আওয়ার ইসলাম: তিনি মোটেও ছেলে-ছোকড়া নয়, ৬৫ বছরের বৃদ্ধ। এ বয়সে সাধারণত চাকরি থেকে অবসরে গিয়ে বিশ্রামে থাকার কথা তার। কিন্তু এই বৃদ্ধ মানুষটি মোটেই রাজি নন অবসর বা বিশ্রামে।
যে কাজ বাল্য-কৈশর-যৌবনে সারা হয়নি, সে কাজই নতুন করে শুরু করেছেন নানহে লাল। আর এ কাজ হলো পড়াশোনা। নিয়ম করে রোজ সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে, তৈরি হয়ে স্কুলে যাচ্ছেন তিনি।
হিন্দুস্তান টাইমসের খবর বলছে, ভারতের উত্তর প্রদেশের আমেথির দাদরা এলাকার মুসাফির খানার বাসিন্দা নানহে লাল, যিনি ছোটবেলায় সুযোগ পাননি স্কুলে যাওয়ার। দারিদ্র্য নয়, কুসংস্কার কেড়ে নিয়েছিল তার স্কুলে যাওয়ার অধিকার।
স্কুলে যাওয়ার রাস্তায় একটি বুনো বিড়াল অনেক শিশুকে আঁচড়ে-কামড়ে দিয়েছিল। সেজন্য স্কুলে যেতে দেওয়া হয়নি নানহেকে। বিড়ালের কামড় অশুভ, এই ছিল অজুহাত।
সূত্রের খবর আরও বলছে, কিশোর বয়স থেকে পাহারাদার হিসেবে কাজ করেছেন নানহে। পড়াশোনা না শেখায় ভাল কোনও চাকরিও পাননি। বয়স বাড়ার পরে অবসর নেন কাজ থেকে। আর তখনই ফিরে আসে পড়াশোনার ইচ্ছে।
নানহে লাল বলেন, ‘একদিন কাজ করতে করতেই আমি দেখছিলাম, একদল বাচ্চা মজা করতে করতে স্কুলে যাচ্ছে। সে দিনই ভেবেছিলাম, স্কুলে ভর্তি হলে আমিও এমন আনন্দ করতে পারব। সময়ও কাটবে ভালো।’
শিক্ষার জন্য বয়স যে কেবলই একটা সংখ্যা, একথা মুখে বললেও জীবনে পালন করতে পারেন খুব কম মানুষই। নানহে তাদের মধ্যে একজন।
গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে শুরু। সেখানে ভর্তি নেওয়া হয়নি তার। তাই সর্বশিক্ষায় যোগ দেন তিনি। অক্ষরজ্ঞান দিয়েই শুরু। বছর দুয়েক ঘষামাজার পরে ফের ভর্তি হতে যান ওই স্কুলে। এবার আর ফিরতে হয়নি।
স্কুল কর্তৃপক্ষ বলেছেন, ‘এই বয়সে তার এই আগ্রহ দেখে অবাক হয়ে যাই। অনুমতি দিই ভর্তির। খাতায়-কলমে ছাত্র হিসেবে তার নাম না থাকলেও নিয়মিত ক্লাস করেন তিনি।’
তবে এই ঘটনা তিন বছর আগের। এখন নানহে অষ্টম শ্রেণিতে। তিনি বলেন, ‘আমি খুব খুশি, বাচ্চাদের সঙ্গে একই বেঞ্চে বসতে পেরে। আমি পরীক্ষা দিই, স্পোর্টসে নাম দিই, নানা কিছুতে যোগ দিই। বাচ্চারা ভালবেসে আমায় ‘দাদাজি’ বলে। জীবনটা বড্ড সুন্দর মনে হয়। আসলে শেখার তো কোনও বয়স হয় না। আমার জন্য হয়তো এটাই ঠিক সময়।’
শিক্ষকেরা বলছেন, ‘কখনও স্কুল কামাই করেন না নানহে। মন দিয়ে পড়েন প্রতিদিন। বাচ্চারাও খুব ভালবাসে তাকে। বয়সের কথা মাথায় না রেখেই স্কুলের প্রতিটা অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। সবাই খুশি। শুধু বাচ্চারা নয়, শিক্ষকদের কাছেও তিনি খুবই সম্মানীয়।’
কেপি