রোকন হারুন: আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামীগ লীগ, বিএনপিসহ বড় দলগুলো তাদের ইশতেহার ঘোষণা করেছে। প্রতিটি দল ইশতেহারকে সামনে রেখে মাঠে-ময়দানে জোড় বক্তব্য ও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন প্রার্থীরা।
দেশ ও নাগরিকের চাহিদাকে সামনে রেখে নির্বাচনের সামনে এমন ইশতেহার প্রণনয়ন করে থাকে প্রতিটি রাজনৈতিক দল। তারা নিজেদের বিশ্বাস ও আদর্শের জায়গা থেকেই প্রস্তুত করেন এসব ইশতেহার।
এবার ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শিরোনামে আওয়ামী লীগ ইশতেহার ঘোষণা করেছে। তাতে ২১টি প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। বিএনপির ইশতেহারে ১৯ টি ওয়াদা করা হয়েছে। আর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ইশতেহারে রয়েছে মৌলিক ১৪ প্রতিশ্রুতি।
এদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ। ৯২ ভাগ মানুষ মুসলিম। সে দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিটি দল ধর্মীয় দাবি দাওয়ার কথাও ইশতেহারে রাখেন। অতীতের মতোই এবারও ক্ষমতায় গেলে আওয়ামী লীগ কুরআন সুন্নাহ বিরোধী কোনো আইন করবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে।
এদিকে বিএনপির ইশতেহারে বলা হয়েছে, তারা ক্ষমতায় গেলে ইমাম খতিব ও মুয়াজ্জিনদের সম্মানজনক বেতন-ভাতা চালু হবে। উভয় দল মাদরাসা শিক্ষাকে আধুনিকায়ন করার কথাও জোর দিয়ে বলেছে।
তো সব মিলিয়ে কেমন হলো এবারের রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহার। এসব নিয়ে কথা হয় বিশিষ্ট লেখক, গবেষক ও মুহাদ্দিস মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীনের সঙ্গে।
তিনি বলেন, বিএনপির ইশতেহারে ঘোষিত ইমাম-খতিব মুয়াজ্জিনদের সম্মানজনক বেতন-ভাতা চালুর প্রতিশ্রুতকে আমি ধন্যবাদ জানাই। এবং ইতিবাচক দিক হিসাবে দেখি।
এদেশে উলামায়ে কেরামের অবদান অনস্বীকার্য। বিশেষ করে সৎ নাগরিক গড়ে তুলতে উলামারে কেরামের অবদানকে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, উলামায়ে কেরাম বাংলাদেশের প্রাণ হিসেবে বিবেচিত। তাই এদেশে সুষ্ঠ সমাজকে বাঁচিয়ে রাখতে মানুষের মধ্যে উলামায়ে কেরামের সম্মান চর্চাকে বাঁচিয়ে রাখা হয়। সে হিসেবে উলামায়ে কেরামের চলমান খেদমতের ধারা নিরাপদভাবে বেগবান রাখা সবার দায়িত্ব।
আমি মনে করি, উলামায়ে কেরামের জন্য দেয়া এ আশ্বাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি যদি বাস্তবায়ন করা হয় তাদেরকে দেশবাসী বিশ্বাসের চোখে দেখবে। সবার কাছে সম্মান ও আস্থাভাজন হিসাবে পরিচিতি লাভ করবেন তারা।
আমি মনে করি, এদেশে যখন যারাই ক্ষমতায় আসবেন, উলামায়ে কেরামকে গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজন আছে। কারণ সমাজে তাদের অগ্রণি-ভূমিকাকে বাদ দিয়ে জাতিকে নৈতিকতা সম্পন্ন, সৎ নাগরিক হিসাবে গড়ার এবং কল্যাণকর সমাজ গড়ার কোনো উপায় নেই।
মাওলানা যাইনুল আবিদীন বলেন, একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, ইশতেহার মানে অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়া। অঙ্গীকার রক্ষা করার মাধ্যমে মানুষের আস্থা টিকে থাকে। কিন্তু জনগণকে দেয়া অঙ্গীকার রক্ষায় দলগুলো যদি সচেষ্ট না হয় মানুষের অনাস্থা সৃষ্টি হয়। এ জন্য ইশতেহারকে শুধু ফাইলবদ্ধ না করে অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের দেয়া (কোরান-সুন্নাহ বিরুধী কোনো আইন পাশ করা হবে না) প্রতিশ্রুতকে ধন্যবাদ জানাই। এবং ইশতেহারে এ বিষয়টিকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি।
এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলমান। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্ম বিষয়ে সর্বদা সজাগ-সচেতন থাকা জরুরি। প্রত্যেক মানুষ ধর্মকে বিশ্বাস করে। কারও বিশ্বাসের মূলে আঘাত নয়, তাদের বিশ্বাসকে মূল্যায়ন করা সবার দায়িত্ব।
এ ঘোষণা কেবলই রাজনৈতিক কিনা যা স্বভাবতই রাজনীতিবিদরা পরবর্তীতে ভুলে যান, এমন প্রশ্নের উত্তরে মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন বলেন, যারা রাজনীতি করেন তারা তো রাজনৈতিক পলিসিতেই কথা বলেন। তবে তাদের দেয়া ঘোষণাকে (ইশতেহার) আমি স্রেফ বক্তব্য মনে করছি না।
আগেই বলেছি ইশতেহার মানে অঙ্গীকারাবদ্ধ হওয়া। সে অঙ্গীকার যদি তারা রক্ষা না করেন মানুষের কাছে পরবর্তীতে অনাস্থা সৃষ্টি হবে। যা কোনো দলই আশা করি চাইবে না।
আরেকটা ব্যাপার হলো, আওয়ামী লীগ সরকার আগের নির্বাচনগুলোতেও কুরআন সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন না করার ঘোষণা দিয়েছিল। তাদের সময়কালীন সরাসরি কুরআন সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন আমার জানা মতে পাশ হয়নি।
আমি আশা করবো তারা এ প্রতিশ্রতিতে আগামীতে বদ্ধপরিকর থাকবে এবং ওয়াদা ভঙ্গ করবে না।
আওয়ামী লীগ বিএনপি উভয় দল তাদের ইশতেহারে কওমি মাদরাসা শিক্ষাকে আধুনিকায়নের প্রসঙ্গ এনেছে। এ বিষয়টিকে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ কীভাবে দেখবেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কওমি মাদরাসার লক্ষ উদ্দেশ্য ভিন্ন। কেবল অর্থ উপার্জন বা সরকারি চাকরি এ শিক্ষার উদ্দেশ্য নয়।
রাজনৈতিক দলগুলো যে অর্থে মাদরাসার আধুনিকায়ন করতে চান তাতে মাদরাসা কর্তৃপক্ষের দ্বিমত আছে, থাকবে। তবে দাওরায়ে হাদিসের মান (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) অনুযায়ী কওমি শিক্ষার্থীরা যেসব ধর্মীয় জায়গার জন্য উপযুক্ত সেগুলোতে তাদের অন্তর্ভূক্তিতে কোনো সমস্যা নেই।
আরআর