বপ্ন দেখেছেন, শৃঙ্গ জয়ের। জাতীয় স্তরের ভলিবল খেলতেন, তাই প্রতিবন্ধী অরুণিমাকে চাকরির প্রস্তাবও দেয় ভারতীয় রেল। কিন্তু, জেদি মেয়েটি দশটা-পাঁচটার সরকারি চাকরিকে তার স্বপ্নের মাঝে আসতে দেননি। সুস্থ হয়েই শৃঙ্গ জয় করবেন ভেবেই ফেলেন। কৃত্রিম পা লাগিয়েই শুরু হয় প্রস্তুতি।

আজ অরুণিমা নিজের সাফল্যের মুকুটে একটার পর একটা সোনালী পালক লাগিয়ে চলেছেন। ‘তবে দীর্ঘ পথ চলা এখনও বাকি, শৃঙ্গ জয় থামবে না’, মাউন্ট ভিনসন জয়ের পরই টুইট করেন অরুণিমা।

কেপি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ