ড. মাওলানা মুশতাক আহমদ
আলেম, লেখক ও গবেষক
গত ১ ডিসেম্বর টঙ্গীর মাঠে যে বর্বরচিত ঘটনা ঘটে গেছে এটি অত্যন্ত নিন্দনীয়। এটা মর্মান্তিক এবং ন্যাক্যারজনক কাজ। আমরা এই কাজের তীব্র নিন্দা জানাই। সঙ্গে সঙ্গে একটা কথা বলতে চাই, চলমান দ্বন্দ্ব মিটিয়ে আবার আমরা আগের অবস্থা ফিরে যেতে পারি।
এ ক্ষেত্রে মাওলানা সা’দ সাহেব একটা কথা বলে দিতে পারেন, আমি আলেমদের সঙ্গে আছি। হক্বানি রব্বানি ওলামায়ে কেরামদের সঙ্গে আছি। একটা কথা বলে দিলেই সবার সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।
আর কেনই তিনি আলেমদের সঙ্গে থাকবেন না? থাকার মধ্যে কী লজ্জার? এই দাওয়াত ও তাবলিগের কাজ মাওলানা ইলিয়াস রহ. সারা দুনিয়া ব্যাপী এ কাজকে প্রতিষ্ঠিত করলেন আমাদের মহব্বতকে সামনে রেখে। উসূল বানিয়ে দিলেন বড়দের সম্মান কর। ছোটদের স্নেহ কর। আলেমদের আজমতের সঙ্গে দেখা।
এই ভিত্তির ওপর, এই আখলাকের ওপর হযরত মাওলানা ইলিয়াস রাহ. সারা পৃথিবীতে এ কাজকে তুলে ধরলেন। আজ হয়ত মাওলানা সা’দ মনে মনে ভাবছেন দেওবন্দ গেলে তিনি ছোট হয়ে যাবেন। দেওবন্দ গেলে কেউ ছোট হয় না, সে কাসেম নানুতুবী হয়, রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী হয়, আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী হয়, শাইখুল হিন্দ আহমদ হাসান হয়, হুসাইন আহমাদ মাদানি হয়, আশরাফ আলী থানবী হয়।
হযরত মাওলানা সা’দকে আমি আবার অনুরোধ করবো, আহলে দেওবন্দ আহলে ইলম তাদের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক রাখা উচিৎ। এটাকে হেয় মনে করার কোনো কারণ নেই। আপনি হয়ত ভাবতে পারেন, দেওবন্দ গেলে অন্যরা ছুটে যাবে। আহলে হাদিস, গাইরে মুকাল্লিদরা ছুটে যাবে।
আরে ভাই, এ আরব ওয়ালে তো ইংরেজকে সাথ পাচ্চিস সাল মোকাবেলা নেহি কর সাকা, এ দেওবন্দ ওয়ালে পাচ্চিস নেহি দুশো সাল তক মোকাবেলা কিয়া হে। এটা হল ওই জামাত যারা বাতেলের সঙ্গে কখনও আপস করে না।
হয়তো কেউ কেউ ভাবতে পারে আরবে কোনো কোনো দেশ সা’দ সাহেবকে সমর্থন করে, টাকা পয়সা দেয়। আমি বলব এই আরবরা এরা কেউ তো কুরাইশি নয়। আল্লাহর হাবিবের আওলাদও নয়, তারা বহিরাগত।
আরবরা ক্ষমতার মালিক, তেলের মালিক, তাদের কথামতো সা’দ সাহেব সারা পৃথিবীতে তার এই ফিকিরকে চালু করবেন এটা অসম্ভব। বরং আহলে দেওবান্দ জু সিদ্দিকি হে, জু ফারুকি হে, জু উসমানি হে, জু উলুবি হে, জু সা’দাত হে। তুমি মক্কা মদিনায় তাদের খুঁজে পাবে না।
দেওবন্দে আছে এসব আওয়াদ যারা দ্বীনের জন্য নিজেদের জীবন ফেদা করে দিয়ে সারা দুনিয়া ঘুরে ঘুরে ইসলারে দাওয়াত, দ্বীনের দাওয়াত, ইলমের দাওয়াত নিয়ে সারা পৃথিবীতে বিচরণ করছে।
দারুল উলুমকে মারকাজ বানিয়ে সারা পৃথিবীতে হক ও হক্কানিয়াতের আওয়াজ উঁচু করে রেখেছেন। যার একটি শাখা হযরত মাওলানা ইলিয়াস রহ. হযরত মাওলানা যাকারিয়া রহ. হযরত মাওলানা ইউসুফ রহ. হযরত মাওলানা যুবায়ের রহ. এইসব ব্যক্তিবর্গ আহলে ইলেমগণ দারুল উলুমকে মারকাজ বানিয়ে সারা পৃথিবীর আল্লাহ ভোলা মানুষদের দাওয়াতের মাধ্যমে মসজিদের নিয়ে আসছেন। তাহাজ্জুত জিকরুল্লাহর মধ্যে নিয়ে আসছেন।
আপনিও এ পথ ধরুন, আমি হযরত মাওলানা সা’দ সাহেবকে বিনীত অনুরোধ জানাবো। তাসাউফকে অস্বীকার করে, জিকরুল্লাহকে অস্বীকার করে, বাইয়াত মুরিদকে অস্বীকার করে, এই পৃথিবীতে দ্বীনের কোনো কিছুই করা যাবে না।
আমরা যারা গাইরে মুকাল্লিদকে আামীর বানিয়ে তাসাউফকে অস্বীকার করতে চাই, জিকরুল্লাহর বিরুদ্ধে করা বলতে চাই, আমি তাদের বুঝাতে চাই, বলতে চাই, আরজ করতে চাই, ভাইরা আমার! হযরত মাওলানা ইলিয়াস রহ. এই জিকরুল্লাহকে এতো পাবন্দির সঙ্গে গ্রহণ করেছিলেন। চব্বিশ ঘন্টার প্রতিটা সেকেন্ড যেন জিকরুল্লাহ ওপর থাকতেন।
এমনকি কোনো জামাত যখন গাশতের জন্য বাইরে যাবে তখনও একজন মসজিদে বসে আল্লাহ আল্লাহ লা ইলাহা ইল্লাহ জিকির করে সেই নিজাম রেখে গেছেন। আজ জিকরুল্লাহর সেই নিজাম গেল কোথায়?
জিকরুল্লাহর অপব্যখ্যা করে অন্যদিকে প্রবাহিত করার প্রচেষ্টো একটা বড় দুঃখজনক বিষয়।
আমি হযরত সা’দ সাহেবকে অনুরোধ করবো, ফিরে আসুন তাসাউফের দিকে ফিরে আসুন, জিকরুল্লাহর দিকে আসুন। ইলমের দিকে ফিরে আসুন আহলে দেওবন্দের দিকে ফিরে আসুন। আলেম ওলামার কাছে ফিরে আসুন।
আপনাকে সামনে রেখে আমরা সারা পৃথিবীর সব মানুষের কাছে তাওয়াত ও তাবলীগের কাজ তুলে ধরবো। আমরা সমস্ত শক্তি দিয়ে আপনার সহযোগিতা করবো। আল্লাহ তায়ালা আপনাকে সাহায্য করবেন।
মনে রাখবেন আলেম ওলামাকে বাইপাস করে নিজস্ব কোনো চিন্তা, কোনো নজরিয়া, কোনো ফিকির যদি এ দেশে চালানোর ইচ্ছে হয় তাহলে সেটা মৌদুদিয়াত হতে পারে। কাদিয়ানিয়াত হতে পারে, হযরত মাওলানা ইলিয়াস রহ. এর তাওয়াত ও তাবলিগ হতে পারে না। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন।
শ্রুতি লেখন: ইসমাঈল আযহার
আরআর