ভোট আসছে। চারদিকে এখন নির্বাচনী হাওয়া। এখানে-ওখানে, যেখানে সেখানে, সবখানে এখন একটিই আলোচনার বিষয়- নির্বাচন। ভোট। কে জিতবে। কে হারবে। সবাই এখন এ হিসেব কষছে।
ভোটের মাঠে লড়াইয়ের জন্য রাজনৈতিক দল থেক দেয়া হবে নির্বাচনী ইশতেহার। কেমন হবে নির্বাচনী ইশতেহার? ধর্মদরদী মানুষদের প্রত্যাশা এবং চাহিদার কথা ওঠে এসেছে তিন আলেমদের মুখে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আল ফাতাহ মামুন
মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ
খতিব, ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ
নির্বাচনী ইশতেহার সম্পর্কে আমি তিনটি কথা বলব। প্রথমত, আমাদের এই দেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ। পাশাপাশি এটি একটি অসাম্প্রদায়িক দেশও বটে। এখানের মানুষের মনে ধর্মভিরুতা খুব বেশি।
তাই ইশতেহারে যেনো মদিনার সনদের আলোকে দেশ পরিচালনার কথা থাকে। তাহলে আশা করা যায়, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ একটি সুখী-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে।
দ্বিতীয়ত যে কথাটি আমি বলব তা হল- স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তিও ভিন্ন নামে ভিন্ন দল থেকে নির্বাচন করছে। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীর কথা বলতে হয়। শোনা যায়, তারা বিএনপির ঘাড়ে সওয়ার হয়ে নির্বাচন করছে। বিষয়টি বড় দুঃখজন।
নির্বাচনী ইশতেহারে এ কথা অবশ্যই থাকতে হবে, স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি কোনোভাবেই যেনো নির্বাচন করতে না পারে। তাদের সম্পূর্ণরুপে বয়কট-বর্জন করতে হবে।
তৃতীয় এবং সর্বশেষ কথা হল, সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ-মাদক দেশের জন্য বড় সমস্যা। এ সমস্যা মোকাবেলার ওয়াদা নির্বাচনী ইশতেহারে থাকা চাই। একজন আলেম হিসেবে আমার কাছে নির্বাচনী ইশতেহারে এ বিষয়গুলোই গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়।
মাওলানা মামুনুল হক
সিনিয়র মুহাদ্দিস, জামিয়া রাহমানিয়া ঢাকা
আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে ধর্মপ্রাণ এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের ধর্মীয় আবেগ অনুভূতির সংরক্ষণকে অন্যতম হিসেবে দেখতে চাই।
বিশেষ ভাবে আমাদের চহিদা থাকবে, বাংলাদের সংবিধানে ‘আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাসের’ যে ধারাটি ছিল। যা সংশোধনির মাধ্যমে বাতিল করা হয়েছে তা পূনর্বহালের প্রতিশ্রুতি আমরা চাইব।
এছাড়া আমাদের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি, যে দাবি নিয়ে ২০১৩ সালের হেফাজতের আন্দোলন, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সা. ইসলামকে অবমানার শাস্তি মৃতুদন্ডের আইন পাশ করার প্রতিশ্রুতি ইশতেহার আমরা চাই।
প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্য কুরআনি শিক্ষা দেয়ার প্রতিশ্রুতিও চাই দলগুলোর ইশতেহারে। জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় যে বড় ধরনের শূন্যতা রয়েছে তার মাধ্যমে সে শূন্যতা পূরণ হবে। এবং শিক্ষার মধ্যে ভারসাম্য আসবে।
ইশতেহারে বিশেষভাবে চাইবো নারীবান্ধব সমাজ। আমাদের সরকার নারীর কর্মসংস্থান, শিক্ষা, তাদের অধিকার নিয়ে যতটা কার্যকরি ভূমিকা পালন করেছে তারচেয়ে বেশি দরকার নারীর ইজ্জত, আব্রু, সম্ভ্রম রক্ষার, নিরাপত্তা প্রতি নজর দেয়া।
আমাদের শ্রমজীবি নারী যারা তারা পদে পদে নির্যাতন ও হয়রানির স্বীকার হচ্ছে, তাই তাদের নিরাপদ এবং ভিন্ন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার প্রতিশ্রুতি চাইব।
রোহিঙ্গাদের বিষয়ে মায়ানমারকে আর্ন্তজাতিক চাপ এবং তাদের পূর্ণবাসন এবং তারা যেন তাদের মাতৃভূমিতে শান্তিতে বসবাস এবং সেখানে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে সেজন্য কূটনৈতিক ভূমিকা নিতে হবে।
সেসব রোহিঙ্গা আমাদের দেশে উদ্বাস্তু হিসেবে আছে তাদের জান-মাল, শিক্ষা-দীক্ষা, তাদের ধর্মীয় চেতনা এবং ইসলামি শিক্ষা নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। তাদের স্বদেশে ফিরিয়ে দিতে যত ধরনের সহযোগিতা দরকার তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।
বর্তমান সরকার কওমি মাদরাসাকে স্বীকৃতি দিয়েছে তা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। মসজিদ মাদরাসাগুলোতে ব্যাপকভাবে সরকারি অনুদান এবং সুযোগ সুবিধা দিতে হবে।
মসজিদের বিদুৎ বিল মওকুফ করার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। এবং মসজিদের ইমাম, মুয়জ্জিনদের সরকারিভাবে বেতনভাতা প্রদানের প্রতিশ্রুতি আশা করব।
অধ্যাপক আবুল কাশেম গাজী
প্রধান মুফাসসির, তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা
বাংলাদেশের মানুষ ধর্মদরদী মানুষ। রাজনৈতিক দলগুলোকে অবশ্যই ধর্মকে প্রাধান্য দিয়েই তাদের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করতে হবে। হালাল-হারামের মত সুস্পষ্ট বিষয়গুলো যেনো রাষ্ট্রীয় সহযোগিতায় মানুষ সম্পন্ন করতে পারে সে কথা থাকা জরুরি। মাদক-সন্ত্রাস-দুর্নীতি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে হবে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হল, অতীতে আমরা দেখেছি, রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনী ইশতেহারে দেয়া ওয়াদাগুলো যথাযথভাবে রক্ষা করে না। ইশতেহারে খুব সুন্দর সুন্দর কথা থাকে। থাকে মনভোলানো বাণীও।
কিন্তু বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দেখা যায় কিছুই হয়নি। এ ট্রাডিশন থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে বেরিয়ে আসা জরুরি। মনে রাখা দরকার, হাদিস শরিফে রাসুল সা. খুব স্পষ্ট করে বলেছেন, ওয়াদা দিয়ে ওয়াদা রক্ষা না করা এবং কথায় কথায় মিথ্যা বলা মোনাফিকের বড় তিনটি আলামতের অন্তর্ভুক্ত।
‘স্কুলের ধর্মশিক্ষা আরো উন্নত করতে হবে’
আরআর