মাওলানা তায়্যিবউল্লাহ নাসিম
আলেম, খতিব ও সংগঠক
ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের গণসংবাদ মাধ্যম হওয়ার পাশাপশি সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, গুজব ছড়ানো এবং কোনো সত্য ঘটনার প্রতিবাদ করতেও প্রমাণ হিসেবে পুরনো বা ভুয়া ছবি ও ভিডিও ব্যবহার।
ঘটনা ১০০℅ সত্য কিন্তু সংখ্যাটা ভুয়া। কিংবা সংখ্যা ঠিক আছে ধরন ভিন্ন। বাড়িয়ে ছড়িয়ে মানুষের সিম্প্যাথি আদায়ের জন্য মনের মাধুরী দিয়ে তাকে সাজিয়ে উপস্থাপন করা হয়। একজন জেনে করলে শতজন না জেনে সেটাকে ছড়ানোয় সাহায্য করেন।
এতে করে ঘটনার গুরুত্ব বিশ্বাসযোগ্যতা অনেক সময় কমে যায়, কিংবা অপর পক্ষ এ অভিযোগ করার সুযোগ পায় যে, এটাকে রাজনৈতিক ফায়দা লুটার জন্য আমাদের প্রতিপক্ষ ব্যবহার করছে।
শাপলা ট্রাজেডি, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনসহ প্রায় সবসময় এমন পরিস্থিতি তৈরি হতে দেখেছি আমরা।
সুবর্ণচরের ধর্ষিতার মৃত্যুর খবর নিয়ে গতরাত থেকেই শতশত পোস্ট দেখেছি, অনেককে মৃত্যুর খবর নিশ্চিত কি না জিজ্ঞেস করে সদুত্তর পাইনি। কেউ নিশ্চিত খবর বলতে পারেনি। সবাই একে অপরের দেখাদেখি পোস্টটা করেছে।
আজ দেখছি কেউ কেউ দুই শিশুর নতুন একটি কবর চাপড়ে কান্না করার ছবি পোস্ট করে নিউজটা দিয়েছেন, আবার কেউ বলছেন এটা পুরনো ছবি। কেউ কেউ ঘটনার বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য ধর্ষিতার বক্ষের ছবিও পোস্ট করতে দ্বিধা করছেন না!
অনেক জীবিত মানুষকে হাসপাতালে আইসিউতে থাকাকালীন অনেকে ফেসবুকে মেরে ফেলার উদাহরণ আমাদের সামনে অনেক। মৃত ব্যক্তি জীবিত হয়ে তিনি যে মরেননি এমন সাক্ষাতকার ভিত্তিক ভিডিও বা ফেসবুক লাইভ আমাদের নিউজফিডে প্রায়ই ঘোরে।
গুরুতর অসুস্থতার ভুয়া নিউজও আমরা একের দেখাদেখি কপিপেস্ট মেরে প্রচুর চালাই।
গতকালে মাওলানা তারেক জামিলের নিউজটাই দেখুন না। তিনি বুকে ব্যথা অনুভব করে হাসপাতালে গেলেন, আমরা সেটাকে হার্ট এটাক বলে চালিয়ে দিলাম!
এসব থেকে বেরিয়ে আসার উপায় হলো সবাই নিশ্চিত না হয়ে কোনো নিউজ প্রচারের প্রতিযোগিতায় না নামা। অনেক সময় স্পর্শকাতর ঘটনা নিয়েও আমরা এমন প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ি।
এর আগে নিশ্চিত হতে হবে যে বিষয়টি জেনেছি সেটা কেবল ফেসবুকের পোস্ট থেকে নাকি কোনো গণমাধ্যমের খবর থেকে। এসব নিশ্চিত হয়েই প্রচারে নামতে হবে। তাহলে আশা করি এমন ভুল ও মিথ্যা এড়িয়ে চলা সম্ভব।
আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমে ইরশাদ করেন, নিশ্চয় কর্ণ চক্ষু এবং অন্তকরণ জিজ্ঞাসিত হবে। বনী ইসরাঈল-৩৬
হাদীসে পাকে ইরশাদ হয়েছে, কোন ব্যক্তির মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শুনে তাই বলে বেড়ায়।” মুসলিম, রিয়াদুস সলিহীন – ১৫৪৭
আরআর