আলী আবদুল মুনতাকিম
প্রকৌশলী ও কুরআন গবেষক
একজন হাফেজে কোরান দাওরায়ে হাদিস, ইফতা শেষ করে মাওলানা (বা ইসলামী ব্যক্তিত্ব) হিসেবে পাজামা-পাঞ্জাবি-দাড়ি -টুপি পড়ছেন, হয়ত তার চেহারা তত ভাল নয়, আরেকজন এক চিল্লা দিয়ে বা কোন দরবারের মুরিদ হয়েই পাজামা-পাঞ্জাবি-দাড়ি-টুপি পড়েছেন, তার পাগড়ি-টুপি-দাড়ি আকর্ষণীয়, চেহারা ও সুন্দর।
দুজন একত্রে দাঁড়ালে মাওলানাকে বাদ দিয়ে মুরিদ বা সাথীকেই একজন সাধারণ মানুষ নামাজ পড়াবার জন্য আগে ঠেলে দিবেন। দুজন কি সমান? সমস্যাটা এখানেই। পরে আসছি এসব কথায়।
তাবলিগের বর্তমান আমীর সা'আদ ইবনে হারুন ইবনে ইলিয়াস কান্ধলভী ও মাওলানা যোবায়ের তথা কওমিপন্থী তথা দেওবন্দী ভাইদের দীর্ঘদিন ধরে চলা বিরোধ এর চূড়ান্ত রূপ দেখা গেল ১ ডিসেম্বর টংগীর এজতেমা মাঠে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, শত শত আহত এবং একজনের নিহত হওয়ার মধ্য দিয়ে। স্থগিত হয়ে গেল বিশ্ব এজতেমা।
মাওলানা আব্দুল আজিজ ১৯৪৪ সালে বাংলাদেশে তাবলীগ শুরু করেন। ১৯৪৬ সালে কাকরাইল মসজিদে ১ম ইজতেমা, ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রামে, ১৯৫৮ সালে সিদ্দিরগঞ্জ, ১৯৬৫ সালে টংগী পাগার এবং ১৯৬৬ সালে তুরাগের ১৬০ একর জায়গায় বিশ্ব ইজতেমা শুরু হয়ে অদ্যবধি চলছিল।
তাবলিগ জামায়াতের মুরুব্বিদের লটারির মাধ্যমেই বিশ্বইজতেমার জন্য বাংলাদেশকে বাছাই করা হয়েছিল। ২০১৮/১৯ এর ৫৬ তম ইজতেমার ভাগ্যে কি আছে জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
ভারতের উত্তর প্রদেশের দেওবন্দের মুহতামিম আল্লামা নোমানী, মাওলানা আরশাদ মাদানী, মাওলানা সাঈদ আহমদ পালনপুরী, তাদের বাংলাদেশস্থ অনুসারী কওমি অংগনের আলেমগণ-আল্লামা আহমদ শফি, আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী, আল্লামা আশরাফ আলী, আল্লামা আবদুল কুদ্দুস, আল্লামা মাহমুদুল হাসান, আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী, মাওলানা আবদুল হামিদ, মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাস, মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মালেক, মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক, মাওলানা মাহফুজুল হক, মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদসহ দেশের শীর্ষ আলেমগণ একদিকে, তাদের ওজাহাতি পক্ষ বলা হচ্ছে।
অপরদিকে তাবলীগের সূচনাকারী মাও. ইলিয়াস রাহ. এর নাতি মাওলানা সাআদ সাহেবের নেতৃত্বের আনুগত্য স্বীকার করে এতায়াতী হিসাবে বরাবরের মত কাজ চালিয়ে নিতে চাচ্ছেন, কাকরাইলের ওয়াসিফুল ইসলাম, আশরাফ সাহেব ও নাসিম সাহেবসহ অন্যান্যরা, তাদের অনুসারী ও হাজার হাজার মুসলমান।
২০১৭ সালের নভেম্বরে এ দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। মাওলানা সাআদ এর যে কথাগুলোর কারণে বিতর্ক সূত্রপাত হয়, তার সংক্ষেপ হচ্ছে, হাতে সিল দেয়ার কারণে ভোট দেয়া যাবে না, ক্যামেরা মোবাইল নিয়ে যে আলেমম নামাজ পড়েন তিনি ওলামায়ে ছু’। দ্বীন শিক্ষা দিয়ে বা ওয়াজের বিনিময়ে অর্থ গ্রহণ জায়েজ নয়। এ অর্থ বেশ্যাদের অর্থের চাইতেও খারাপ।
তিনি সাহাবীদের কিছু আচরনের সমালোচনা করেন, ইউসুফ আ., মুসা আ. ও যাকারিয়া আ. এর কিছু কথা তিনি ভুল ছিল বলে আখ্যায়িত করেন।
ফলে দেওবন্দ এর আলেমগণ তার চরম প্রতিবাদ করেন ও ভুল স্বীকার করতে বলেন। কিন্তু তিনি তার বক্তব্যে অটল থাকেন। পরে অবশ্য বাংলাদেশের তার অনুসারীরা বলছেন তিনি ভুল স্বীকার করেছেন। সুতরাং সবাই যেন আগের মতই দাওয়াতের কাজে মনোনিবেশ করেন। ঐক্যবদ্ধ থাকেন।
বিষয়টি তো মিটে যেতে পারত। কিন্তু মিটল না কেন? কেন আজ সারা বিশ্বে ছি. ছি. এর পাত্র হলেন! কেন আজ বাংলাদেশের সাধারণ মুসলমানরা পর্যন্ত আপনাদের মারামারির কারণে লজ্জিত হতে হচ্ছে।
ইসলাম ও মুসলমানদের নিয়ে এই ঘটনার জন্য জঘন্য ভাষায় সোস্যাল মিডিয়ায় গালাগাল করা হচ্ছে। করেছেন কি আপনারা? লোকজন কি বলছে শুনুন- একজন অবিশ্বাসীর ইউটিউবে প্রচারিত তার ঠাট্টা-মশকরা, তুচ্ছতাচ্ছিল্যেে ভরা বক্তব্য শুনছিলাম।
তিনি বলছিলেন, ‘এই যে দেখুন মোল্লাদের এক গ্রুপ গেট ভেঙে হাজারে হাজারে লাঠি-শোটা নিয়ে আল্লাহু আকবর ধ্বনি দিয়ে আরেক মোল্লা গ্রুপকে ধাওয়া করছে, ওই দেখুন- কিভাবে পেটাচ্ছে, ঠিক এইভাবেই জঙ্গে জামাল এর যুদ্ধ হয়েছিল। দুই গ্রুপের লোকেরাই আল্লাহু আকবর ধ্বনি দিয়ে পরষ্পরের ওপর ঝাপিয়ে পড়েছিল।
৬৫৬ খৃষ্টাব্দে ইরাকে একদিকে আলী রা. এর অনুসারী সাহাবীরা আরেক দিকে আয়শার পক্ষে সাহাবীরা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধেে জড়িয়ে পড়েছিল। অনেক সাহাবী সেদিন নিহত হয়েছিল। এরাই হল মুসলমান... আজ আবার আমরা জঙ্গে জামাল দেখছি...’
এভাবে বহুভাবে বিকৃত করে সে বলে যাচ্ছিল। কষ্টে কান্না পাচ্ছিল দেখে।
আরেকজন নাস্তিক ছিয়াছিত্তাহ হাদীস গ্রন্থ সমূহের অনেকগুলো বিভিন্ন হাদিসের নং,পৃষ্ঠা- উল্লেখ করে দেখিয়ে দিয়ে বললেন (ইউটিউব এ আছে)।
‘১ ডিসেম্বর তাবলিগের মারামারি করা এই দুই গ্রুপই রাসুলের হাদিস অনুসারে জাহান্নামী। তারা যা করছে তা তাদের নবী শিখিয়ে গেছে, কোরানে বলেছে, তোমরা শত্রুদের ঘারের ওপর আঘাত করো, জোড়ায় জোড়ায় আঘাতের কথা বলা আছে (নাউজুবিল্লাহ, কী বিকৃত কথা!!)।
তাই টংগির মারামারিতে সবার মাথায় ও ঘারে আঘাত করা হয়েছে। এভাবে বাংলাদেশে অনেক কেই হত্যা করা হয়েছে’।
কিন্তু শিক্ষিত, জ্ঞানী সকল মুসলমান মাত্রই জানেন, রাসুল সা. কে যখন হত্যার ষড়যন্ত্র হয়, কাফের মুশরিকদের পক্ষ থেকে সন্ধি ভঙ্গ করা হয়, তারা মুসলিমদের নিশ্চিহ্ন করতে একাত্ম হয়, তারা শিরকে লিপ্ত হয়, আল্লাহকে অস্বীকার করে, ইসলামের দাওয়াতে বাধা সৃষ্টি করে, সাহাবীদের নির্মমভাবে হত্যা করে, তখনই কেবল কাফেরদে আঘাতের আয়াত আসে (সে আয়াতগুলো ছিল মুসলিম ও কাফেরদের মধ্যে যুদ্ধ অবস্থায় নাযিলকৃত আয়াত, যা পরে যথায় তথায় ব্যবহার যোগ্য নয়), তবে তারা পূনঃসন্ধি করলে বা সুমতিতে আসলে যুদ্ধ না করতে বলা হয়। আল্লাহপাক স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, ক্ষমাই উত্তম৷
টংগীর ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোরানের আয়াতকে অবিশ্বাসীরা বিকৃত করে উপস্থাপন করে যাচ্ছে। কেন এ সুযোগ করে দিলেন বলতে পারেন?
অবশ্য আপনারা বলতে পারবেন না। আর এরকম করা যে অসম্ভব কিছু নয় তা তবলিগের গাশতে গেলে/বসলে, চিল্লায় গেলে/সময় লাগালে, ৩ দিনের দাওয়াতি মেহনতে গেলে, সাথীদের সাথে ঘুরলে, ফাজায়েল সিরিজ পড়লে বুঝা যায় সহজে।
কাজগুলো (অবশ্য সব নয়) আমি করেছি, তাই অভিজ্ঞতা থেকে বললাম। একটি উদাহরণ-
১. কাকরাইল মসজিদ থেকে ১৫ জনের একটি জামাত আমাদের এলাকার মসজিদে আসলেন। গ্রুপের আমির একজন বড় ব্যবসায়ী, ঢাকার মধ্যবর্তি এক এলাকায় বড় মাস্তানও ছিলেন (নিজে আমাকে বলেছেন), তাবলীগে আসায় তার এলাকার মানুষ খুশিও হয়েছে।
৩/৪ বছর হয় তবলিগে এসেছেন তিনি, সুদর্শন, সফেদ দাড়ি, লম্বা জুব্বা, পাগড়ি মাথায়, দেখলেই ভক্তি আসে, ভাল মেসাল দিয়ে কথা বলতে পারেন, মাথায় যথেষ্ঠ বুদ্ধি, সাংগঠনিক শক্তি ভাল। তাই হয়ত আমির করে পাঠানো হয়েছে।
কিন্তু তিনি কোরান শরিফ ভালভাবে পড়তে পারেন না। নামাজের সহু সেজদার মাসলাও ভাল জানেন না। একটি সুরা বা একটি সহিহ হাদীস না জানলেও, ফাজায়েলে আমল, নামাজ, রোজা, যাকাত ইত্যাদি বইগুলো ভাল জানেন।
কোনো সুরা শুদ্ধভাবে পড়তেও পারেন না। তার নির্দেশেই জামাত পরিচালিত হয়। অথচ তার অধীনে দাওরায়ে হাদিস পাশ একজন আলেমও রয়েছেন, তার বলার কিছুই থাকে না। তিনি এসেছেন দ্বীনের দাওয়াতে সহীহ নিয়ত বা খুলুসিয়াত নিয়ে।
কওমি আলেম হয়েও কিন্তু তিনি অসহায়। তিনি বিনয়ের সাথে কোরানের কোনো সুরার তাফসির করতে চাইলে অনুমতি পান না। আমির অনুমতি দেন না।
সুশ্রী চেহারার লেবাসধারী দিয়ে ইসলামের দাওয়াতের কাজ করতে গিয়ে আজ এই দশা। সুন্নতি পোশাক অবশ্যই পড়া উচিত, কিন্তু পোশাককে গুরুত্ব দিয়ে ইসলামের জ্ঞান অর্জনকে গুরুত্ব দিবেন না তা কি করে হয়?
লেবাসকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে কওমি আলেমগণও অনেক ভুল করে যাচ্ছেন অহরহ। বলতে গেলে তর্ক বাড়বে, তাই বললাম না। মারামারির পর টংগী মাঠে মোহাম্মদপুরের এক মাদরাসার ভাইস প্রিন্সিপাল বললেন (ইউটিউবে দেখলাম), সন্ত্রাসী আর গুন্ডারা তবলিগে এসেছে, জুব্বা পড়েছে, কিন্তু চরিত্র তো বদলায় নাই। তাই তারা হুন্ডা, লাঠি-শোঠা নিয়ে আমাদের হামলা করেছে, রক্তাক্ত করেছে।
এই কথাটি বিভিন্ন পীরের মুরিদদের বেলায়ও একশত ভাগ সত্য। কোরান হাদীস পড়ে না, ইসলামের কোনো জ্ঞান নাই, অথচ লেবাস পড়ে পাগড়ি লাগিয়ে বড় মুসুল্লি সেজে বসেছেন, যেন জান্নাতের ঠিকাদার।
একজন তো ফাতেমা রা. কে স্ত্রী বানিয়েছেন, নিয়মিত আল্লাহর সাথে কথা বলছেন (নাউজুবিল্লাহ)। রোহিঙ্গাদের নিয়ে নাকি তিনি আলাপ চালিয়ে যাচ্ছেন।
যেহেতু ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান নাই, তাই তাদের দ্বারা সবই সম্ভব। তাহলে বুঝা গেল ইসলাম জানার, বুঝার, পড়ার ও আমলের বিষয়। কোরানের প্রথম নাযিলকৃত শব্দই হচ্ছে ‘ইকরা’ অর্থাৎ ‘পড়’। পড়ার কোনো বিকল্প নাই।
বাংলাদেশের মাঠে-ময়দানে ওয়াজের মাধ্যমে লক্ষ-লক্ষ লোক ইমান ও আমলের কিছুটা ছবক পান। যা বিশাল ইসলামের দাওয়াতের কাজ। এটি আজীবন চলবে ইনশাল্লাহু তায়লা।
দুঃখজনক হল কিছু ওয়ায়েজিন এটাকে কণ্ঠ ব্যবসায় পরিণত করেছেন। অন্য তরিকার অনুসারীদের সমানে বিষোধগার করে থাকেন। অমুক মুরতাদ, অমুক ফাসেক-মুনাফেক, অমুক কাফের ইত্যাদি।
কেন ভাই? নিজের দিকে তাকান না কেন? ওয়াজ শেষ করে ৫০,০০০/টাকা নিয়ে যান কেন? এটা জায়েজ?
বর্তমান বিশ্বে বেশ কিছু বিখ্যাত ইসলাম প্রচারক/স্কলার সুন্নতি পাজামা পাঞ্জাবি পরেন না। সিংগাপুর, মালয়শিয়া, মিশর, দুবাই, সৌদি আরব, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে লেকচার দিয়ে বেড়াচ্ছে। তাদের সামনে সৌদি অনেক আলেম বসা থাকে, বিভিন্ন ধর্মীয় নেতারাও থাকে, লেকচার শুনে। কি সুন্দর পরিবেশ। সুন্নতি লেবাস নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলে না।
অথচ বাংলাদেশের কিছু মূর্খ লেবাসধারী মুরিদ তাদের সমালোচনা করে। দেখলাম কিছু ওয়ায়েজিন তাদের ওয়াজে, টুপি-পাঞ্জাবি-পাজামা ব্যবহার না করার কারণে ইসলামি স্কলারদের খুব ধোলাই করলেন, কেন স্যুট-টাই পড়েন, বিজাতীয় পোশাক পড়েন, তাদের থেকে নাকি শেখার কিছুই নাই।
তাদের জবাবে ইউটিউবে দেখা গেল, একজন ভদ্রলোক প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বললেন, আপনি হুজুর, যে মাইকে কথা বলছেন, যে চশমাটা পড়েছেন, যে ঘড়িটি পড়েছেন, যে হেলিকপ্টারে গিয়ে ওয়াজ করেন, সেগুলো কি বিজাতীয়দের নয়? উটে চড়ে যান না কেন, খাজুর পাতার প্যান্ডেলে ওয়াজ করুন।
যে মহাকবি ইকবালের শের পড়েন, যে কারী আবদুল বাসেতের কোরান তেলাওয়াতের প্রশংসা করেন, তাদের তো দাড়িই ছিল না!
আর টাই পড়া ইসলামি স্কলারের সামনে সৌদি আরবের স্কলারগণ বসে আলোচনা শুনেন- তারা কি আপনার চেয়ে কম জ্ঞানী?
এগুলোর উত্তর এ ধরনের ওয়ায়েজিনদের কাছে নেই। আল্লাহপাক কণ্ঠ দিয়েছেন, তাই কণ্ঠ ব্যবসা করে যাচ্ছেন। সুতরাং ওয়াজে সতর্ক হয়ে কথা বলা উচিত।
কিচ্ছা-কাহিনী, গল্প-কবিতা, হরিণি-বাঘিনি, জিকিরের নাচা-নাচির বৈধতার ওয়াজ বাদ দিন। এক ওয়ায়েজিন বললেন, ফুটবল-ক্রিকেট খেলা দেখে নাচতে পারলে আল্লাহর জিকিরের সাথে মাঠে নাচলে সমস্যা কি? কত বড় মূর্খতা! কে বুঝাবে তাদের!
কওমি অংগনের আওলাদে রাসুল, বিখ্যাত আলেমদের অনেকেই আল্লাহর অলি, তাদের প্রতি সম্মান রেখে কঠিন একটি কথা বলি।
আমাকে মাফ করবেন, দাওরা হাদিস, ইফতা শেষ করে মাওলানা হয়ে/ওয়ায়েজিন হয়ে আপনাদের ছাত্র বা অনুসারীরা অনেকেই মনে করেছেন মাওলানা-মুফতি তো হয়েই গেলাম।আর পায় কে?
পড়াশোনা ছেড়ে দেন, প্রেকটিসিং স্টাডি কমিয়ে দেন। ফলে কোনো বিষয়ের জটিল প্রশ্ন করলে বলেন একটু তাহকিক করে বলি! অথচ কোনো নাস্তিককে প্রশ্নটি করলে কম সময়ে শুধুই উত্তর দেয় না, ১০ টি রেফারেন্সও দিয়ে ফেলে। কারণ তারা প্রেকটিসিং, নিয়মিত ইসলাম নিয়ে পড়াশোনা করে (অবশ্যই ইসলামকে হেয় করতে এবং নাস্তিক্যবাদকে প্রতিষ্ঠিত করতে)।
যে নিয়তেই তারা পড়াশোনা করুক একজন মুফতি মাওলানা অবশ্যই তার চেয়ে বেশি জ্ঞান রাখবেন, আমরা এই আশাটাই সবসময়ই করি। কিন্তু তারা কিছছা-কাহিনীর দিকে মনোযোগী বেশি, হয়ত দর্শকরা এটা খায় বেশি। মনে রাখতে হবে ওয়াজের মাঠের দর্শকগণ আবেগী বেশি। একাডেমিক আলোচনায় তারা ইন্টারেস্টেড নন। অথচ যুগটা একাডেমিক দিকে টার্ন নিচ্ছে।
অবশ্যই অনেক আলেম যথেষ্ট পড়াশোনা করছেন, আমলও আছে, দ্বীনের জন্য যথেষ্ঠ কাজও করছেন। তাদের মর্যাদাও বেশি। তারা শায়খুল হাদীস, দ্বীনের দায়ী। শিক্ষিত জনেরা তাদের সেলুট করেন। অবশ্য তাদের শ্রোতা কম, ওয়াজের দাওয়াতও কম।
মূল কথায় আসি। নামে মুসলমান, শুনে মুসলমান, উত্তরাধিকার সূত্রে মুসলমান, দেখে মুসলমান, লেবাস লাগিয়ে মুসলমান- এগুলো বাদ দিন। এগুলো শুধুই হয়ত বোবা, অন্ধ, পঙ্গু, জীবনের সব সুযোগ বঞ্চিত, অটিস্টিকদের মানায়।
কিন্তু মুসলমান শিক্ষিত, অধ্যাপক, মুফতি মাওলানা, মুহাদ্দিস, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার মুসল্লী, অফিসার, নেতা, শিক্ষক হয়ে কিছু জানবেন না, তা তো হয় না। ইসলাম সম্পর্কে কোনো জ্ঞান রাখি না বলেই তো নানা পথ-মত-দরবারে গিয়ে বিভ্রান্ত হচ্ছি।
আল্লাহ পাক তো বলেই দিয়েছেন, ‘ওয়ালাক্বাদ ইয়াসসারনাল কুরআানা, লিজ্ যিকর, ফাহাল মিম্মোদ্দাক্কির’- অর্থাৎ আমি এ কোরানকে শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য সহজ করে দিয়েছি, কিন্তু আছে কি কেউ শিক্ষা গ্রহণ করার?
সুতরাং পড়ুন আর জানুন। আপনার সব প্রশ্নের ৮০% জবাব কোরানেই আছে। ধর্ম জেনে ধর্মীয় লেবাস লাগালে মানায়। নচেৎ ধর্মকে ক্ষতি করার সম্ভাবনা থেকে যায়। কিছু লোক ধর্মীয় লেবাস লাগিয়ে মহান মুসলমান সেজে বসে আছেন, নিজেকেই সঠিক মুমিন, আর সব বাতিল ফেরকা বানিয়ে দূরে ঠেলে দিচ্ছেন। এগুলো মূর্খতার পরিচায়ক।
সবজান্তা হয়ে গেছি, আমরাই সঠিক, আমরাই জান্নাতি এসব মানিসকতা থাকলে, ইসলাম নিয়ে পড়াশুনা না করলে, রাসুলের সুন্নত কি এ ধারণা বা শিক্ষা না নিয়ে বিভিন্ন রাস্তা আর দরবার থেকে জ্ঞান নিতে গেলে, টঙ্গীর মত ঘটনা ঘটা স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
এটা মুসলমানদের লজ্জা, লজ্জা আর লজ্জা।
আমরা কি ওদের মতো মারামারি করতে ইজতেমায় গিয়েছি?
আরআর