বদরুন আক্তার জলি
কলামিস্ট
রাত পোহালেই (৩০ ডিসেম্বর) একাদশ জাতীয় নির্বাচন। বহু আকাঙ্ক্ষার, প্রতীক্ষার এ নির্বাচন শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ এবং অংশগ্রহণমূলক হবে এমনটাই প্রত্যাশা করে সবাই।
নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলো দেশের জনগণকে বিভিন্ন পতিশ্রুতি দিয়েছে। উন্নয়নের জোয়ারে দেশ ভাসিয়ে দেয়া হবে। নেতারা জনগণের পাশে দাঁড়াতে চান। সেবা করার সুযোগ চান, আরো কত কি।
আসলে কাজের কাজ তারা কিছুই করে না। জনগণকে ধোঁকা দিয়ে নিজেদের পকেট ভারি করা ছাড়া পেছনের বছরগুলোতে অন্য কিছু আমরা দেখিনি। তাদের সব প্রতিশ্রুতির মূল হলো ক্ষমতার মসনদ দখল করা। জনগণের সম্পদ লুট করা।
এর জন্য যতো রকমের ছল-চাতুরি আছে সব তারা করতে রাজি আছে। তবুও ভোট হতে হবে। অংশগ্রহণমূলক ভোট ছাড়া সত্যিকারের উন্নয়ন হয় না।
সরকারি দল ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য সব চেষ্টাই অব্যাহত রেখেছে। ভোটের মাঠে কোথাও সমতল ভূমি আমাদের চোখে পড়েনি। ভোটের প্রচার ও পোস্টার দেখে মনে হয়েছে দেশে দুই প্রতীকের মধ্যে নির্বাচন হচ্ছে, নৌকা এবং হাতপাখা।
অধিকাংশ জায়গায় ধানের শীষের প্রার্থীদের ঘর থেকে বেরুতেই দেয়া হয়নি। অনেক জায়গায় মেরে তাদের হাত পা গুড়িয়ে দিয়েছে। এর পরেও বিএনপি নির্বাচনের মাঠ ছাড়েনি। ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয়নি। এজন্য অন্তত তারা জনতার ধন্যবাদ পাওয়ার দাবি রাখে।
দেশবাসী প্রত্যাশা করে শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনের মাঠে থাকবে। জনগণের ভোটাধিকারের জন্য লড়াই করবে। যতো উস্কানিই দেয়া হোক, ভোটের মাঠ ছেড়ে দেয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। দেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন খুব দরকার।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনের যে ধারা থেকে আমরা বেরিয়ে গিয়েছি সেখানে ফিরে আসা দরকার। দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থেই সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রয়োজন।
বিএনপির নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জেলে। তারেক রহমান বিদেশে। সরকার কৌশলে বিএনপিকে নেতৃত্বশূন্য করে ফেলেছে। সরকার হয়তো ভেবেছে নেতৃত্বশূন্য বিএনপিকে কেউ ভোট দেবে না। সরকারের ভাবনা যদি এমনই হয় তবে শান্তিপূর্ণ ভোট দিতে সমস্যা কোথায়?
ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখুন। ভালো কাজ করলে জনগণ এমনিতেই আপনাদের ভোট দেবে। জোর জবরদস্তি করার কিছু নেই। তাছাড়া সব বিষয়ে জোর খাটাতে হয় না। রাজনীতিতে মিনিমাম একটা সততা না থাকলে মনুষত্ব প্রশ্নের মুখে পড়ে যায়।
কেউ কেউ গুজব ছড়াচ্ছে, ভোটের দিন ব্যাপক হাঙ্গামা হবে। পুলিশ, সেনাবাহিনীর পোশাক পরে মাঠে নামবে অনেকে। মানুষের ভোট প্রদানের বাধা দেবে। আমি এসব কথা বিশ্বাস করতে চাই না। আমি মনে প্রাণে চাই এই কথাগুলো গুজব হোক, মিথ্যে হোক। মানুষ স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করুক।
আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথায় ভরসা রাখতে চাই। তিনি বলেছিলেন, দলীয় সরকারের অধিনে যে নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে তা তিনি প্রমাণ করবেন। আমরা প্রমাণের জন্য প্রহর গুনছি।
লেখিকা: সমাজকর্মী