আওয়ার ইসলাম: সমাজে বা বিভিন্ন দেশে আজ নির্যাতিত হচ্ছে হাজারো লাখো নারী। এদের মধ্যে অনেকেই শারীরিক নির্যাতনে শিকার।
জোরপূর্বক যে নারীকে ধর্ষণ করা হয়, উক্ত নারী মজলুম। ধর্ষণের কারণে তার কোন গুনাহ হয়নি। বরং নির্যাতিতা হিসেবে তার মর্যাদা আল্লাহর দরবারে বৃদ্ধি হয়।
কারণ, মজলুমের দোয়া আল্লাহ কবুল করেন। তবে সর্বাবস্থায় আত্মহত্যা করা জায়েজ নয়। হারাম।
যেহেতু ধর্ষণের দরূন ধর্ষিতার কোন গোনাহ হয় না। বরং নির্যাতিতা হবার কারণে তার মর্যাদা বৃদ্ধি হয়। তাই এমতাবস্থায় হারাম আত্মহত্যা তার জন্য কি করে বৈধ হতে পারে?
সুতরাং উপরোক্ত পরিস্থিতিতে কোন নারী যদি আত্মহত্যা করে, তাহলে সে তার ধারণা অনুপাতে একটি গোনাহ থেকে (যদিও বাধ্য হবার কারণে এটি তার জন্য গোনাহ হবে না) বাঁচতে গিয়ে আরেকটি মারাত্মক গোনাহে জড়িয়ে গেল।
বাকি উক্ত নারী যদি কোন শিরকের গোনাহ না করে থাকে, তাহলে আমরা আশাবাদী আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দিবেন।
আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেন, অবশ্য যে লোক অনন্যোপায় হয়ে পড়ে এবং নাফরমানী ও সীমালঙ্ঘনকারী না হয়, তার জন্য কোন পাপ নেই। নিঃসন্দেহে আল্লাহ মহান ক্ষমাশীল, অত্যন্ত দয়ালু। (সূরা বাকারা-১৭৩)
হাদিসে আছে আবু হুরাইরাহ্ রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে এক যুদ্ধে উপস্থিত ছিলাম। তখন তিনি ইসলামের দাবীদার এক ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে বললেন, এ ব্যক্তি জাহান্নামী অথচ যখন যুদ্ধ শুরু হল, তখন সে লোকটি ভীষণ যুদ্ধ করল এবং আহত হল।
তখন বলা হল, হে আল্লাহর রাসূল! যে লোকটি সম্পর্কে আপনি বলেছিলেন সে লোকটি জাহান্নামী, আজ সে ভীষণ যুদ্ধ করেছে এবং মারা গেছে। নাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে জাহান্নামে গেছে। রাবী বলেন, একথার উপর কারো কারো অন্তরে এ বিষয়ে সন্দেহ সৃষ্টির উপক্রম হয় এবং তাঁরা এ সম্পর্কিত কথাবার্তায় রয়েছেন, এ সময় খবর এল যে, লোকটি মরে যায়নি বরং মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে।
যখন রাত্রি হল, সে আঘাতের কষ্টে ধৈর্যধারণ করতে পারল না এবং আত্মহত্যা করল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এ সংবাদ পৌঁছানো হল, তিনি বলে উঠলেন, আল্লাহ্ আকবার! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি অবশ্যই আল্লাহ তা‘আলার বান্দা এবং তাঁর রাসুল।
অতঃপর নাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলাল রা.-কে আদেশ করলেন, তখন তিনি লোকদের মধ্যে ঘোষণা দিলেন যে, মুসলিম ব্যতীত কেউ জান্নাতে প্রবেশ করবে না। আর আল্লাহ তা‘আলা এই দ্বীনকে মন্দ লোকের দ্বারা সাহায্য করেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং-৩০৬২)
হযরত আবু হুরায়রা রা থেকে বর্ণিত। রাসুল সা. ইরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তি পাহাড়ের উপর থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে, সে জাহান্নামের আগুনে পুড়বে, চিরদিন সে জাহান্নামের মধ্যে অনুরূপভাবে লাফিয়ে পড়তে থাকবে।
যে ব্যক্তি বিষপান করে আত্মহত্যা করবে, তার বিষ জাহান্নামের আগুনের মধ্যে তার হাতে থাকবে, চিরকাল সে জাহান্নামের মধ্যে তা পান করতে থাকবে, যে ব্যক্তি লোহার আঘাতে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামের মধ্যে লোহা তার হাতে থাকবে, চিরকাল [দীর্ঘদিন] সে তার দ্বারা নিজের পেটে আঘাত করতে থাকবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং-৫৪৪২, সুনানে নাসায়ি, হাদিস নং-১৯৬৪)
নিশ্চয় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে। এছাড়া যাকে ইচ্ছা, ক্ষমা করেন। যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে সুদূর ভ্রান্তিতে পতিত হয়। (সূরা নিসা-১১৬)
হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল সা. ইরশাদ করেন যে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লা’ বলবে আর তার অন্তরে একটি যব পরিমাণও নেকী থাকবে, তাকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে এবং যে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবেআর তার অন্তরে একটি অণু পরিমাণও নেকী থাকবে তাকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং-৪৪, সহিহ মুসলিম, হাদিস নং-১২৫, মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদিস নং-৩০৩৮৫।
সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৪৪৩, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-১২৬, মুসনাদে আবি ইয়ালা, হাদিস নং-২৯২৭, মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং-১২১৫৩, মাশকিলুল আসার লিততাহাবি, হাদিস নং-৪৮৩৮, সুনানে নাসায়ি কুবরা, হাদিস নং-১১২৪৩)